সদ্য কিউবা সফরে গিয়ে রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে, ছবি তুলে ইতিহাস গড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চলতি বছরের মে মাসে জি-৭ বৈঠকে যোগ দিতে জাপান সফরে আসার কথা তাঁর। এ বার কি তিনি পা দেবেন হিরোশিমা-নাগাসাকির মাটিতে? জল্পনা তুঙ্গে। এর আগে বার তিনেক জাপান সফরে এলেও হিরোশিমা কোনও বারই ওবামার সফরসূচিতে ছিল না। যদিও তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যতে হিরোশিমা-নাগাসাকি যেতে পারলে নিজেকে সম্মানিত মনে করবেন। পশ্চিমি রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড হিরোশিমা এসেছিলেন ২০০৮ সালে। ১৯৮৪ সালে জিমি কার্টার হিরোশিমায় পরমাণু বোমা স্মৃতিসৌধে এলেও তখন ক্ষমতায় ছিলেন না। তার পরে আজ পর্যন্ত কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন হিরোশিমায় আসেননি।
জাপানের ৭৮ বছরের বৃদ্ধা কেইকো ওগুরা মনে করেন, এ বার অন্তত ওবামা এবং জি-৭ নেতাদের হিরোশিমায় আসা উচিত। যাতে তারা দেখে বুঝতে পারেন, পরমাণু-শক্তি মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা কতটা প্রয়োজন। ১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট সকালে যখন আমেরিকার ফেলা পরমাণু বোমা হিরোশিমা শহরকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল তখন ওগুরা আট বছরের মিষ্টি মেয়ে। সে দিন সকালে কোন কারণে কে জানে, কু ডেকেছিল তাঁর বাবার মনে। মেয়েকে সে দিন স্কুলে যেতে দেননি। গ্রাউন্ড জিরো থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ওগুরার বাড়ি যেন কোনও মন্ত্রবলে বেঁচে গিয়েছিল। সেই ঘটনায় ১,৪০,০০০ জন মারা গিয়েছিলেন। যন্ত্রণায় ছটফট করে বহু প্রতিবেশীকে তিলে তিলে মরতে দেখার সেই স্মৃতি আজও দগদগে ওগুরার মনে। তবে ওবামা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রনেতারা হিরোশিমায় এসে ক্ষমা চান বা চোখের জল ফেলুন— এমনটা চান না ওগুরা। বরং তিনি মনে করেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ওবামার এখানে আসা উচিত। তাঁর এবং অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের এটা বুঝতে হবে, পরমাণু অস্ত্র কেবল বন্ধু বা শত্রু বানানোর বিষয় নয়। বরং হাতে হাত মিলিয়ে এই অশুভ শক্তির বিরোধিতা করা অনেক বেশি জরুরি।’’
একই দাবি নিয়ে ২০১৪ সালে জাপানের মার্কিন দূত ক্যারোলাইন কেনেডির সঙ্গে দেখা করেছিলেন হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতুসি এবং নাগাসাকির মেয়র তোমিহিসা তাওয়ে। আর্জি জানিয়েছিলেন, আমেরিকার পরমাণু বোমা হামলার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যেন উপস্থিত থাকেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে সেই অনুষ্ঠানে আমেরিকার তরফে ওবামাকে ক্ষমা চাইতে হবে, এমন কোনও দাবি জানাননি তাঁরা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন জাপানের বহু নাগরিকই। যেমন, হিরোশিমা সিটি ইউনিভার্সিটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইউকি তানাকা। শহরের ইতিহাস সম্পর্কে এক জন বিশেষজ্ঞ তিনি। তানাকার মতে, ‘‘মেয়রেরা যদি মনে করেন আমেরিকার সব পরমাণু বোমা নষ্ট করা উচিত, তা হলে হিরোশিমায় বোমা ফেলে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করা হয়েছে, সেটাও আমেরিকাকে স্বীকার করতে হবে। তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। একটা বিষয়কে অন্যটার চেয়ে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়।’’
যদিও ওই প্রবীণ অধ্যাপক ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন, ওবামা কখনও হিরোশিমায় এলেও কোনও মতেই আমেরিকার হয়ে ক্ষমা চাইবেন না। তানাকার কথায়, ‘‘কারণটা সহজ। আমেরিকা মনে করে তখন পরমাণু বোমা ফেলাটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। এবং তার জন্যই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল।’’ শুধু তাই নয়, তিনি মনে করেন, আমেরিকাকে ক্ষমা চাইতে বলার মুখ নেই খোদ জাপানেরই। তাই আজ পর্যন্ত ‘আমেরিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে’ দাবিতে কখনও সরব হয়নি তারা। কারণ জাপান নিজে যুদ্ধকালীন বহু অপরাধের জন্য আজ পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। তাই অন্য কোনও দেশকে ক্ষমা চাইতে বলার মুখই নেই তাঁদের দেশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy