রকেট বিস্ফোরণ। ছবি রয়টার্স।
এক প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ। আর তারপরেই আকাশের গায়ে বড়সড় গর্ত! গত বছর নভেম্বর মাসের এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। যা দেখেশুনে চমকিত বিজ্ঞানীরাও।
১৮ নভেম্বর দিনটা মোটেই ভাল ছিল না ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের জন্য। বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ অভিযানে পা রেখেছে সংস্থাটি। তাদের মহাকাশযান ব্যবহার করেই বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাতায়াত করছেন নাসার নভশ্চরেরা। তা ছাড়া, পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো বা নাসার বহুবিধ অভিযানে অংশ নেয় স্পেসএক্স। মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতিও শুরু করেছে তারা। এমনই একটি অভিযানের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল সে দিন। কিন্তু মহাকাশযানের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের চার মিনিটের মধ্যে টেক্সাসে বোকা চিকার আকাশে প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। হাজার হাজার টন জ্বলন্ত ইস্পাত টুকরো ছড়িয়ে পড়ে আকাশে। এ ধরনের বিপদ আগেও ঘটেছে। তবে মাটি থেকে ৯৩ মাইল উপরে ঘটে যাওয়া নির্দিষ্ট এই বিস্ফোরণটি নিয়ে আশঙ্কা জাগে। বিজ্ঞানীরা স্থির করেন, রকেট উৎক্ষেপণের জেরে পৃথিবীর গায়ে জড়ানো বাতাসের চাদরের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তর আয়নোস্ফিয়ারে ঠিক কী প্রভাব পড়ে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪৮ থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার উপরে আয়নোস্ফিয়ার স্তরটি আয়নিত কণার সমুদ্র। এই স্তরটি রেডিয়ো যোগাযোগ, জিপিএস প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষার কাজও করে এই বায়ুস্তর। এর গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই বিজ্ঞানীরা ঠিক করেছিলেন, রকেট উৎক্ষেপণে স্তরটির উপরে কী প্রভাব পড়ে, তা জানার চেষ্টা করা হবে। স্পেসএক্সের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে বিস্ফোরণ ঘটার পরেই রাশিয়া ও ফ্রান্সের একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান শুরু করেন। গবেষণার ফলাফল ‘জিওফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটারস’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, স্পেসএক্সের রকেটের ওই বিস্ফোরণের পর তাঁরা যে গবেষণা শুরু করেছিলেন, তাতে আয়নোস্ফিয়ারের চরিত্র ও গঠন সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছে। আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা, লাভা উদ্গীরণ, ভূচৌম্বকীয় ঝড়, সৌরঝড়— এ ধরনের বিপর্যয়েও যথেষ্ট প্রভাব পড়ে আয়নোস্ফিয়ারে। যার জন্যই অরোরা বোরিয়ালিস ও অস্ট্রালিসের দেখা মেলে মেরু অঞ্চলে। মানুষের তৈরি রকেট উৎক্ষেপণের জেরে আয়নোস্ফিয়ারে ছিদ্র তৈরি হওয়া, তা-ও দেখা গিয়েছে আগে। ২০২৩-এর জুলাই মাসে স্পেসএক্স ফ্যালকন রকেট উৎক্ষেপণের পরে ‘রক্তাক্ত’ অরোরা দেখা গিয়েছিল। ২০ মিনিট ধরে চলেছিল সেই ‘ব্লিডিং’। তার পর সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নভেম্বরের ওই রকম ভয়ানক বিস্ফোরণের প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে ধারণা ছিল না বিজ্ঞানীদের। উত্তর আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান জুড়ে বিস্তৃত ২৫০০ গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণপূর্ব আমেরিকা পর্যন্ত আকাশে এক প্রকাণ্ড আকারের গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তের নির্দিষ্ট মাপ অবশ্য জানা যায়নি।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই গর্ত ওজ়োন হোলের মতো বিপজ্জনক নয়। স্পেসএক্সের মহাকাশযান থেকে আয়নোস্ফিয়ারে যে গর্ত তৈরি হয়েছিল, তা ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে বুজে গিয়েছিল। তবে কেন এমন হল, এর জেরে ঠিক কী কী ঘটেছে, তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়। এই ধরনের ঘটনার জেরে মানুষের শরীরস্বাস্থ্যে কোনও প্রভাব পড়তে পারে কি না, তা-ও অজানা। তবে গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, ১৮ নভেম্বর দিনটা স্পেসএক্সের জন্য ভাল যায়নি, কিন্তু তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনা আয়নোস্ফিয়ারকে জানতে আরও সাহায্য করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy