ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সাময়িক স্থিতিশীলতা দিতে পারে এক মাত্র আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)। ফাইল ছবি।
বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার তলানিতে, মূল্যবৃদ্ধির হার গত ৪৮ বছরের সর্বোচ্চ। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সাময়িক স্থিতিশীলতা দিতে পারে এক মাত্র আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)-এর সাতশো কোটি ডলারের ঋণের প্যাকেজ। কিন্তু আইএমএফের দেওয়া সব শর্ত মানতে গেলে পাক সাধারণ নাগরিকদের ঘাড়ে চাপতে পারে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার করের বোঝা। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী অন্তত সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। এর ফলে আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের দরিদ্র সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও চরমে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ঋণের প্যাকেজ নিয়ে সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত কথাবার্তা সারতে সম্প্রতি আইএমএফের এক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল ইসলামাবাদ এসেছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সেই দলটি ফিরে যায়। কোনও প্যাকেজের ঘোষণা না করেই আইএমএফ কর্তাদের ফিরে যাওয়ায় জল্পনা শুরু হয়, তবে কি পাক সরকারকে কোনও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে না? সেই জল্পনার মধ্যেই এ বার মুখ খুলেছেন পাক অর্থমন্ত্রী ইশাক দার। তিনি জানিয়েছেন, কোন কোন শর্ত ও আর্থিক সংস্কারের নীতি মেনে চললে আইএমএফের থেকে তাঁরা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য পাবেন, তার একটি খসড়া আপাতত তৈরি হয়েছে। আগামী সোমবার আইএমএফের কর্তাদের সঙ্গে পাক সরকারের আবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠক আছে। তার পরেই সম্ভবত এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এর পরেই দার জানান, আইএমএফের শর্তাবলি মানতে গেলে এখন থেকেই মোট ১৭ হাজার কোটি টাকার কর চাপাতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, এই লক্ষ্য অসম্ভব মনে হলেও, এই শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া আপাতত তাঁদের সামনে আর কোনও উপায় নেই।
মূলধনের অভাবে গত কয়েক মাসে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানে। তার আগে গত বছরের শেষের দিকে, ভয়াবহ বন্যায় প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন দেশের কৃষকেরা। আইএমএফ ভর্তুকি তুলে দেওয়ার শর্ত চাপানোয় গত কয়েক সপ্তাহে এক লাফে জ্বালানির দামও বেড়েছে প্রচুর। এই পরিস্থিতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার টাকাই নেই পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের হাতে।
করাচি শহরের অভিজাত এলাকায় পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান ফরজ়ানা নামে এক মধ্যবয়সি মহিলা। এক বিদেশি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, শেষ কয়েক মাসে নিজের বেতনে সংসার খরচ সামলাতে পারছেন না তিনি। রুটি থেকে মাংস, রোজকার খাবারের দাম এতটাই বেড়েছে যে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে আলাদা ঋণ নিতে হচ্ছে তাঁকে। সেই টাকা কী ভাবে মেটাবেন, জানেন না ফরজ়ানা। প্রায় একই পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে দেশের সাধারণ চাষিরাও। পাক পঞ্জাব প্রদেশের খুশাব জেলার কৃষক মহম্মদ রশিদ জানালেন, বিদ্যুৎ আর জ্বালানির দাম বাড়ায় চাষের কাজ চালানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার তাঁদের ঘাড়ে বাড়তি করের বোঝা চাপালে, তাঁরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রশিদ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের অধিকাংশের হাতে খাবার জোগাড়ের টাকাই নেই। এর পরে শিক্ষা, বিদ্যুৎ বা পোশাকের পিছনে খরচের কথা তো আমরা ভাবতেই পারছি না। করের টাকা কী করে জোগাব জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy