ভূমিকম্পের কারণে নেপালে একটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ছবি: পিটিআই ।
বিধ্বংসী ভূমিকম্প তছনছ করে দিয়েছে নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকা। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আরও ১৫৯ বার কেঁপে উঠেছে নেপালের মাটি! এমনটাই জানাল জাতীয় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র (ন্যাশনাল আর্থকোয়েক মনিটারিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার)। জাতীয় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের ভূমিকম্পের পর এখনও পর্যন্ত ১৫৯ বার মূল কম্পন পরবর্তী কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। ছড়িয়েছে আতঙ্ক।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল ভূমিকম্প এবং আফটারশকের আতঙ্কে বহু মানুষ নিজেদের বাড়িতে প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছেন। মৃত্যুভয়ে অনেকেই রাত কাটিয়েছেন খোলা জায়গায়। দিনের আলোর ফোটার পরও ঘরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নেপালের ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪০-এর গণ্ডি ছুঁয়েছে। আহত বহু মানুষ। সুরক্ষেত জেলা হাসপাতালে বেশিরভাগ আহতদের চিকিৎসা চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তরফে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল নেপালের জাজারকোটের রামিদন্ডা। কম্পনের কেন্দ্র মাটি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৪। নেপালের ভূকম্পনের অভিঘাতে কেঁপে উঠেছিল সুদূর দিল্লির মাটিও। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে টের পাওয়া গিয়েছিল কম্পন। এ ছাড়াও ভূমিকম্পের কারণে এনসিআর, অযোধ্যা-সহ উত্তর ভারতের বড় অংশের মাটিতে কম্পন অনুভূত হয়েছিল। লখনউ এবং বিহারেরও বেশ কিছু জায়গার মাটি কেঁপে ওঠে।
ভূমিকম্পের বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। ‘পালাও, পালাও’ বলে বহু মানুষকে চিৎকার করে দৌড়াদৌড়ি করতেও দেখা গিয়েছে। রাতের অন্ধকারেও মানুষের মুখে ভয় এবং আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে সেই সব ছবি-ভিডিয়োয়। কম্পনের ফলে ভারতের প্রভাবিত এলাকাতেও বহু মানুষ আতঙ্কে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
নেপালের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভূমিকম্প আঘাত হানার কিছু ক্ষণের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে। বহু বাড়িতে চওড়া চওড়া ফাটল ধরেছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়ছে বহু মানুষের। তবে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিম রুকুম এবং পাহাড়ি জাজারকোট এলাকার বাসিন্দারা। এই দু’টি এলাকা কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে। ওই দুই এলাকার চারিদিকে এখন শুধু স্বজনহারাদের চিৎকার এবং আর্তনাদ।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ভূমিকম্পের কারণে মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসকের দল নিয়ে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনও শুরু করেছেন তিনি। নেপাল সেনাবাহিনী এবং নেপাল পুলিশ সমান তালে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘‘শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ জাজারকোটের ভূমিকম্পের কারণে হওয়া মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল। উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণের জন্য তিনটি নিরাপত্তা সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।’’
নেপালের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘নেপালে হওয়া ভূমিকম্পের কারণে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গভীরভাবে শোকাহত। নেপালের জনগণের পাশে আছে ভারত। নেপালকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত ভারত। স্বজনহারা পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই কামনা করছি।’’
উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল রিখটার স্কেলে প্রায় ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে নেপালের বুকে। কেন্দ্রস্থল ছিল গোর্খা জেলার বারপাক। ভূমিকম্পের তাণ্ডবে প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ। হাজার হাজার ঘর, বাড়ি, স্কুল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল নেপাল। সারা বিশ্ব সেই ভয়াবহতার সাক্ষী ছিল। মনে করা হচ্ছে, তার পর থেকে শুক্রবারের ভূমিকম্পই নেপালে ঘটা সব থেকে বড় ভূমিকম্পের ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy