ভবানীর পাশে মার্টিন ম্যাঙ্গলার।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে ভুল চিকিৎসার পরে রোগটা ধরা পড়েছিল। ক্রন’জ় ডিজ়িস, পরিপাকতন্ত্রের বিরল রোগ। কিন্তু যদি বা রোগ ধরা পড়ল, দেশে তার ওষুধ নেই। চিকিৎসা শুরু হয় লন্ডনে। কিন্তু ৩১ বছরের ভারতীয় তরুণী ভবানী এস্পতি যখন কোমায়, সেই অবস্থায় তাঁকে নোটিস ধরিয়ে দেয় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতর। তাতে স্পষ্ট বক্তব্য— ব্রিটেনের মতো চিকিৎসা ব্যবস্থা যে ভারতে নেই, সেটা অস্বীকার করা হচ্ছে না। কিন্তু এর জন্য ব্রিটেনে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।
টেরেসা মে-র সরকার কী ভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ভবানী। গত সপ্তাহে একটি ব্রিটিশ দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তরুণী বলেন, ‘‘ওরা আমায় যা বলছে, তার সারমর্ম করলে এই মানে হয়, দেশে ফিরে যাও এবং সেখানে গিয়ে সম্মানের সঙ্গে মরো। আমার প্রশ্ন, মরতে না চাওয়া কি খুব বেশি কিছু চাওয়া!’’
ভবানী অবশ্য একা নন এখন। অনলাইন আবেদনে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অন্তত দেড় লক্ষ মানুষ। ‘ভবানীকে বাঁচতে দিন’— এই নামে অনলাইনে ‘আন্দোলন’ শুরু হয়। তাতে ভবানীর জন্য সই করেছেন অগুনতি লোক। শুরুটা করেছিলেন ভবানীর প্রেমিক ৩৩ বছর বয়সি মার্টিন ম্যাঙ্গলার। জার্মান নাগরিক মার্টিন কর্মসূত্রে ব্রিটেনে থাকেন। ভবানী ব্রিটেনে এসেছিলেন ২০১০ সালে। পড়াশোনা করতে। গত বছর সেপ্টেম্বরে একটি অস্ত্রোপচার হয় ভবানীর। কিন্তু তাতে জটিলতা আরও বাড়ে। সম্প্রতি একটি বড়সড় অস্ত্রোপচার করতে হয় তাঁর। সে সময়ে এক সপ্তাহ কোমায় ছিলেন তরুণী। তারই মধ্যে ভারতে ফেরার নোটিস ধরায় স্বরাষ্ট্র দফতর।
ম্যাঙ্গলার আবেদনে লেখেন, ‘‘ভবানীর আরও কিছু অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্যেও তো ওঁকে বেঁচে থাকতে হবে! তা ছাড়া, ওঁর ওজন বাড়ানো দরকার। সব
সময় ড্রিপ চলছে। কোথাও যাওয়ার ক্ষমতা নেই ওঁর। চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, ভবানীকে খুব সাবধানে রাখতে হবে। চিকিৎসার জন্য ওঁর ব্রিটেনে থাকা প্রয়োজন।’’ ভবানীর কী ধরনের চিকিৎসা চলছে, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় ভারতে ফিরতে হলে যে তার জীবন বিপন্ন হবে, সে কথাও জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও গত বছর ডিসেম্বরে ভবানীর ভিসা বাড়াতে অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্র দফতর। জবাবে তারা জানিয়েছিল, ভারতে যে ব্রিটেনের মতো চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার জন্য ব্রিটেনে থাকার অনুমতি দেওয়া যাবে না। ভবানীর আক্ষেপ, ‘‘স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, এ দেশে বেঁচে থাকার থেকে ভারতে ফিরে
গিয়ে মরো।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ বছর মার্চ মাসে স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছিল, ভবানীর বিষয়টি নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও আশার আলো দেখায়নি তারা। ইতিমধ্যে গত মাসে নতুন করে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ভবানীকে ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। সর্বক্ষণ ড্রিপ চলছে। পাকস্থলীর সঙ্গে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাগ শরীরে লাগানো। আরও একটি অস্ত্রোপচার হবে। মার্টিনের আর্জি, ‘‘দয়া করে, এ রকম নিষ্ঠুর রাজনীতি বন্ধ হোক। বেঁচে থাকতে হলে ওঁর আরও চিকিৎসার প্রয়োজন।’’
অনলাইন পিটিশনে সই করার পাশাপাশি অনেকেই লিখেছেন, ‘ভয়াবহ রাজনীতি’। এক নার্স যেমন লিখেছেন, ‘‘এই অবস্থায় কোনও রকম সফর ওঁর জন্য ঠিক নয়।’’ লুইশ্যামের এমপি, লেবার পার্টির ভিকি ফক্সক্রফ্ট বিষয়টি হাউস অব কমন্সে তুলেছিলেন। বিষয়টি
নিয়ে এ বার সরাসরি স্বরাষ্ট্র দফতরকে প্রশ্ন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাউস। ভবানী যেখানে ভর্তি ছিলেন, সেই সেন্ট মার্ক হাসপাতালের এক দল চিকিৎসক লিখিত জানিয়েছেন, ‘‘ভবানীর খুব জটিল চিকিৎসা চলছে। এখন কিংবা এ বছর পরবর্তী অস্ত্রোপচারের পরেও, ওঁর
কোনও রকম সফর বিপজ্জনক। ওঁর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য আরও অনেক চিকিৎসা প্রয়োজন, এখানে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে চিকিৎসকেরা যা করছেন।’’
ভবানীর কথায়, ‘‘ওরা বলছে বটে, আমিও যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু মনে হয় না ওরা আমায় দেখলে আর বিমানে তুলবে। সারা গায়ে তো নল লাগানো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy