তাঁর জন্মের তারিখ স্পষ্ট করে জানা যায় না। শুধু স্থানীয় গির্জার নথি বলে, বেঠোভেন পরিবারের মধ্যম পুত্রটিকে ব্যাপ্টাইজ করা হয়েছিল ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর। সেখানে সে সময় প্রচলিত রীতি ছিল জন্মের পরের দিনই নবজাতককে ব্যাপ্টাইজ করা। সে দিক থেকে ধরে নেওয়া হয় শিশুর জন্মের তারিখ ছিল ১৬ ডিসেম্বর, ১৭৭০। তবে এই তথ্যেরও কোনও প্রামাণ্য নথি নেই।
১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত হন বেঠোভেনের মা। তার ২ বছর পরে অতিরিক্ত নেশার জন্য চাকরি হারান তাঁর বাবা। সাংসারিক অস্থিরতায় বিক্ষিপ্ত জীবন ভাল লাগছিল না বেঠোভেনের। মাকে হারানোর ৫ বছর পরে বন ছেড়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চলে যান বেঠোভেন। ফিরে যান পারিবারিক শিকড়ের দেশেই। নতুন জায়গায় পৌঁছনর কয়েক দিন পরে বাবার মৃত্যুসংবাদ পান।
বেঠোভেন ছিলেন একাকিত্বের উপাসক। কিন্তু প্রেম তাঁকে ছেড়ে যায়নি। বার বার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু কারও সঙ্গেই নিজের সম্পর্ককে কোনও সংজ্ঞা দিতে চাননি। বেঠোভেনের প্রেম ও প্রেয়সীদের নিয়ে জানতে জীবনীকার ও গবেষকদের ভরসা তাঁর লেখা চিঠি। কিন্তু স্কুলজীবন অকালমৃত হওয়ার কারণে তাঁর হাতের লেখা ছিল দুর্বোধ্য। অনেক সময় তাঁর স্বাক্ষর বুঝতেই নাকাল হয়ে গিয়েছেন ইতিহাসবিদরা।
১৮১২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ১০ পৃষ্ঠার প্রেমপত্র লিখেছিলেন তাঁর ‘শাশ্বত প্রেয়সী’-র উদ্দেশে। কিন্তু কোনও দিন সেই চিঠি প্রেরকের কাছে পৌঁছয়নি। কে ছিলেন তাঁর সেই ‘ইমমর্টাল বিলাভেড’? ভেসে ওঠে অনেক অভিজাত সুন্দরীর নাম। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অ্যান্টোনি ব্রেন্টানো, জুলি গুইকিয়ার্ডি, থেরেস ম্যালফাট্টি এবং জোসেফিন ব্রুন্সভিক।
অনেক গবেষকের মত বেঠোভেনের সেই অজ্ঞাতপরিচয় প্রেমিকা ছিলেন অভিজাত ব্রুন্সভিক পরিবারের কন্যা জোসেফিন। সামাজিক পরিচয়ে বিস্তর বৈষম্যের জন্য তাঁদের বিয়ে হয়নি। জোসেফিন পরে বিয়ে করেছিলেন কাউন্ট পরিবারে। স্বামীর মৃত্যুর পরে আরও ২ বার ভিন্ন প্রেমিকের সঙ্গে (বেঠোফেন নন) সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। বিয়ে এবং বিয়ের বাইরে দু’টি সম্পর্ক থেকে মোট ৮ জন সন্তানের মা হয়েছিলেন তিনি।
অ্যান্টনি ব্রেন্টানোর সঙ্গে যখন বেঠোফেনের আলাপ হয়েছিল, তখন অ্যান্টনি ফ্রানজ ব্রেন্টানোর স্ত্রী। কিন্তু তাতে বেঠোফেনের সঙ্গে তাঁর প্রেম বাধা পায়নি। ১৮১১ থেকে ১৮১২ অবধি তিনিই ছিলেন স্রষ্টার ঘনিষ্ঠতম, এ কথা স্বীকার করেছেন বহু গবেষকই। এর পর স্বামীর সঙ্গে ভিয়েনা ছেড়ে চলে যান অ্যান্টনি। আর কোনও দিন দেখা করেননি বেঠোভেনের সঙ্গে। তবে পরে বার বার তাঁর স্মৃতিকথায় ফিরে এসেছেন বেঠোভেন।
১৮২৬ থেকে ক্রমে তাঁর শরীর ভাঙতে থাকে। বছর খানেক শয্যাশায়ী থাকার পরে প্রয়াত হন ১৮২৭ এর ২৬ মার্চ। মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন শুধু ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনসেল্ম হাটেনব্রেনার। পরে তিনি বলেছিলেন, বিকেল ৫টার সময় বাইরে এক বার বাজ পড়ার শব্দে চোখ খুলেছিলেন বেঠোভেন। ক্ষণিকের জন্য উপরে উঠেছিল ডান হাত। কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকার পরে চোখ বন্ধ করে ফেলেন। আর সেই চোখের পাতা খোলেনি।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল, বেঠোফেনের মৃত্যুর কারণ ছিল সিরোসিস অব লিভার। অতিরিক্ত সুরাপান তাঁকে তিল তিল করে এগিয়ে দিয়েছিল মৃত্যুর কাছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনও ধোয়াঁশা রয়েছে। মৃত্যুর ৩৬ বছর পরে সমাধি থেকে তাঁর দেহাবশেষ তুলে পরীক্ষা করা হয়। আধুনিক গবেষকদের মতে, সিরোসিস অব লিভারের পাশাপাশি তিনি সিফিলিসেরও শিকার ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy