Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
David (Michelangelo)

স্বত্ব কার, প্রশ্ন ‘ডেভিড’ ঘিরে

ষোড়শ শতকে নির্মিত এই মূর্তি রয়েছে ফ্লোরেন্সের ‘দ্য গালেরিয়া দেল আকাদেমিয়া’য়। ২০১৫তে এই সংগ্রহশালার ডিরেক্টর হন সিসিল হোলবার্গ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ডেভিডের ‘শালীনতা রক্ষায়’ তৎপর হয়েছেন তিনি।

আকাদেমিয়ায় ‘ডেভিড’।

আকাদেমিয়ায় ‘ডেভিড’। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৬:০৬
Share: Save:

ইউরোপীয় শিল্পকর্মের অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ মিকেলেঞ্জেলোর ‘ডেভিড’। কিন্তু বিতর্ক কখনও পিছু ছাড়েনি ১৭ ফুট লম্বা এই মর্মর মূর্তির। যে সংগ্রহশালায় মূর্তিটি রয়েছে, সেই ‘আকাদেমিয়া’র ডিরেক্টরের ‘মর্যাদা রক্ষা’র লড়াই নতুন করে বেশ কিছু প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে। বাক্‌স্বাধীনতার প্রশ্ন। শালীনতার প্রশ্ন।

ষোড়শ শতকে নির্মিত এই মূর্তি রয়েছে ফ্লোরেন্সের ‘দ্য গালেরিয়া দেল আকাদেমিয়া’য়। ২০১৫তে এই সংগ্রহশালার ডিরেক্টর হন সিসিল হোলবার্গ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ডেভিডের ‘শালীনতা রক্ষায়’ তৎপর হয়েছেন তিনি। ডেভিডের ছবি ব্যবহার করে যারা ব্যবসা করছে, সেই সব ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ঠুকেছেন সিসিল। এবং সাফল্যও পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক শিল্পস্বত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও শিল্পীর মৃত্যুর ৭০ বছর পরে তাঁর শিল্পকর্মের উপরে আর কারও স্বত্ব থাকে না। মিকেলেঞ্জেলোর মৃত্যু হয়েছিল ১৫৬৪ সালে। ফলে তাঁর আঁকা ছবি বা নির্মিত মূর্তির কোনও স্বত্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু আরও কয়েকটি দেশের মতো ইটালিরও নিজস্ব শিল্পস্বত্ব আইন রয়েছে। সেই আইন মোতাবেক, এমন ভাবে কোনও শিল্পকর্মের প্রতিরূপ তৈরি করা যাবে না, যাতে সেই শিল্পকর্মের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় বা শালীনতা নষ্ট হয়। শিল্পকর্মটি যে সংগ্রহশালা বা মিউজ়িয়ামে রয়েছে, তারাই সেটির ‘নৈতিক স্বত্বাধিকারী’। ইটালির মতো নিজস্ব শিল্প স্বত্ব আইন রয়েছে গ্রিস এবং ভ্যাটিকান সিটিরও।

ইটালির এই আইনকে কাজে লাগিয়ে, সিসিল হোলবার্গের অনুরোধে, একগুচ্ছ মামলা করেন সরকারি কৌঁসুলি। আকাদেমিয়ায় প্রবেশের জন্য টিকিট বিক্রেতা একটি সংস্থা, ডেভিডের ছবি দিয়ে টি-শার্ট ছাপায় এমন একটি সংস্থা, এমনকি চাবির রিং বা ফ্রিজ ম্যাগনেট নির্মাণকারী বেশ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ, তারা ডেভিডের ছবির অংশবিশেষ যে ভাবে ব্যবহার করেছে, তাতে শিল্পকর্মটির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলির যুক্তি ছিল, এই সব ব্যবসায়ী শুধু ডেভিডের যৌনাঙ্গের ছবি ব্যবহার করেছেন। যা থেকে তাঁদের অসৎ উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। সিসিলের মতে, এই ধরনের ‘অপব্যবহার’ ডেভিডের মতো শিল্পকর্মের মানহানি করে। পুরো মূর্তিটি দেখলে যে শিল্পসুষমা আমাদের আপ্লুত করে, তার এ ধরনের খণ্ডিত ছবি আমাদের শিল্পবোধে ততটাই আঘাত করে। সিসিল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুধু ডেভিড নয়, রেনেসাঁস পর্বের বহু নগ্ন ছবি বা মূর্তিরই এ ভাবে অপব্যবহার করা হয়। তালিকায় রয়েছে পঞ্চদশ শতকের ইটালীয় শিল্পী সান্দ্রো বোতিচেলির আঁকা ‘দ্য বার্থ অব ভিনাস’ বা তাঁরই সমসাময়িক প্রবাদপ্রতিম লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চির স্কেচ ‘ভিট্রুভিয়ান ম্যান’। ‘দ্য বার্থ অব ভিনাস’ রয়েছে ফ্লোরেন্সেরই অন্য আর একটি শিল্প সংগ্রহশালা উফিৎজ়ি গ্যালারিতে। ‘ভিট্রুভিয়ান ম্যান’ রয়েছে ‘আকাদেমিয়া’তেই। জার্মানির একটি সংস্থা লিয়োনার্দোর এই ছবি ব্যবহার করে পাজ়ল তৈরি করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠোকে ইটালি। জিতেও যায়। এই ধরনের বেশ কয়েকটি মামলায় হাজার হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ‘আকাদেমিয়া’। সিসিলের কথায়, ‘‘পরপর বেশ কয়েকটি মামলায় জয়ের পরে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অভিনন্দনবার্তা পাচ্ছি আমরা। অনেকেই আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন, এই সাফল্য আমরা কী করে পেলাম। বিভিন্ন মিউজ়িয়াম থেকে আমাদের কাছে পরামর্শও চাওয়া হচ্ছে।’’

সিসিলের এই আইনি সাফল্যের পিছনে অবশ্যই রয়েছে ইটালির আইন। যে দেশে এ ধরনের কোনও আইন নেই, সেখানে কোনও মিউজ়িয়ামের পক্ষে এ ধরনের পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়। যেমন ফ্রান্স। প্যারিসে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প সংগ্রহশালা ‘দ্য ল্যুভ্‌র’। লিয়োনার্দোর ‘মোনা লিসা’-সহ সারা বিশ্বের ৩৮ হাজার শিল্পসামগ্রী রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। বেশির ভাগ সামগ্রীই উনিশ শতক বা তার আগের। যে হেতু ফ্রান্সের নিজস্ব কোনও শিল্পস্বত্ব আইন নেই, তাই যে কেউ চাইলেই যে কোনও ভাবে এই সব শিল্পসামগ্রীর প্রতিরূপ তৈরি করতে পারেন।

তবে ‘আকাদেমিয়া’র এই আইনি জয়ে চিন্তিত এক দল শিল্প সমালোচক ও শিল্প সংগ্রাহক। নিউ ইয়র্কের শিল্পবিশারদ টমাস সি ডানজ়াইগারের কথায়, ‘‘লিয়োনার্দোর ‘লাস্ট সাপার’-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করেছিলেন আমেরিকান শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহল। কী ভাবে কোনও শিল্পকর্মের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, তা কে ঠিক করবেন?’’

আইনি বলয়ে সুরক্ষিত ডেভিডের পিছু ছাড়ছে না এই সব প্রশ্ন।

অন্য বিষয়গুলি:

Statue Renaissance Sculpture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE