Advertisement
E-Paper

হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী পাত পেড়ে খান খিচুড়ি ভোগ

জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের এক ছোট্ট সুন্দর শহর এরল্যাঙ্গেন। সেই শহর এখন বুকে একরাশ প্রজাপতি নিয়ে মায়ের আগমনীর অপেক্ষা করছে। চার হাজারেরও বেশি ভারতীয় এখন এখানকার সবচেয়ে বড় প্রবাসী গোষ্ঠীর অংশ।

An image of Durga Idol

তুলির ছোঁয়া: চলছে প্রতিমা তৈরি। গত বছর এরল্যাঙ্গেনে। —ফাইল চিত্র।

অর্ক আচার্য

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১২
Share
Save

বাঙালি আর দুর্গাপুজো। এই শব্দ-যুগ্ম একে অপরের সাথে জড়িয়ে এক আশ্চর্য মায়ার সৃষ্টি করে। পৃথিবীর যে কোণেই হোক না কেন, ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে’ বাঙালির মন একটু কাঁসর ঘণ্টা, ধুপ-ধুনো, ঢাকের বাদ্যির জন্য আনচান করে। এই বিশাল নীল গোলকের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সব বাঙালির জন্য দুর্গাপুজো সব চেয়ে বড় উৎসব। বাঙালি এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশান্তরে। আর সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে দুর্গাপুজোও পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে এই বিশ্বায়নে।

জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের এক ছোট্ট সুন্দর শহর এরল্যাঙ্গেন। সেই শহর এখন বুকে একরাশ প্রজাপতি নিয়ে মায়ের আগমনীর অপেক্ষা করছে। চার হাজারেরও বেশি ভারতীয় এখন এখানকার সবচেয়ে বড় প্রবাসী গোষ্ঠীর অংশ। এখানকার এরল্যাঙ্গেনের বাঙালি দলের লক্ষ্য একটাই। শারদীয়ার দিনগুলোয় এরল্যাঙ্গেনের মাটিতে এক টুকরো কলকাতাকে নিয়ে আসা। এখানকার দুর্গাপুজো যেন বাঙালির সেই আবেগ আর উৎসর্গেরই রূপায়ণ। পুজোর ক’টা দিন এরল্যাঙ্গেন হয়ে ওঠে কলকাতা, কুমোরটুলি আর বনেদি বাড়ির পুজোর গন্ধমাখা এক রূপকথার দেশ।

প্রবাসের পুজোয় যে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আসে, এ তো সকলেরই জানাই। কিন্তু এরল্যাঙ্গেনের পুজো এ দিক থেকে ব্যতিক্রমী। এখানে প্রতি বছর নিজের হাতে দুর্গা প্রতিমা গড়েন এরল্যাঙ্গেনের বাঙালি দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শ্রী দীপঙ্কর সরকার। এ বছর বানানো হয়েছে সাবেকি এক চালার দুর্গা মূর্তি, সাড়ে সাত ফুট লম্বা ও সাড়ে ছ’ফুট চওড়া। মূর্তি বানানোর যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে জার্মানির মাটিতেই। প্রায় ৬০ জন বাঙালি সারা বছর একে অপরের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে এই অসম্ভব কঠিন প্রচেষ্টা সফল করেছেন।

প্রতি বছর, মায়ের পুজো হয় পঞ্জিকার তিথি মেনে, ষষ্ঠীর আবাহন থেকে দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত। পুরোহিত মশাইকে নিয়ে আসা হয় পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট থেকে। এই পুজোয় কোনও প্রবেশ মূল্য নেই। প্রতিদিন দু’বেলা বিনামূল্যে প্রত্যেক দর্শনার্থীকে ভোগ খাওয়ানো হয় এবং এই পুজোয় প্রত্যেকের জন্য অবারিত দ্বার। প্রতি বছর পুষ্পাঞ্জলির সময়ে ক্রমাগত বাড়তে থাকা স্থানীয় জার্মানদের সংখ্যা আর উৎসাহ ভারতীয় ও জার্মান সংস্কৃতির এক মেলবন্ধনের ছবি তুলে ধরে। গত বছর এরল্যাঙ্গেনের এই পুজোয় দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ২২০০-রও বেশি। প্রায় ১২০০ দর্শনার্থীকে পাত পেড়ে পুজোর ভোগ খাওয়ানো হয়েছিল। ভোগে ছিল খিচুড়ি, লাবড়া, আলু-ফুলকপির ডালনা, পনিরের ডালনা, চাটনি, পায়েস, ঘরে বানানো মিষ্টি ইত্যাদি

পুজোবার্ষিকী ছাড়া কি পুজো সম্পূর্ণ হয়! তাই প্রতি বছর প্রকাশিত হয় শারদীয় পত্রিকা, ‘শারদীয়া’। পুজোর পরে হয় বিজয়া সম্মিলনী। স্থানীয় ভারতীয় এবং বাঙালি দলের সদস্যদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে আনন্দের উদ্‌যাপন। প্রতি বছরের মতো এই বছরও থাকবে ঢাকের বোল, ধুনুচি নাচ, ছোটদের জন্য ‘বসে আঁকো’ প্রতিযোগিতা এবং বড়দের জন্য ‘প্রদীপ জ্বালানো’ ও ‘শাড়ি পরার’ প্রতিযোগিতা। পুজোর ক’টা দিন প্রবাসের এই বিশাল দেশের, ছোট্ট এক শহরে ঝলমল করবে এক টুকরো কল্লোলিনী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Pujo 2023 Germany

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}