দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নিঃশব্দে পিছু হটা চলছিলই। মলদ্বীপে সঙ্কট শুরু হওয়ার পরে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে ভারতের কূটনৈতিক জড়তা।
তার ফলও দেখা যাচ্ছে হাতেনাতে। সাম্প্রতিক অশান্তি ও তার জেরে জরুরি অবস্থা জারির পরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন জানিয়েছেন, তিন ‘বন্ধু দেশ’— চিন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ভারত বাদ।
প্রশ্ন হল, কেন? বছরখানেক আগেও ‘ভারতই প্রথম’ স্লোগান নিয়ে চলছিল মলদ্বীপ। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভিতরে ভিতরে ক্ষয় ধরেছিল সম্পর্কে। যা সামাল দিতে তৎপরতার সঙ্গে হাল ধরতে পারেনি সাউথ ব্লক। নিঃশব্দে চিন এসে দখল নিয়েছে সেই পরিসরের।
প্রাক্তন কূটনীতিক এবং রাজীব গাঁধীর সময় মলদ্বীপে নিযুক্ত বিশেষ দূত রণেন সেন হতাশার সঙ্গে বলছেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। মলদ্বীপে আমাদের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পদ বহু ছিল। সেগুলি ধীরে ধীরে হাতছাড়া হচ্ছে।’’ রণেনের মতে, কথা বেশি না বলে, অন্য দেশকে সচেতন না করে চুপচাপ কাজ করে যাওয়া উচিত ছিল ভারতের। পরিস্থিতির বদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নীতিকে বদলানো উচিত ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘একেই রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেওয়া বলে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেটা হয়নি।’’
কোথায় ভুল
• মলদ্বীপের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে বন্দর উন্নয়ন, সমুদ্রপথে নজরদারিতে লাভ। পরে চিন-মলদ্বীপ মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ফলে ভারতের ভূমিকাই নগণ্য
• শুভেচ্ছা সফরের নামে মলদ্বীপে চিনা যুদ্ধ জাহাজ। নয়াদিল্লির মৃদু প্রতিবাদ
• মলদ্বীপে রেডার ইনস্টলেশন প্রকল্প শুরু করেছিল ভারত। মলদ্বীপ ধীরে চলো নীতি নিলেও তৎপরতা দেখায়নি সাউথ ব্লক
• ভারত মহাসাগরে একাধিক প্রকল্পে ভারতের লগ্নি। আখেরে লাভবান চিন
কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, চালু প্রকল্পগুলিও হাতছাড়া হয়েছে ব্যাখ্যাতীত ঢিলেমির কারণে। ২০১৬ সালে মোদী সরকার প্রতিরক্ষা চুক্তি করে মলদ্বীপের বন্দর উন্নয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্র নিরাপত্তা সংক্রান্ত বহু ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথে হাঁটা শুরু করেছিল। কিন্তু তার পরের বছরেই আসরে নামে বেজিং। চিন-মলদ্বীপ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরে গোটা আবহাওয়াই বদলে যায়। এক প্রাক্তন কূটনৈতিক কর্তার মতে, চিন সম্পর্কে ‘কখনও নরম, কখনও গরম’ নীতি নিয়ে চলার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ভারসম্যের অভাব ঘটেছে। শুভেচ্ছা সফরের নামে যখন মলদ্বীপে রণতরী পাঠায় চিন, তখন জোরালো প্রতিবাদ করা উচিত ছিল নয়াদিল্লির। কারণ কৌশলগত ভাবে মলদ্বীপের অবস্থান ভারতের পক্ষে খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু চিনা জুজু দেখে সে ভাবে স্বর তোলেনি নয়াদিল্লি।
সেই সময়ে প্রত্যক্ষ দৌত্যের পথে না গিয়ে উল্টে ইয়ামিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে কেন্দ্র। তাঁকে ভারতে নিয়ে আসা হয়। ক্ষুব্ধ মলদ্বীপ সরকার এর পরে আরও ঝুঁকে পড়ে বেজিংয়ের দিকে। একের পর এক চিনা লগ্নি হতে থাকে। মালে থেকে হুলহুল পর্যন্ত ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ, হুলহুলমালে বিশাল আবাসন প্রকল্প— এই সময়েই গড়ে উঠতে থাকে চিনা বিনিয়োগে।
অনেকেই তাই মনে করছেন, শুধু নীতি বদল নয়, নীতি ধরে রাখার কাজটাও অনেকাংশেই সফল ভাবে করতে পারেনি সাউথ ব্লক। এমন আপৎকালীন সময়ে দিল্লি তাই এক অর্থে দিশাহারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy