ফাইল চিত্র।
১৫ জুলাই
দুপুর ১টা
বিরসা দাশগুপ্তের ছবির কাজে একটু আগে ইস্তানবুল এসে পৌঁছেছি। আবহাওয়া বেশ মনোরম। ফুরফুরে মেজাজেই গাড়িতে হোটেলে পৌঁছলাম। আমাদের শুটিং ইউনিটের বাকিরা অবশ্য আগেই পৌঁছে গিয়েছে ওখানে। আমি একা এলাম।
সন্ধ্যা ৭টা
ইউনিটের অনেকের সঙ্গেই কথা হচ্ছিল। শুটিংয়ের নানা ইতিউতি কথা। মোট ৪৪ জনের দল এসে উঠেছে এই হোটেলেই। তখনও অবশ্য জানি না, দুপুরের ফুরফুরে মেজাজ বাষ্পের মতো উবে যাবে রাত গভীর হতেই!
গভীর রাত
ঘড়ি দেখিনি, তবে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটা তখনই এল। সহ-অভিনেতা সৌম্যজিৎ মণ্ডল লিখছে, সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে! বলে কী! এত দিন এত জায়গায় নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে, কিন্তু সিনেমার শুটিং করতে এই ইস্তানবুলে এসে যে সেনা বিদ্রোহের মধ্যে পড়তে হবে, সেটা কখনও ভাবিনি। ধড়ফড় করে টিভি চালালাম। নানা নিউজ চ্যানেলে ‘মিলিটারি ক্যু’ নিয়ে নানা খবর আসছে। দেখলাম, এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে কি! বাড়ি ফিরব কেমন করে? সব মিলিয়ে কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, সেনা বিদ্রোহ এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে। শেষমেশ নানা দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমোতে গেলাম বটে, কিন্তু প্রথমে ঘুম আসতে চাইছিল না। পরে অবশ্য ঘুমিয়েও পড়লাম।
১৬ জুলাই
সকাল ৭টা
ঘুম ভাঙতেই হোটেলের জানলায় এসে দাঁড়ালাম। বাইরেটা দেখতে হবে, কী হচ্ছে এখন। বাইরে তাকাতে চমকে গেলাম! রাস্তায় অজস্র মানুষের ঢল। হাঁটছে, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে, চিৎকার করছে, এই জয় মানুষের জয়। এই জয় গণতন্ত্রের জয়। আবার টিভি চালালাম। দেখলাম, বিভিন্ন চ্যানেলেও বলা হচ্ছে, সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। অসংখ্য মানুষ ক্যামেরার সামনে বলছেন, ‘এই জয় মানুষের জয়। এই জয় গণতন্ত্রের জয়।’ বুঝতে পারলাম, এরা সব প্রেসিডেন্টের অনুগামী। আমরা আছি শহরের ইউরোপিয়ান এলাকায়। ইউরোপার্ক হোটেলে। খোঁজ নিলাম শুটিং ইউনিটের বাকিদের। মিমি, বিরসা, গৌরবরা ভাল আছে।
সকাল ৯টা
আমাদের শুটিং কোঅর্ডিনেটর ইলহাম এসে বললেন, চলো, শুটিংয়ে যাবে না? সে কি! এর মধ্যে শুটিং? ইলহাম বললেন, মানুষের জয় হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ। আমরা শুটিং করতে পারি। তবে মিমিরা সকলে বলল, আজকের দিনটা হোটেলেই থেকে গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হোক। কাল আবার দেখা যাবে। এমনিতে এখন শুটিং চলছে বসফরাস নদীর ধারে।
সকাল ১০টা
টেলিভিশনে শুনলাম, প্রেসিডেন্ট দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়ে বলছেন, আপনারা সবাই রাস্তায় নামুন। কোনও চিন্তা নেই। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। পুরোটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছিল না। কারণ, নানা রকম খবর আসছে। কেউ বলছে, পার্লামেন্টে বোমা পড়েছে, প্রেসিডেন্টের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই এখনও চলছে। ভারতীয় দূতাবাসে ফোন করে জানা গেল, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
বেলা ১১টা
খবরে দেখলাম, এয়ারপোর্ট আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। যাক বাবা! তা হলে কি কাল থেকে আবার শুটিং শুরু করা যাবে? স্থির হল, সব কিছু যদি আবার ঠিকঠাক হয়ে যায় তা হলে কাল আবার শুটিং শুরু হবে। আমি কী করব? এখনও ভাবিনি। কাল সিদ্ধান্ত নেব।
দুপুর ১টা
পরিস্থিতি যে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তা মানুষজনের হাবেভাবেই বোঝা যাচ্ছে। এত লোক কি অন্য দিন রাস্তায় থাকে? না কি আজকের পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম? ইউনিটের কে এক জন যেন বলল, এরা যেন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে! টেনশনটাও যে চলে গেছে তা টের পেলাম খিদেটা চাগাড় দিল দেখে। এ বার লাঞ্চ করতে যাব। হোটেল থেকে বেরিয়ে এ দিক-ও দিক একটু ঘুরে আসব ভাবছি।
দুপুর ৩টে
বাইরে থেকে একটু আগে হোটেলে ফিরলাম। দেখলাম, অজস্র মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। উচ্ছ্বাসে-আবেগে ভাসছেন তাঁরা। দলে দলে লোক মোটরবাইকে চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। হাত নাড়ছেন, আনন্দ করছেন! ভাবছি, এখন একটু রেস্ট নেব। বিকেলে যদি আবার একটু বেরনো যায়। এখানে শুনলাম, সন্ধ্যার পরে আর বাইরে বেরনো যাবে না। দেখি, কাল কী হয়।
আরও খবর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy