ঘুম ভেঙে জেগে উঠল চিলির লাসকার আগ্নেয়গিরি। ছবি: টুইটার।
মাউনা লোয়া, সুমেরু পর্বতের পর এ বার চিলের লাসকার। ঘুম ভেঙে জেগে উঠছে বিশ্বের একের পর এক আগ্নেয়গিরি। পুরোদমে চলছে লাভা উদ্গীরণ। চিলির আন্দিজের লাসকার আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে শনিবার মাঝ রাতে। সেই থেকে অনর্গল লাভা ও ছাই উদ্গীরণ চলছে। আকাশে ছ’হাজার মিটার উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে ধোঁয়া, গ্যাস ও লাভার হলকা। ক্ষণে ক্ষণে এলাকার মাটি কেঁপে কেঁপে উঠছে।
বিপুল বেগে আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া, গ্যাস এবং গলিত লাভা। চিলির ‘ন্যাশনাল জিয়োলজি অ্যান্ত মাইনিং সার্ভিস’ সূত্রে খবর, শনিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ মৃদু ভূমিকম্প দিয়ে শুরু হয় অগ্ন্যুৎপাত। ক্রমশ তার তেজ বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়। আগ্নেয়গিরি এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকার আকাশসীমা ব্যবহার করবে যে বিমানগুলি, তাদের ঘুরিয়ে দেওয়া হয় অন্য পথে। কারণ, ওই গরম ধোঁয়ার সংস্পর্শে এলেই গলে বা পুড়ে যেতে পারে যে কোনও বস্তু।
সূত্রের খবর, লাসকার থেকে যে ধোঁয়া এবং গ্যাস উছলে উঠছে, তা পৌঁছে যাচ্ছে ছয় কিলোমিটার উঁচুতে। শেষ বার লাসকারের পূর্ণ উদ্গীরণ হয়েছিল ১৯৯৩-এ। তার পর ২০০৬ এবং ২০১৫-তেও লাসকারের জেগে ওঠার সঙ্কেত মিলেছিল। তবে সে বার পূর্ণমাত্রায় উদ্গীরণ হয়নি। কিন্তু এ বার ভাবগতিক দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, স্বমহিমায় ফিরেছে লাসকার। উদ্গীরণের জেরে এখনও পর্যন্ত বাসিন্দাদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নষ্ট হয়নি সম্পত্তি।
পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে বিজ্ঞানীরা লাসকারের সবচেয়ে নিকটবর্তী শহর তালাব্রেতে ঘাঁটি গেড়েছেন। আগ্নেয়গিরি থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে বসেই চলছে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ। এই আগ্নেয়গিরিটি সমুদ্রতল থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মিটার উঁচুতে। প্রতি বছরই এই ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি চাক্ষুষ করতে ভিড় জমান দেশ বিদেশের মানুষ। উদ্গীরণ স্থল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে স্যান পেদ্রো অ্যাটাকামাই পর্যটকদের মূল আকর্ষণের জায়গা।
তবে চিলির লাসকার প্রথম নয়, সাম্প্রতিককালে আরও অন্তত দুটি আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠার খবর পাওয়া গিয়েছে। ৩৮ বছর পর আবার জেগে উঠেছে হাওয়াইয়ের মাউনা লোয়া। এটিই বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। জেগে ওঠার পর থেকেই প্রতিনিয়ত লাভা উদ্গীরণ করে চলেছে মাউনা লোয়া। আগ্নেয়গিরিটি হাওয়াই দ্বীপের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে। ১৮৪৩ সাল থেকে এই আগ্নেয়গিরি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩ বার জেগে উঠেছে। ১৯৮৪-তে শেষ বার মাউনা লোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত হয়। এর পর দীর্ঘ ৩৮ বছর শান্ত ছিল সে। ১৮৪৩-এর পর থেকে এত দীর্ঘ সময় ধরে কখনও ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়নি মাউনা লোয়াকে। অন্য দিকে, ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশের সুমেরু পর্বতে শুরু হয়েছে অগ্ন্যুৎপাত। আশঙ্কায় অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রামবাসীদের। মাউন্ট সুমেরুর উচ্চতা ৩ হাজার ৬৭৬ মিটার। ইন্দোনেশিয়ায় সক্রিয় ১৩০টি আগ্নেয়গিরির মধ্যে এটি একটি। এখানে বার বার অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস রয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে ১৯০৯ সালের ২৯ অগস্ট। সে বার প্রায় ৮০০ হেক্টর কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে যায়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে মৃত্যু হয় অন্তত ২০০ জনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy