ধ্বংস্তূপ: কেউ কি বেঁচে? চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার লে কায়ে। রয়টার্স ।
এগারো বছর আগেকার ধাক্কাটা থেকে এখনও বেরোতে পারেনি হাইতি। ২০১০ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে দু’লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন সে দেশে। কোমর ভেঙে গিয়েছিল অর্থনীতির। সেই দুঃস্বপ্নই যেন ফিরে এল গত কাল। আবার ভূমিকম্প। আবার রাশি রাশি ধ্বংসস্তূপ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা অন্তত ৭২৪। আহত অন্তত ১৮০০। সারা দেশে সাড়ে আটশোরও বেশি বাড়ি ভেঙেছে। সেই ভাঙা বাড়ির নীচে কত মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন, এখনও তার কোনও আন্দাজ নেই।
আমেরিকান জিয়োলজিক্যাল সার্ভে জানাচ্ছে, রিখটার স্কেলে ৭.২ মাত্রার এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের ১২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে। হাইতির একটি সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক ফ্রানৎজ় ডুভাল লিখছেন, ‘‘সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ কেঁপে উঠল সব কিছু। জোরে জোরে, দীর্ঘ কয়েক সেকেন্ড ধরে।’’ রাজধানীর বাসিন্দা নাওমি ভার্নেউস বলছিলেন, ‘‘বিছানাটা নড়ে উঠতেই ঘুম ভেঙে গেল। ২০১০-এর ভূমিকম্প দেখেছি। বিপদ আঁচ করে জুতো না পরেই ছুটে বেরিয়ে এলাম বাইরে। তার পরেই খেয়াল হল, আমার দু’টো বাচ্চা আর মা তো এখনও বাড়ির ভিতরেই রয়ে গিয়েছে।’’
রাজপথ তত ক্ষণে ভরে উঠেছে আর্ত চিৎকারে। কেউ কাঁদছেন, কেউ খুঁজছেন প্রিয়জনকে। প্রথম কম্পনের পরেই জারি হয়েছিল সুনামি সতর্কতা। তার পরে সারা দিন ধরেই চলেছে ‘আফটারশক’। সেই কম্পনের মাত্রা ৫.৮ পর্যন্ত উঠেছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তের। ধুলোয় মিশে গিয়েছে একাধিক শহরের ঘরবাড়ি। বিধ্বস্ত অবস্থা বন্দর শহর লে কায়-এর। উদ্ধারকাজ তদারক করতে সেখানে রওনা হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল হেনরি বলেছেন, ‘‘এখন সবচেয়ে দরকারি হল, ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া যত বেশি সম্ভব মানুষকে জীবন্ত উদ্ধার করা। খবর এসেছে, হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে আহতের ভিড়ে।’’ ভূমিকম্পের পরে লে কায় শহরে সমুদ্রের জল ঢুকেছে। ভেঙেছে হোটেল, রিসর্ট, গির্জা। একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে মিলেছে শহরের প্রাক্তন মেয়রের মৃতদেহ।
এক মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী হেনরি জানিয়েছেন, ক্ষতির মাত্রা পুরোপুরি না বোঝা পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানাবেন না। তবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই হাইতিকে সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পশ্চিম গোলার্ধের দরিদ্রতম দেশ হাইতি। গত দেড় বছরে এ দেশের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়েছে কোভিড অতিমারি। সম্প্রতি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন দেশের প্রেসিডেন্ট। গত কালের ভূমিকম্পের পরেও আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী সপ্তাহের সোম বা মঙ্গলবার হাইতিতে আছড়ে পড়তে পারে নিরক্ষীয় ঝড় ‘গ্রেস’। এ দেশের তাই স্বস্তি নেই একফোঁটাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy