সীমান্তের ও পারে আখাউড়া। সেখানে ‘লং মার্চ’ আসার কথা ছিল। এ পারে আগরতলায় তখন সতর্ক প্রহরা। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।
সীমান্ত এলাকায় ছিল উত্তেজনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর করেছিল প্রশাসন। তবে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের ‘ঢাকা টু আগরতলা লং মার্চ’ আখাউড়া চেক পোস্টের প্রায় এক কিলোমিটার আগেই আটকে দিল বাংলাদেশ প্রশাসন। এর পরে আখাউড়ার স্থলবন্দর সংলগ্ন মাঠে সমাবেশ করে ফিরে যান হাজার পাঁচেক গাড়িতে চড়ে আসা জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, জাতীয়তাবাদী যুব দল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। আবার এ দিনই সুপ্রিম কোর্টের এক বর্ষীয়ান আইনজীবী চট্টগ্রাম নগর দায়রা আদালতে সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের আবেদনের শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করলে বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীদের চাপে শুনানি করতে পারেননি বিচারক। পরে আবেদন খারিজ করে দেন তিনি। সেই আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের অভিযোগ, আদালত কক্ষেই হেনস্থা ও ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে তাঁকে।
আগরতলায় ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন অফিসে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের কর্মীরা ঢুকে আসবাব ভাঙচুর করে, পতাকা নামিয়ে এনে অমর্যাদা করে। এই ঘটনায় দিল্লি দ্রুত দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। দায়িত্বে থাকা পুলিশদের শাস্তি দেয় এবং সিসিটিভি দেখে কয়েক জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করে। এই হামলার প্রতিবাদে এ দিন আগরতলা পর্যন্ত লং মার্চ করে বিএনপির এই তিন সংগঠন। এ দিন সকালে ঢাকায় দফতরের সামনে সমাবেশের পরে প্রায় ২০০০টি গাড়ি রওনা হয়। পরে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে আরও হাজার তিনেক গাড়ি এই বহরে যোগ দেয়।
এ দিকে আখাউড়া সীমান্তে বিএসএফ ব্যারিকেড তৈরি করে। চেক পোস্টে সকাল থেকেই পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সতর্কতা ছিল। গত কয়েক দিনই চেক পোস্টের বাইরে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস মোতায়েন করা হচ্ছে। বুধবার সিআরপিও নামানো হয়। সঙ্গে জল কামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার গাড়ি রাখা হয়। আগরতলায় এ দিন আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বিএনপির এই কর্মসূচি।
বাংলাদেশের দিকে চেক পোস্টের প্রায় এক কিলোমিটার আগে লং মার্চের গাড়ি থামিয়ে দেওয়া হয়। নেতারা এর পরে পাশের মাঠে সমাবেশ করেন। কিন্তু স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। আখাউড়া থেকে ফোনে এক বাসিন্দা বলেন, “এই ডিসেম্বরে ভারতীয় ল্যান্সনায়েক অ্যালবার্ট এক্কা নিজের প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তানিদের হামলা থেকে আমাদের রক্ষা করেছিলেন। আগরতলার মানুষের সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তার বন্ধন, এ সব আমরা ভুলব কী করে?”
ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসির বলেন, “আমরা গোড়া থেকেই বলে এসেছি, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ আমাদের এই লং মার্চ। ভারতের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু বলার নেই। তাঁদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব পরীক্ষিত। ভারতের শাসক দলের উদ্দেশে আমরা বলছি— হাসিনার চশমা দিয়ে বাংলাদেশকে আর দেখবেন না। ১৫ বছর ধরে তাঁরা ঢাকার স্বৈরাচারী শাসকদের মদত দিয়ে বাংলাদেশে চক্ষুশূল হয়েছেন। এবার বাস্তবকে মেনে মানুষের ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিন।”
এ দিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রাম নগর দায়রা আদালতে হাজির হয়ে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের আবেদন শুনানির দিন ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার আবেদন জমা দেন। কিন্তু তাঁর সেই অধিকার নেই দাবি করে এবং এনওসি আনেননি— এই যুক্তি তুলে আদালতে ভিড় জমানো শাসক পক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন আবেদন খারিজের। রবীন্দ্র ঘোষ ফোনে জানান, “জুনিয়র আইনজীবীর ডাকে এক জন সিনিয়র এগিয়ে এলে এনওসি-র দরকার হয় না। কিন্তু আদালতে কাজ চালানোর পরিবেশ রাখেনি আইনজীবীরা। আমাকেও চড়চাপড় মারে, ধাক্কা দেয়। শুনানির অবস্থা নেই বুঝেই বিরক্ত বিচারক আবেদন খারিজ করেন। এই হল ‘ভিড়তন্ত্র’।” বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে এ দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy