দারুণ একটা দুষ্প্রাপ্য বই বা পুঁথি সংগ্রহে এসেছে। কিন্তু তার হাল এতই খারাপ যে পাতা ওল্টাতে গেলেই গুঁড়ো-গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে। কেমন হতো, যদি হাত না লাগিয়েই পড়ে নেওয়া যেত বইটি! এ বার এমনই এক প্রযুক্তি বার করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (মিট)-র এক দল গবেষক। পুণের ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করা ৪৬ বছর বয়সি রমেশ রস্কর তাঁদের সেই দলের অন্যতম। রমেশদের দাবি, তাঁদের প্রযুক্তিতে বই আর খুলে পড়তে হবে না। পড়ে ফেলা যাবে বন্ধ করে রাখা বইয়ের প্রতিটি পাতা। পড়া যাবে প্রতিটি বর্ণ! গবেষক দলটির আর এক সদস্য বারমাক হেশম্যাট জানিয়েছেন, মেশিন কিংবা ওষুধের গায়ে লেখা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শব্দগুলোকেও পড়া যাবে।
কী ভাবে? যতই গায়ে গায়ে লেগে থাকুক বইয়ের দু’টি পাতার মধ্যে অন্তত ২০ মাইক্রন ফাঁক থাকে, থাকে বাতাসের একটি স্তর। বিশেষ কম্পাঙ্কের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ পাঠালে প্রতিটি পাতায় তার প্রতিফলন হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় মাইক্রোওয়েভ ও ইনফ্রা-রেড তরঙ্গের মাঝামাঝি কম্পাঙ্কের টেরাহার্ৎজ তরঙ্গ। সেই প্রতিফলিত তরঙ্গের ধরা থাকে ছাপা ও না ছাপা অংশের তারতম্য। সেটাই বিশ্লেষণ করে পড়ে ফেলা যাচ্ছে পাতার পর পাতা। চিকিৎসার জন্য যে ভাবে এক্স-রে বা চুম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে দিয়ে শরীরের ছবি স্তরে স্তরে তোলা যায়— এ-ও তেমনই।
মিট ও জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা এর ‘অ্যালগোরিদম’-কে এমন ভাবে বানিয়েছেন, যাতে কাগজের গাদার মধ্যে থেকে প্রত্যেকটি পাতার ছবি বিশ্লেষণ করে অসম্পূর্ণ বর্ণ বা শব্দকেও চিহ্নিত করতে পারে এই প্রযুক্তি। রমেশরা জানাছেন, ‘টেরাহার্ৎজ ইমেজিং’ পদ্ধতিতে আপাতত তাঁরা উপর থেকে একসঙ্গে ২০টি পৃষ্ঠার লেখার ছবি তুলে তা পড়ে ফেলতে পারছেন। এখন এর ক্ষমতা আরও কতটা বাড়ানো যায়, কত বেশি পাতা এক বারে পড়ে ফেলা যায়— সেই লক্ষ্যেই এখন চলছে গবেষণা।
দেখুন সেই ভিডিও
এই পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে, নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটন সংগ্রহশালা। তারা এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখতে চায়। পাছে নষ্ট হয়, সেই ভয়ে সংগ্রহশালার দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্য পুরনো বইগুলিতে হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বইগুলিকে ফের পাঠকদের সামনে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টাই চালাতে চান সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy