Know the story of real Dracula's castle in Budapest dgtl
Dracula
চলত অকথ্য অত্যাচার, ভয়ঙ্কর এই গোলকধাঁধায় বহু বছর বন্দি ছিলেন বাস্তবের কাউন্ট ড্রাকুলা
দর্শক এবং পাঠকদের মনে কাউন্ট ড্রাকুলার কাহিনি গেঁথে গিয়েছে। অবশ্য কাউন্ট ড্রাকুলা পুরোটাই লেখকের কল্পনা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ১৪:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
কিছু নাম আছে, যা শরীরে শিহরণ জাগানোর জন্য যথেষ্ট। যেমন ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। ১৮৯৭ সালে লেখা তাঁর এই বইয়ের অনুপ্রেরণায় একাধিক চলচ্চিত্র, অনুষ্ঠান, ভ্যাম্পায়ার বা রক্তপায়ীদের নিয়ে কাহিনি তৈরি হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।
০২২০
দর্শক এবং পাঠকদের মনে কাউন্ট ড্রাকুলার কাহিনি গেঁথে গিয়েছে। অবশ্য 'কাউন্ট ড্রাকুলা'-র বেশির ভাগটাই লেখকের কল্পনা।
০৩২০
তবে ব্রাম স্টোকার তাঁর উপন্যাসের চরিত্রের নামকরণ করেছিলেন বাস্তবে্র এক 'ড্রাকুলা'র নামানুসারেই। বাস্তবের কাউন্ট ড্রাকুলা কে জানেন?
০৪২০
ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার। রোমানিয়ার এক ঐতিহাসিক অঞ্চল ওয়ালাশিয়া। তারই প্রিন্স ছিলেন ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার বা তৃতীয় ভ্লাদ। এই প্রিন্সেরই আর এক নাম ছিল ড্রাকুলা।
০৫২০
যদিও ওই নামটি ছাড়া কাহিনির ড্রাকুলা এবং ওয়ালাশিয়ার প্রিন্সের আর কোনও চারিত্রিক মিল ছিল না। ইতিহাসবিদদের মতে, উপন্যাসটি লেখার আগে ওয়ালাশিয়াতে এসেছিলেন ব্রাম। সেখানেই ভ্লাদ দ্য ইম্পেলারের কথা শোনেন এবং সেখান থেকেই উপন্যাসের চরিত্রের জন্য ‘ড্রাকুলা’ শব্দটি নেন তিনি।
০৬২০
কে এই প্রিন্স? কেন তিনি 'ড্রাকুলা' হিসাবে পরিচিত ছিলেন? ব্রামের কাউন্ট ড্রাকুলা ট্রানসিলভ্যানিয়ার বাসিন্দা। সেখানে তাঁর দুর্গ দেখতে আজও পর্যটকেরা ভিড় জমান।
০৭২০
প্রিন্স তৃতীয় ভ্লাদের বাবা ছিলেন দ্বিতীয় ভ্লাদ। ১৪৩১ সালে তিনি অটোমান সাম্রাজ্য বিরোধী খ্রিস্টীয় সংগঠন ‘অর্ডার অব দ্য ড্রাগন’-এর সদস্য হন এবং 'ড্রাকুল' হিসাবে পরিচিত হন। 'ড্রাগন' থেকেই 'ড্রাকুল শব্দটি এসেছিল।
০৮২০
জানা যায়, তাঁর সন্তান তৃতীয় ভ্লাদ ছিলেন অত্যন্ত অত্যাচারী। শত্রু অটোমানদের শূলে চড়ানো দেখতে তিনি পছন্দ করতেন। রড বা এই ধরনের কোনও বস্তু দিয়ে মানুষকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফুঁড়ে দেওয়ার কৌশলকেই বলা হত ইম্পেল। সেই জন্যই তিনি পরিচিত হন 'ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার' নামে।
০৯২০
তৃতীয় ভ্লাদ সে কারণে ছিলেন ‘ড্রাকুলের সন্তান’। সংক্ষেপে, ড্রাকুলি বা ড্রাকুলা।
১০২০
ব্রাম স্টোকার তাঁর উপন্যাসে ড্রাকুলাকে রক্তপায়ী ভ্যাম্পায়ার হিসেবে দেখিয়েছেন। এটা প্রতীকী বিষয়। ভ্লাদ নিজে ছিলেন চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ। কার্পেথিয়ান গিরিপথের সন্নিহিত গ্রামাঞ্চলে ভ্যাম্পায়ার সংক্রান্ত কিংবদন্তি অনেক দিন ধরেই প্রচলিত ছিল। ভ্লাদের নিষ্ঠুরতা সেই কিংবদন্তির সঙ্গে মিশে যায়।
১১২০
১৪৪২ সালে ওয়ালাশিয়ায় অটোমান সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে। ভ্লাদের হাত থেকে সমস্ত শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। হাঙ্গেরির সঙ্গে চুক্তি করে ওয়ালাশিয়া আক্রমণ করেন দ্বিতীয় ভ্লাদিস্লাভ। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ভ্লাদের আত্মীয়। ওয়ালাশিয়ার শাসক হয়ে ওঠেন দ্বিতীয় ভ্লাদিস্লাভ।
১২২০
তৃতীয় ভ্লাদ তখন মলডাভিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেন। তত দিনে হাঙ্গেরির সঙ্গে ওয়ালাশিয়ার শাসক দ্বিতীয় ভ্লাদিস্লাভের সম্পর্কের অবনতি হয়। হাঙ্গেরির সমর্থনে ১৪৫৬ সালে ফের ওয়ালাশিয়া জয় করে নেন তৃতীয় ভ্লাদ।
১৩২০
১৪৬২ সালে অটোমান সাম্রাজ্যও আক্রমণ করেন তৃতীয় ভ্লাদ। সেই যুদ্ধ জেতার জন্য হাঙ্গেরির তৎকালীন রাজা মাথিয়াস করভিনাসের সাহায্য চান তিনি। কিন্তু করভিনাস উল্টে তাঁকেই বন্দি করেন। দ্বিতীয় ভ্লাদকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বন্দি করে রেখেছিলেন মাথিয়াস।
১৪২০
টানা ১২ বছর এক গোলকধাঁধাময় দুর্গে বন্দিজীবন কাটিয়েছিলেন তৃতীয় ভ্লাদ। সেখানে তাঁর উপর অকথ্য নির্যাতনও করা হয়েছিল।
১৫২০
সেই দুর্গও আজ 'কাউন্ট ড্রাকুলার দুর্গ' বলে পরিচিত। ট্রানসিলভ্যানিয়ার মতো ড্রাকুলার স্মৃতিবিজড়িত এই দুর্গও ঘুরে দেখতে আসেন পর্যটকেরা।
১৬২০
এই দুর্গের কোনও মানচিত্র নেই। অন্ধকার সেই গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা। দুর্গের ভিতরেই রয়েছে কারাগার। যার মধ্যে একটি ‘ড্রাকুলা কক্ষ’ নামাঙ্কিত।
১৭২০
এই কারাগারের ভিতরেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন তৃতীয় ভ্লাদ। ১৪৬৩ সাল থেকে ১৪৭৫ পর্যন্ত এখানে ছিলেন তিনি। মলডাভিয়ার রাজার অনুরোধে তাঁকে ১৪৭৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে মুক্তি পেলেও হাঙ্গেরির অনুগত হয়েই বাকি জীবন কাটাতে হচ্ছিল তাঁকে।
১৮২০
১৪৭৭ সালে হাঙ্গেরির রাজা করভিনাস তাঁকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠান। সেই যুদ্ধেই নিহত হন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তৃতীয় ভ্লাদ ছিলেন অত্যন্ত অত্যাচারী। রাজত্বকালে তিনি নাকি প্রজাদের কাছে ত্রাস ছিলেন।
১৯২০
এক দিকে তাঁর নির্মম মনোভাব এবং নিষ্ঠুরতা, তাঁকে নিয়ে রক্তপায়ীর মতো ধারণা এবং অন্য দিকে বাবার থেকে প্রাপ্ত নাম (ড্রাকুলা)। সব মিলে ব্রামের রচনার কল্যাণে বিশ্বের কাছে তিনিই হয়ে ওঠেন 'ভ্যাম্পায়ার কাউন্ট ড্রাকুলা'।
২০২০
তৃতীয় ভ্লাদকে নিয়ে লেখিকা এলিজাবেথ কস্তোভারও একটি উপন্যাস রয়েছে। মূলত ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে ড্রাকুলার গল্প শুনেই কৌতূহল জন্মেছিল তাঁর মনে। পরবর্তী কালে অন্তত ১০ বছর ভ্লাদ দ্য ইম্পেলারের উপর গবেষণা করে 'দ্য হিস্টোরিয়ান' নামের এই উপন্যাসটি লেখেন তিনি।