পার্কটা তখনও ছিল। ছোটরা আসতও। কিন্তু খেলা হত না। বাচ্চাদের আগ্নেয়াস্ত্র চালানো শেখাত আইএস জঙ্গিরা।
ইরাকের মসুলে সেই পার্কটাতেই বসেছে বইমেলা। ছোট-বড় হাজারো মুখের ভিড়। হালকা গান বাজছে। টেবিলে বইয়ের পাহাড়। বিক্রি নয়, বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বই।
আইএস-অধ্যুষিত ইরাকে এক সময়ে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল লেখাপড়া-আঁকা-গানবাজনা, শিল্প শব্দটাই। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটায় শুধু পড়েছিল বোমাগুলির শব্দ। সেই ইরাক এখন প্রায় জঙ্গিমুক্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই নিয়ে ইরাকের দ্বিতীয় শহরে শুরু হয়েছে বইমেলা। স্লোগান উঠেছে, ‘আমি ইরাকি— আমি পড়ি।’ আসলে আরব দুনিয়াতেই একটা কথা চালু ছিল, ‘‘মিশর লেখে, লেবানন বই প্রকাশ করে আর ইরাক পড়ে।’’
মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজির শিক্ষক আলি আল-বারুদির কথায়, ‘‘যত ক্ষণ না আমরা কিছু হারিয়ে ফেলি, তার মর্ম বুঝি না।’’ জঙ্গি মুক্তির পর থেকেই নিজের শহরটার এত দিনের ক্ষত, ঘা কী ভাবে সারানো যায়, সে নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন আলি। বললেন, ‘‘গত বছর পূর্ব মসুল যখন জঙ্গিমুক্ত হল, মনে হয়েছিল দ্বিতীয় বার জন্ম হল আমার। ফের স্বাধীন!’’
আলির আক্ষেপ, গত কয়েক বছরে আইএসের কবলে পড়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল দেশের শিল্প-সংস্কৃতি। অবাধে মূর্তি ভাঙা হয়েছে কবিদের, বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নষ্ট করা হয়েছে বাদ্যযন্ত্র। রেহাই পায়নি স্থাপত্য-ভাস্কর্য। মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ধরে ধরে খুন করা হয়েছে সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পীদের। ২০০৩ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী আসার পরে পরিস্থিতি আরওই ভয়াবহ হয়। আলি বলেন, ‘‘আইএস যেন ভূতের মতো তখন— আপনি দেখতে পাবেন না, কিন্তু তারা রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে আড়ালে ক্ষমতা প্রদর্শন করে গিয়েছে তারা। ২০১৪-র পরে তো একেবারে প্রকাশ্যে। ওদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াইটা খুব সহজ ছিল না। প্রতিদিন হাজার বার করে মরেছি। এই ভয়টাই কাটাতে হবে মসুলকে।’’
মসুল বদলাচ্ছে। আর তার বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি ক্যামেরান্দি করে রাখছেন আলি। পইপই করে ছেলেকে সতর্ক হতে বলেন বৃদ্ধ বাবা। তাঁরও যে ভয় কাটেনি। কত মৃত্যু দেখেছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy