দেহাবশেষ: বিশোফটু শহরের কাছে এখানেই ভেঙে পড়েছে বিমান। চলছে দেহ উদ্ধার। এএফপি
দু’ঘণ্টা দশ মিনিটের যাত্রা শেষ হয়ে গেল মাত্র ছ’মিনিটের মাথায়। আজ সকালে ইথিয়োপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ল ইথিয়োপিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রিবাহী বিমান। বোয়িং ৭৩৭। উড়ান সংস্থার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই দুর্ঘটনায় বিমানের ১৫৭ জন আরোহীর কেউই সম্ভবত বেঁচে নেই। উড়ান সংস্থার সিইও জানিয়েছেন, বিমানে মোট ৩৩টি দেশের যাত্রী ছিলেন। যাঁদের মধ্যে চার জন ভারতের। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইটে জানিয়েছেন, চার জনের পরিচয় মিলেছে। তাঁদের এক জন শিখা গর্গ ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের উপদেষ্টা। ইউএনইপি-র বৈঠকে যোগ দিতে তিনি নাইরোবি যাচ্ছিলেন। সুষমা জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারকে সব রকম সাহায্য করার জন্য ইথিয়োপিয়ার দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটে আদ্দিস আবাবার বোল আন্তর্জাতিক বিমান থেকে উড়েছিল উড়ান ইটি-৩০২। বোয়িং ৭৩৭- ৮ ম্যাক্স মডেলের এই বিমানটিতে ১৪৯ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানকর্মীর সংখ্যা ছিল ৮। আদ্দিস আবাবার মাটি ছাড়ার ছ’মিনিট পরে অর্থাৎ ৮টা বেজে ৪৪ মিনিট নাগাদ বিমানের সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, রাজধানী থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বিশোফটু শহরের কাছে ভেঙে পড়েছে বিমানটি। প্রথমে জীবিত যাত্রীদের খোঁজে উদ্ধারকাজ শুরু হলেও কয়েক ঘণ্টা পরে সরকারি সম্প্রচার বিভাগ জানিয়ে দেয়, কোনও যাত্রীরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।
ইথিয়োপিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিবহণ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার বলছেন। তাঁর বক্তব্য, উন্নত বিমান পরিষেবা দিতে হলে দেশকে মুক্ত অর্থনীতির পথে হাঁটতে হবে। গোটা আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী বহন করে ইথিয়োপিয়ান এয়ারলাইন্স। তবে কী কারণে আজকের দুর্ঘটনা তা স্পষ্ট নয়। বিমান ভেঙে পড়ার পিছনে নাশকতার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি ইথিয়োপীয় সরকার। ২০১০ সালে এই এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বেইরুট থেকে ওড়ার পরেই ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ৯০ জন যাত্রীর। তার পর থেকে আর এত বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি ওই সংস্থার কোনও উড়ান। তবে বোয়িং বিমানটির যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি ছিল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। উড়ান সংস্থা জানিয়েছে, গত নভেম্বরে বিমানটি কেনা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কী ভাবে সেটি ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকারের পরিবহণ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওড়ার পরেই উল্লম্ব ভাবে বিমানটির গতি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। তার পর পরই চালক যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে বোল বিমানবন্দরে ফিরে আসার বার্তা দেন। কিন্তু তার পরে বিমানচালকের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এটিসি-র। মনে করা হচ্ছে, এর ঠিক পরের মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে বিমানটি। বোয়িংয়ের এই মডেলের অন্য একটি বিমান অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ায় দুঘর্টনার কবলে পড়ে। লায়ন এয়ারের সেই বিমান ভেঙে পড়েছিল জাভা সাগরে। মৃত্যু হয়েছিল ১৮৯ জন যাত্রী।
আরও পড়ুন: ২ মিনিটের দেরিই বাঁচিয়ে দিল ইথিয়োপিয়ার ভেঙে পড়া বিমানের এই যাত্রীকে
আরও পড়ুন: সরকারি আবাসে গরু পুষে স্কুলে দুধ পাঠান শিক্ষামন্ত্রী
ইটি-৩০২-র আজ নাইরোবির মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল সকাল সওয়া দশটা নাগাদ। কিন্তু বহু ক্ষণ ধরে নাইরোবির জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডিসপ্লে বোর্ডে ইটি-৩০২-এর জায়গায় ‘বিলম্বিত’ লিখে রাখা হয়। যাত্রীদের পরিবারের অভিযোগ, উড়ান সংস্থা তাঁদের দুর্ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানায়নি প্রথমে। নাইরোবি বিমানবন্দরে মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওয়েন্ডি ওটিয়েনো। হাতের ফোনটা আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘মায়ের জন্য অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আমরা। শুধু ভাবছি, মা যেন ওই বিমানে না ওঠে। কিন্তু মা ফোন ধরছে না কিছুতেই।’’ ভগ্নীপতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৪৬ বছরের রবার্ট মুটান্ডা। কানাডা থেকে নাইরোবি আসার কথা ছিল তাঁর। দুপুর একটা নাগাদ ক্ষোভে ফেটে পড়েন রবার্ট। বললেন, ‘‘বিমান নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও কেউ আমাদের কিচ্ছু জানাচ্ছে না। পরিজনের কথা ভেবে আতঙ্কে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy