বিরতি নয়, যেন প্রস্তুতি চলছিল রাতভর। আরও বড় বিক্ষোভের। দিন শুরু হতেই তাই আজ ফের রাস্তায় নামলেন প্যালেস্তাইনিরা। দিনের শেষে ইজরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গাজায় প্রাণও গেল এক বিক্ষোভকারীর।
জেরুসালেম-বিতর্কের জেরে গত কালই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছিলেন প্যালেস্তাইনের রাজনৈতিক জঙ্গি সংগঠন হামাস-এর নেতারা। কূটনীতিকরা বলছেন, আজ থেকেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। ইজরায়েলের দাবি, গাজা ভূখণ্ডে এ দিনও রকেট হেনেছে প্যালেস্তাইনি বিক্ষোভকারীরা। তার জবাব দিতে গিয়েই এ দফায় প্রথম প্রাণহানি।
প্যালেস্তাইনিরা তবু বিক্ষোভেই। তাঁদের আপত্তিটা শুধু জেরুসালেম হাতছাড়়া হওয়াই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া ‘মুসলিম-বিদ্বেষী’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও। চুপ থাকল না ইজরায়েলেও। আজ দুপুরে গাজা ও ইজরায়েলের সীমান্তে ইজরায়েলি সেনার গুলিতে এক জন প্যালেস্তাইনি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। নাম মাহমুদ আল-মাসরি (৩০)। গুরুতর জখম আরও এক জন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘ইজরায়েল-তোষণের’ অভিযোগ তুলে আরব দুনিয়া এবং ইউরোপের একাংশ প্রতিবাদ জানিয়েছিল আগেই। আজ ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভের ঝড় বইল এশিয়াতেও। বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতেও চোখে পড়ল প্ল্যাকার্ড— ‘জেরুসালেম শুধু ইজরায়েলের নয়’, ‘আমরা প্যালেস্তাইনেরই পাশে।’
মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন আজ ছিলেন প্যারিসে। তিনি জানান, এখনই তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস সরানো হচ্ছে না। প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত দু’বছর। তবু বরফ গলছে কই!
আজ, শুক্রবারের নমাজ শেষে জেরুসালেমে বড়সড় বিক্ষোভ হতে পারে, এমনটা আঁচ করে কাল রাত থেকেই শহরে বহর বাড়াতে শুরু করেছিল ইজরায়েলি সেনা। আল-আকসা মসজিদের আশপাশ তবু সকাল থেকে শান্তই ছিল। ছবিটা বদলে যায় বেলা বাড়তেই। স্থানীয় সময় তখন ১১টা ৪৫। জেরুসালেমের প্রবেশদ্বার দামাস্কাস গেটে চোখে পড়ে বিপুল জমায়েত। শান্তিপূর্ণ, অথচ তাঁদের চোখেমুখে উদ্বেগ আর উত্তেজনার ছাপ ছিল স্পষ্ট। হামাস নেতারা যে ‘ক্রোধ দিবস’-এর ডাক দিয়েছেন! তারপরেই সেনার গুলিতে প্যালেস্তাইনির মৃত্যুর খবর আসে। বিক্ষোভ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
দামাস্কাসেও ইজরায়েল বাহিনীকে লক্ষ করে পাথর ছুড়তে দেখা যায় উত্তেজিত জনতাকে। বিকেলের মধ্যে অন্তত ৩০টি বিক্ষোভের খবর আসে ইজরায়েল অধিকৃত পশ্চিম ভূখণ্ড আর গাজা থেকে। আজও সর্বত্র এলোপাথাড়ি রবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে ইজরায়েলি পুলিশ। আহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২০০ ছাড়িয়েছে।
আজই জেরুসালেম-বিতর্ক নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক রয়েছে। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তুরস্ক, রাশিয়া, ইরান-সহ অনেকেরই বক্তব্য— জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশ অমান্য করেছেন। প্যালেস্তাইন বরাবর বলে আসছে, পূর্ব জেরুসালেমই হবে স্বাধীন প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্রের রাজধানী। তাদের আশঙ্কা, গোটা জেরুসালেমটাই ইজরায়েলের নামে করে দিয়ে আমেরিকা এখন স্বাধীন প্যালেস্তাইনের সম্ভাবনাটাই নস্যাৎ করে দিতে চাইছে।
হামাস নেতারা বলছেন, ‘‘যত দিন না ট্রাম্প অনুতাপ প্রকাশ করে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তত দিন আমাদের লড়াই চলবে।’’ এ মাসের শেষেই প্যালেস্তাইন সফরে আসার কথা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের। আজই তা বয়কটের ডাক দিয়েছে প্যালেস্তাইন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy