দোঁহে: বিয়ের পরে সেন্ট জর্জ’স চ্যাপেলের বাইরে ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি ও মেগান মার্কলের রাজকীয় চুমু। ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স হলেন তাঁরা। ছবি: রয়টার্স
সত্যি হল রূপকথার বিয়ে। শনিবার ভারতীয় সময় তখন বিকেল ৫টা। লন্ডনের সেন্ট জর্জ’স চ্যাপেলে তেত্রিশ বছরের রাজকুমার হ্যারি এবং ছত্রিশের মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কলের চার হাত এক হল। ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্স বলে ঘোষণা করা হল হ্যারি-মেগানকে।
লন্ডনের উইনসরে সেই ছকভাঙা রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী রইলেন ৬০০ অতিথি আর ১২০০ সাধারণ নিমন্ত্রিত। এই প্রথম রাজপরিবারের কোনও বিয়ের অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার সুযোগ পেলেন সাধারণ মানুষ। তবে চ্যাপেলের মূল সভাঘরে প্রবেশের অনুমতি ছিল না তাঁদের।
রাজপরিবারের আর পাঁচটা বিয়ে থেকে অনেকটাই ব্যাতিক্রমী মেগান-হ্যারি জুটি। ব্রিটেনের রাজপরিবারে এই প্রথম কোনও অশ্বেতাঙ্গ মহিলা বধূ হয়ে এলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানেও তাঁরা বজায় রাখলেন সেই স্বাতন্ত্র্য।
এ দিন সেন্ট জর্জ’স গির্জার সামনে যখন কালো কাচে ঢাকা মেগানের গাড়ি এসে দাঁড়াল, তখন লন্ডনের আকাশে সোনালি আলো ঝলমল করছে। দুধসাদা বোটনেক গাউন আর মাটিতে লুটানো ওড়নার আঁচল গুছিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলেন কনে। নিজেই এগিয়ে গেলেন গির্জার মূল মঞ্চের দিকে। সঙ্গী শুধু খুদে চার পেজ বয় আর ছ’জন ব্রাইডসমেড। নিয়ম অনুযায়ী, এই পথটুকু কনে একা হাঁটেন না। সঙ্গে থাকেন অভিভাবক স্থানীয় কেউ। কিন্তু বাবা না আসায় একাই হাঁটতে শুরু করেছিলেন মেগান। খানিক পরে যুবরাজ চার্লস এগিয়ে এসে হাত ধরলেন তাঁর।
কানে হিরের দুল আর রাজপরিবারের দেওয়া হিরেখচিত মুকুটে সেজেছিলেন মেগান। তাঁর ইচ্ছে ছিল, কমনওয়েলথের ৫৩টি দেশকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে শামিল করা। মেগানের পোশাক পরিকল্পনায় সেই ইচ্ছেই বাস্তবায়িত করেছেন ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার রাইট কেলার। পাঁচ মিটার লম্বা, কনের মাথা ঢাকা ওড়নায় ছিল এই দেশগুলির ৫৩টি ফুলের নকশা। ভারতের প্রতীক হিসেবে ছিল পদ্ম। হ্যারি পরেছিলেন কালো ফ্রককোট। একই পোশাকে সেজেছিলেন দাদা উইলিয়ামও।
বিয়ের অনুষ্ঠানে সবুজ পোশাকে সেজে এসেছিলেন রানি। টুপিতে বেগুনি ফুল। যুবরানি ক্যামিলা পার্কার এবং কেট মিডলটন ছিলেন সভার প্রথম সারিতেই। মেগানের পরিবারের তরফে অবশ্য ছিলেন শুধু মা ডোরিয়া রাগল্যান্ড। রাজবাড়ির নিয়ম মেনে মহিলারা সকলেই পরেছিলেন রাজকীয় টুপি।
অতিথি তালিকাতেও ছিল চমক। ছিলেন এলটন জন, ওপরা উইনফ্রে, জর্জ ও আমাল ক্লুনি, সেরেনা উইলিয়াম, সস্ত্রীক ডেভিড বেকহ্যাম, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো তারকারা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে অবশ্য নিমন্ত্রিত ছিলেন না। উপহার নয়, তাঁদের জন্য শুভেচ্ছাই কাম্য বলে জানিয়েছিলেন হ্যারি-মেগান। পরিবর্তে ওই অর্থ তাঁরা বিভিন্ন জনসেবামূলক সংগঠনে দান করতে অনুরোধ করেছিলেন।
রাজকীয় বিয়েতে পৌরোহিত্যের মূল দায়িত্বে ছিলেন ক্যান্টরবেরির আর্চবিশপ। তবে নজর কেড়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ রেভারেন্ড মিশেল কারি। ভালবাসা নিয়ে মার্কিন এই যাজকের আবেগঘন বক্তৃতায় রীতিমতো বিস্মিত দেখাচ্ছিল অতিথিদের। আবেগের আতিশয্যে অবশ্য খানিকটা অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল রানি আর যুবরাজ চার্লসকে। মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে সুখে-দুঃখে আমৃত্যু পাশে থাকার শপথ নিলেন হ্যারি-মেগান। স্ত্রী-র হাতে বহুমূল্য ওয়েলস সোনায় তৈরি আংটি পরিয়ে দিলেন হ্যারি। আর নিজেও প্রথা ভেঙে পরলেন প্ল্যাটিনামের ওয়েডিং রিং। রাজপরিবারের বিয়েতে পুরুষদের আংটি পরার চল নেই। আজ বিয়ের শপথ নেওয়ার সময়ে মন্ত্রমালা থেকে ‘ওবে হার হাজব্যান্ড’ শব্দবন্ধটি বাদ দিয়েছিলেন মেগান। ভালবাসার বিয়েতে ‘মান্যতা’র প্রতিশ্রুতি পর্বটি বাদ দিয়েছিলেন কেট আর ডায়ানাও। বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ গায়কেরা। চেলোয় সুর তুলেছেন কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী শেকু কানে মেসন।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে উইনসর প্রদক্ষিণে বেরোলেন নবদম্পতি। রাস্তার দু’ধারে তখন উৎসাহী জনতার ভিড়। হাতে ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা আর ক্যামেরার ঝলকানি। অক্লান্ত হাসিতে অভিবাদন ফিরিয়ে দিয়েছেন হ্যারি-মেগানও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy