মায়ানমারের চিন রাজ্য়ে সেনাদের বিমান হামলার পরে। —নিজস্ব চিত্র।
মগের মুলুকই!
খাবার নেই, জল নেই, স্কুল-কলেজ চুরমার, স্তব্ধ ব্যাঙ্ক-ডাকঘর, চিকিৎসার সাধারণ ওষুধটুকুও নেই। অধিকাংশ মানুষের মাথার ছাদও কেড়ে নিয়েছে দেশেরই সেনাদের কামানের গোলা বা জঙ্গি বিমান থেকে ফেলা বোমা।
এ-ই এখন পরিস্থিতি পড়শি দেশ মায়ানমারের ১৪টির মধ্যে অন্তত ৯টি রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায়। গত মাসে প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাব বলছে, সাড়ে ৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ মায়ানমারে মৌলিক মানবাধিকারও নেই ১ কোটি ৮৬ লক্ষ মানুষের। খালি পেটে থাকতে হচ্ছে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ মানুষকে, যাঁদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। দেশেরই বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে মাথা গোঁজা মানুষের সংখ্যা ৩১ লক্ষ। আর ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা-সহ পড়শি দেশগুলিতে আশ্রয় নেওয়া লোকেদের ধরলে ঘরছাড়াদের মোট সংখ্যাটা প্রায় ৭০ লক্ষ।
শান রাজ্যের একটি প্রতিরোধী বাহিনীর মুখপাত্র ‘কমরেড শিন’ (ছদ্মনাম) ইন্টারনেট ফোনে বলেন, দলে দলে তরুণ-তরুণী জঙ্গলে এসে প্রতিরোধী বাহিনীগুলিতে নাম লেখাচ্ছেন। এঁদের অনেকে মেডিক্যালের ছাত্র, নার্সিং ছাত্রী। তাঁদের নিয়ে আলাদা আলাদা ব্রিগেড দিনরাত মানুষের চিকিৎসার কাজ করছে। কিন্তু সাধারণ ওষুধেরও সরবরাহ নেই, এমনকি মারকিউরোক্রোমের ভান্ডারও সামান্য। মায়ানমারের সেনাদের হাতে থাকা ৩১টি বিমান যখন তখন বোমা হামলা করছে। মাস ৪ আগে ঘুরপথে পাঠানো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ ব্যবহার করে কতগুলি অস্থায়ী ছাউনিতে হাসপাতাল খোলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে স্যালাইনের বোতল ঝোলানোর ব্যবস্থাটি ছাড়া কিছুই নেই।
শিনের অভিযোগ, হাসপাতাল ও স্কুলবাড়িকেও নিশানা করছে জুন্টা। তাঁর কথায়, “গাজ়া বা ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে অন্য দেশের সেনা। বর্মায় কিন্তু হামলাকারী নিজেদের দেশের সেনাবাহিনীই! সেখানে বিপর্যস্ত এলাকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নানা শাখা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা সরকার ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। মায়ানমার যেন এক ভুলে যাওয়া দেশ! কেউ আসে না এখানে। আসতে চাইলেও ভিসা দেয় না জুন্টা।” শিনের কথায়, সেনাদের ধ্বংস ও মানবাধিকার ভঙ্গের নজিরগুলি বিশ্বের চোখ থেকে আড়ালে রাখতেই ভিসা না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে সেনাশাসকেরা।
তবে পড়শি দেশ ভিয়েতনাম, লাওস, তাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে সাধারণ মানুষের পাঠানো কিছু সাহায্য তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিন। আজ, সোমবার থেকে চার দিন সংঘর্ষবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। যদিও সরকারি সেনারা তাতে কতটা সাড়া দেয়, তা নিয়ে সন্দিহান প্রতিরোধী বাহিনীগুলি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, সব চেয়ে বিপদে রয়েছেন পরিবারের মা ও শিশুরা। সেনাদের অভিযানে সাবালক পুরুষেরা প্রায় সকলেই জঙ্গলে গিয়ে প্রতিরোধে নেমেছেন। বাড়িতে আছে পরিবার। সেখানে ধর্ষণ, খুন, লুটপাট চালাচ্ছে সেনারা।
তবু প্রতিরোধী বাহিনীর মুখপাত্র শিন আশাবাদী। তাঁর দাবি, “জুন্টা মান্দালয় ও ইয়াঙ্গনে কার্যত ঘরবন্দি। মায়ানমারে গণতন্ত্র কায়েম কেবল সময়ের অপেক্ষা।”
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy