এক মঞ্চে। হাভানার প্যালেস অব রেভলিউশনে বারাক ওবামা এবং রাউল কাস্ত্রো। ছবি: এএফপি।
প্যালেস অব রেভলিউশনে হাতে হাত মিলেছিল। পাশাপাশি ছিল দু’দেশের পতাকা। সব মিলিয়ে তৈরিই ছিল কিউবার সঙ্গে আমেরিকার নয়া ইতিহাস রচনার মঞ্চ। আর আজ সকালে কিউবার গ্রান থিয়েট্রারো দে লা হাভানায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তৃতা সেই ইতিহাসের সূচিপত্রতেই জুড়ে দিল নতুন অধ্যায়।
সকাল দশটা দশ। মঞ্চে এলেন ওবামা। তবে কথার শুরুটা কিউবা দিয়ে হল না। ৮৮ বছরের খরা কাটিয়ে প্রথম কিউবার মাটিতে পা রাখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুরু করলেন ব্রাসেলসে আজকের জঙ্গি হানা প্রসঙ্গ দিয়ে। বললেন, এই হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, পুরনো দ্বন্দ্ব ভুলে এক সঙ্গে কাজ করাটা কতটা জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘বেলজিয়ামে জঙ্গি হামলার ঘটনা আরও এক বার মনে করিয়ে দিল, আমাদের একযোগে কাজ করাটা কতটা জরুরি।’’ আজ সকালে ব্রাসেলসের জঙ্গি হামলার খবর পাওয়া মাত্রই তা ওবামাকে জানায় হাভানার মার্কিন দূতাবাস। হাভানার থিয়েটারের মঞ্চে ওঠার আগেই বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেলের সঙ্গে ফোনে কথাও বলে নেন ওবামা। আর তার পরেই হাভানার মঞ্চ থেকে জঙ্গিনিধনের লড়াইয়ে আরও এক বার সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘বিশ্বকে এক হতেই হবে। বিশ্বাস, ধর্ম, চামড়ার রং, ভৌগোলিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের এক হতে হবে। যারা সারা বিশ্বের মানুষের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের পরাজিত করব।’’
দিন বদলের স্বপ্ন
ওবামার দীর্ঘ বক্তৃতার প্রতিটি ছত্রে ছত্রে উঠে এল বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি। কখনও সন্ত্রাসবাদকে হারিয়ে শান্তির বার্তায়, কখনও শিল্প-সংস্কৃতির সমমনস্কতায়, কখনও আবার বক্সার মহম্মদ আলি বা বেসবল খেলোয়াড় জ্যাকি রবিনসনের নামে ওবামা মিলিয়ে দিলেন দু’দেশের খেলাপাগলদের। উদ্ধৃত করলেন কিউবার কিংবদন্তী কবি হোসে মার্তির কবিতা থেকে। বললেন, সাদা গোলাপ ফোটাতেই এসেছেন তিনি। ঠান্ডা লড়াই শেষ করতে এসেছেন। এই আসাটা যে মোটেও সহজ ছিল না, স্বীকার করে নিলেন সে কথাও। বললেন, ‘‘ফ্লোরিডা থকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে হাভানা। কিন্তু এই রাস্তাটা পেরোতে অনেক বাধা পার করতে হয়েছে। ইতিহাস, মতাদর্শের বাধার সঙ্গে পেরোতে হয়েছে যন্ত্রণা আর বিচ্ছেদের বাধাও।’’ এ বার সে সব ভুলে কিউবার মানুষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতেই এসেছেন।
কিন্তু এত দিন পরে কেন?
ওবামার জবাব, ‘‘এত দিন আমেরিকা যে ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছিল, তাতে কোনও কাজের কাজ হচ্ছিল না। যে বিচ্ছেদ-নীতিতে এই মুখ-দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, একুশ শতকে তারও আর কোনও জায়গা নেই।’’ ইতিমধ্যেই কিউবার উপর থেকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন প্রেসিডেন্ট। সেই কথা জানাতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল হল। উপস্থিত প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর মুখেও তখন হাসি।
বন্ধুত্বের বার্তা স্পষ্ট। তবু সুর কেটেছে রাজনৈতিক বন্দিদের প্রসঙ্গে। কাল রাউলের সঙ্গে ওবামার বৈঠকের পরেই দ্বিমত প্রকট হয় কিউবায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নেও। ওবামা বলেন, ‘‘অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, কিউবায় এত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এ ব্যাপারে আমেরিকা চুপ কেন?’’ মার্কিন সংবাদমাধ্যমেরও প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোকে প্রশ্ন করে, রাজনৈতিক বন্দিদের কেন মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না? রাউলের পাল্টা জবাব, ‘‘অন্তত এক জন রাজনৈতিক বন্দির নাম বলুন। আজই তাঁকে মুক্তি দেব।’’
তবে বন্ধুত্বের রাস্তা মসৃণ করতে আজ ওবামা জোর দেন ভবিষ্যতের স্বপ্নেই। মার্টিন লুথার কিংগ্কে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘পরিবর্তনকে ভয় নয়, আমরা যেন তাকে গ্রহণ করতে পারি!’’
পরিবর্তনের কথা বলে হোয়াইট হাইস দখল করেছিলেন বারাক ওবামা। আর আজকে হাভানার মঞ্চও মাতালেন সেই পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy