Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
US Presidential Election

শেষ পর্যন্ত কি ইতিহাস গড়তে পারব

এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নানাবিধ কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিক, কারণ বাইডেন জিতলে তিনিই হবেন দেশের প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

গায়ত্রী পাল কুপারটিনো (ক্যালিফর্নিয়া)
কুপারটিনো (ক্যালিফর্নিয়া) শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:১১
Share: Save:

আর দিন কয়েকের অপেক্ষা। আসছে ভোট। অবশ্য কিছু প্রদেশে জোরকদমে চলছে আগাম ভোটদান। ৭ কোটিরও বেশি ভোট ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে। ৩ নভেম্বরের ভোট শেষ হলেই শুরু হবে চূড়ান্ত ভোটগণনা। জানা যাবে মানুষের রায়। এ বারও কি ডোনাল্ড ট্রাম্প, নাকি জো বাইডেনই যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে!

এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নানাবিধ কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিক, কারণ বাইডেন জিতলে তিনিই হবেন দেশের প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট। তাঁর সঙ্গী কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হলে, সেটাও হবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু দেশের প্রথম মহিলা বলে নয়, কমলার ভারতীয় পরিচয় তথা শ্বেতাঙ্গ না-হওয়াটাও উল্লেখযোগ্য বিষয়।

আর যদি ট্রাম্পই জিতে যান! তা হলে তিনিই হবেন ইমপিচমেন্টের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি জনপ্রিয়তার নিরিখে অনেকখানি পিছিয়ে থেকেও পুনর্নির্বাচিত হলেন।

কেন এই ভোট গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝে নিতে বরং বর্তমান পরিস্থিতিটা এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক। ২০১৬-য় পপুলার ভোটে হেরেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ট্রাম্প। তার পরের এই চার বছরে মানুষ দেখেছেন, কী ভাবে প্রেসিডেন্ট লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন নাগরিক অধিকার, জনকল্যাণ এবং গণতন্ত্রের উপরে। এখানেই শেষ নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে পরিবেশ রক্ষা, এমনকি চলতি অতিমারির আবহেও কী ভাবে বিজ্ঞানের উপরে চরম আক্রমণ শানাতে হয়, তা-ও দেখিয়েছেন ট্রাম্প।

বিশ্বের অন্ততম ধনী দেশ আমেরিকায় করোনায় ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন ২ লক্ষ ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। ১ কোটি আক্রান্ত হওয়াটা যেন সময়ের অপেক্ষা। আগাগোড়া অদক্ষতা আর ঔদাসীন্যে যে ভাবে এই অতিমারির ‘মোকাবিলা’ হয়েছে, তাতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হলে, সবাই মাস্ক পরলে, গোড়া থেকেই র‌্যাপিড টেস্টের বন্দোবস্ত হলে এবং সর্বোপরি সুযোগ্য নেতৃত্ব থাকলে এই মৃত্যুর অন্তত ৯০ শতাংশ এড়ানো যেত!

বাড়তে থাকা বেকারত্ব, অমিল স্বাস্থ্য পরিষেবা এই ক’মাসে সমাজের দরিদ্র অংশটাকে যেন আরও জীর্ণ করে ফেলেছে। ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর আমলেই সেরা অর্থনীতির মুখ দেখেছে আমেরিকা! কিন্তু তথ্যই বলছে, প্রাক্-করোনা সময়ে আমেরিকার জিডিপি ওবামা আমলের মতোই— গড়পড়তা ২.৫ শতাংশ। ট্রাম্প এ-ও দাবি করেন, অতিমারির আগে পর্যন্ত তাঁর আমলেই দেশের বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন। কিন্তু ওবামা আমল থেকেই যে এই হার কমছিল, সেটা ভুলেও উল্লেখ করেন না তিনি। তাঁর আমলে কৃষ্ণাঙ্গ-উন্নয়ন নিয়ে ট্রাম্পের দাবির ভিত্তি হল— এঁদের কর্মসংস্থান বেড়েছে। কিন্তু সে তো অতিমারির আগে, কার্যত বেশ কয়েক দশক ধরে একই রকম! করোনায় আবার এরাই অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে চাকরি খুইয়েছেন।

পাশাপাশি, এই চার বছরে ট্রাম্প একটা সাংস্কৃতিক যুদ্ধও চালিয়ে গিয়েছেন। নিজের সমর্থন-ভিত্তি ধরে রাখতে মন্ত্র দিয়েছেন ‘আমেরিকা বনাম ওরা’। অভিবাসন থেকে শুরু করে গর্ভপাতের অধিকার, আগ্নেয়াস্ত্র আইন ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ে বিতর্কিত প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন অতি কট্টর একটা শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীকে। ভোটের ফল নিজের মনের মতো না-হলে ট্রাম্প এ বার এদেরই অস্ত্র করতে পারেন।

বিপদ আঁচ করেই মেল-ইন ব্যালট কেলেঙ্কারি নিয়ে তোপ দাগতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। এতে নাকি ব্যাপক কারচুপি হবে। অথচ নেচার পত্রিকায় এ সপ্তাহে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এতে ভোটদানের হার আরও বাড়তে পারে। ইতিমধ্যেই অনেকে বাইডেনের সমর্থনে কথা বলছেন। সেটাই আশার আলো। তবে চূড়ান্ত ফল না-দেখে কিছুই বলা যাবে না। ২০১৬-য় তো উলটপুরাণই হয়েছিল!

ইলেক্টোরাল ভোট-পদ্ধতি কী?


• এক জন প্রার্থী যে প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট
নিজের দিকে টানতে পারবেন, সেই রাজ্যের সব ক’টি ভোট তাঁর হয়ে যাবে।


• যেমন, ক্যালিফর্নিয়ায় ৫৫ জন ইলেক্টর রয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন, যিনি এই প্রদেশে বেশি ভোট পাবেন, তিনি-ই ক্যালিফর্নিয়ার সব ইলেক্টরকে জিতে নেবেন।


• ১৪ ডিসেম্বর ইলেক্টরেরা প্রাদেশিক রাজধানীতে জড়ো হয়ে দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তবে এই পর্যায়টি নেহাতই আনুষ্ঠানিক। কারণ তার আগেই জানা যাবে, কোন প্রদেশ গিয়েছে কোন দলের কাছে।


• এই ভাবে কোনও প্রার্থী কমপক্ষে ৫৩৮-এর
মধ্যে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট জোগাড় করলেই জয়ী হবেন।

এই ভোট পদ্ধতির খামতি কোথায়


• অনেক সময়ে গোটা দেশের জনমত (পপুলার ভোট) আর ইলেক্টর সংখ্যায় ফারাক থেকে যায়। যেমন হয়েছিল গত বারের নির্বাচনেই।


• ২০১৬-তে ট্রাম্প যত ভোট পেয়েছিলেন, তার থেকে অন্তত ৩০ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিন্টন।


• একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ২০০০ সালে। সে বার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যাল গোর পেয়েছিলেন ৪৮.৩৮ শতাংশ ভোট, আর রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশ ৪৭.৮৭ শতাংশ ভোট। ইলেক্টোরাল ভোটে কিন্তু জিতে যান বুশ।

অন্য বিষয়গুলি:

US Presidential Election Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy