কিমিয়া আলিজ়াদে
সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে পাকাপাকি ভাবে দেশ ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন ইরানের একমাত্র মহিলা অলিম্পিক্স পদকজয়ী কিমিয়া আলিজ়াদে। ২১ বছরের ওই তরুণী জানিয়েছেন, এক জন মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরকারের তরফে কোনও সহযোগিতা পাননি তিনি। তাঁর অভিযোগ, ইরান কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যবহার করে এবং তাঁদের যথেচ্ছ অপমান করে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার এই ‘ভণ্ডামি’ সহ্য করতে না-পেরেই তিনি দেশত্যাগী হচ্ছেন বলে জানান কিমিয়া। গত কাল সোশ্যাল মিডিয়ায় কিমিয়া তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
২০১৬ সালের রিয়ো অলিম্পিক্সে তায়কোয়ন্দোয় ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন কিমিয়া। সে দিনের অষ্টাদশী তায়কোয়ন্দোর পোশাক পরেও ধর্মীয় প্রথা মেনে মাথা ঢেকে রিংয়ে নেমেছিলেন। তাঁর জয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি ও অন্যান্য রক্ষণশীলদের। মনে করা হয়েছিল, ২০২০ সালের টোকিয়ো অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েও ইরানের হয়ে পদক আনতে পারেন এই তরুণী। যদিও সে সম্ভাবনা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।
‘‘কী ভাবে শুরু করব? হ্যালো বলব, বিদায় বলব, না দুঃখপ্রকাশ করব?’’— গত কাল ইনস্টাগ্রামে কিমিয়ার বক্তব্য শুরু হয় এ ভাবেই। তিনি জানান, তায়কোয়ন্দো, নিরাপত্তা এবং সুস্থ, আনন্দময় জীবন ছাড়া আর কিছুই চাননি তিনি। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমি এ দেশের সেই হাজার হাজার মেয়ের এক জন, যাদের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে খেলে চলেছে সরকার। মিথ্যা, ভণ্ডামি, অবিচার ও স্তাবকতার টেবিলে আর বসতে চাইনা আমি।’’ ইরানের ‘সুনামি’-র দাবি, দেশ তাঁর মেডেল নিয়ে মাতামাতি করলেও তিনি যে খেলাটি বেছেছেন তার জন্য সমালোচনা শুনতে হয়েছে। অভিমান করে কিমিয়া লিখেছেন, ‘‘আমি ওঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নই। আমরা কেউই গুরুত্বপূর্ণ নই। আমরা সবাই আসলে যন্ত্র।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা যেখানে চেয়েছেন, আমায় নিয়ে গিয়েছেন। যা বলেছেন, আমি পরেছি। যা যা বলার নির্দেশ দিয়েছেন, অক্ষরে অক্ষরে তা মেনেছি।’’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মনে করছে, কিমিয়া নেদারল্যান্ডসে চলে গিয়েছেন। সেখান থেকেই টোকিয়ো অলিম্পিক্সে অংশ নেবেন। তবে তিনি ইরানের হয়ে আর খেলবেন না।
শুক্রবার ইরানের তায়কোয়ন্দো ফেডারেশনের শীর্ষকর্তা সৈয়দ মহম্মদ জানিয়েছিলেন, কিমিয়া তাঁর বাবা ও কোচকে জানিয়েই নেদারল্যান্ডস গিয়েছেন। এবং এই সফর ইরান সরকারের অর্থেই। তাঁর মতে, রাজনৈতিক স্বার্থে কিমিয়ার দেশ ছাড়ার খবর রটাচ্ছে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি। যদিও তার পর দিনই এই ‘রটনা’কে সত্য প্রমাণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন কিমিয়া। জানান, তিনি ইরান সরকারের ‘দুর্নীতি ও মিথ্যের’ সহযোগী হতে পারবেন না। তাই দেশ ছাড়ছেন। তবে ‘‘পৃথিবীর যেখানেই থাকুন, তিনি ইরানের মেয়েই হয়ে থাকবেন।’’
কিমিয়ার এই ঘোষণার পরে অনেকেই তাঁর সঙ্গে সে দেশের এক দাবা খেলোয়াড় আলিরেজ়া ফিরোজ়জার তুলনা টানছেন। ১৪ বছরে গ্রান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়া এই স্টারও এখন ফ্রান্সের বাসিন্দা।
গত বছর আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিয়ে দেয় ইরানকে। কারণ, তেহরান ঘোষণা করেছিল, ইজ়রায়েলি প্রতিপক্ষের সঙ্গে ইরানের খেলোয়াড়দের লড়া চলবে না। সেই সময়ে সৈয়দ মোল্লাঈ নামে ইরানের এক জুডো তারকা জানিয়েছিলেন, টোকিয়োয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁকে ইচ্ছাকৃত ভাবে হেরে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল সরকার। যাতে ইজ়ারায়েলি প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে না-হয়। এই স্বীকারোক্তির পরেই ভয়ে বার্লিনে পালিয়ে যান তিনি। নভেম্বরে তাঁকে আশ্রয় দেয় জার্মানি। সেখান থেকেই ২০২০-র অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy