Advertisement
E-Paper

রাজতন্ত্র এবং হিন্দুরাষ্ট্রের দাবি ঘিরে অগ্নিগর্ভ নেপাল! হিংসা এবং খুনে জড়িত অভিযোগে ধৃত শতাধিক, টহল সেনার

নেপালে যখন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেই সময়ে দেশটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবেই পরিচিত ছিল। জ্ঞানেন্দ্রকে সরিয়ে নতুন সংবিধান কার্যকরের সময় নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করা হয়।

Pro-monarchy protest turns violent in Nepal

নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:০৪
Share
Save

রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন ঘিরে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল নেপাল। শনিবার রাজধানী কাঠমান্ডু-সহ সংলগ্ন এলাকায় রাজা জ্ঞানেন্দ্রের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দু’জনের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার জেরে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাঠমান্ডু-সহ বিভিন্ন শহরে কার্ফু ও সেনা টহল চলছে শনিবারও।

পুলিশের অভিযোগ, শুক্রবার প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনকারীরা একাধিক সরকারি ভবন ভাঙচুরের পাশাপাশি যানবাহন, বিভিন্ন শপিং মল ও দোকানে অগ্নিসংযোগও করে। তাঁদের অনেকেই সশস্ত্র ছিলেন। নতুন সংবিধান কার্যকরের সময় লুপ্ত হয়ে যাওয়া রাজতন্ত্র এবং ‘রাজধর্ম’ ফেরানোর দাবি তোলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং বিরোধী দলনেতা প্রচণ্ডের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক ভিডিয়োবার্তায় দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য নেপালবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। তার পরেই তাঁর প্রতি অভূতপূর্ব সমর্থনের ঢল নেমেছে। রাজতন্ত্রের সমর্থক রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির পাশাপাশি গণতন্ত্রপন্থী নেপালি কংগ্রেসের সমর্থকদের একাংশও ‘প্রতীকী রাজতন্ত্রের’ প্রত্যাবর্তন চাইছেন। এই আবহে শুক্রবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা মাওবাদী নেতা প্রচণ্ড (পুষ্পকমল দহাল) পাল্টা রাজতন্ত্র বিরোধী সভা করে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই অশান্তি ছড়ায় বলে অভিযোগ।

নেপালে নতুন করে অশান্তির শুরু চলতি মাসের গোড়ায়। নেপালের পশ্চিমাঞ্চল সফর শেষ করে জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর পরে। তাঁকে স্বাগত জানাতে সে দিন হাজির ছিলেন বিপুলসংখ্যক সাধারণ নাগরিক। সেখানে স্লোগান ওঠে ‘আমরা আবার রাজতন্ত্র চাই’। জ্ঞানেন্দ্রকে আবার রাজপ্রাসাদে বসবাস করতে দেওয়ার দাবিও ওঠে। সেই সঙ্গে দাবি তোলা হয় নেপালকে আবার ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ ঘোষণার। সে দিনই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের একপ্রস্ত বাগ‌্‌বিতণ্ডা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, প্রায় দু’দশক আগে ভারতের উত্তরের পড়শি দেশ নেপালে প্রচলিত ছিল রাজতন্ত্র। শেষ রাজা ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। ২০০৬ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পরে ২০০৮ সালের মে মাসে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্র ভেঙে নেপালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ২০১৫ সালে অনুমোদিত হয় নতুন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জ্ঞানেন্দ্র নেপালের সাধারণ নাগরিক হিসাবে বাস করেন। তাঁর কোনও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। অনুমতি নেই রাজপ্রাসাদে যাওয়ার। এমনকি, সরকারি কোনও সুবিধাও তিনি পান না।

নেপালে যখন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেই সময় দেশটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবেই পরিচিত ছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে ঘোষণা করা হয়। পরে দেশের সংবিধানেও সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ১৭৬৮ সালে সেখানে শাহ রাজবংশের সূচনা হয়েছিল। জ্ঞানেন্দ্রের দাদা রাজা বীরেন্দ্র ছিলেন পৃথ্বীনারায়ণের নবম প্রজন্ম। তাঁকে হত্যা করে যুবরাজ দীপেন্দ্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মৃত্যুশয্যাতেই তাঁর অভিষেক হয়। দীপেন্দ্র বাঁচেননি। ২০০১-এর জুন মাসের সেই হত্যাকাণ্ডের পর জ্ঞানেন্দ্র সিংহাসনে বসেছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় ২০০৫ সালের গোড়ায় নেপালে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। তার পরে দ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার গণবিক্ষোভ রাস্তায় নেমে এসেছে তাঁকে ‘সিংহাসনে’ ফেরানোর দাবিতে।

Nepal Unrest Nepal Nepal Monarchy King Gyanendra Shah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}