Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পর পর করোনায় মৃতদের শেষকৃত্য করে নিজেই আক্রান্ত কাউন্সিলর

গত তিন মাস তিনি এই কাজের জন্য থাকছিলেন বড়ির বাইরে।

করোনায় মৃতদের শেষকৃত্যে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। নিজস্ব চিত্র।

করোনায় মৃতদের শেষকৃত্যে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ১৯:১৬
Share: Save:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রয়াতদের মরদেহ সৎকারে তিনি ধর্ম বা অন্য পরিচয়ের দিকে না তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের ৬১ জনের শেষকৃত্য করে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।

গত তিন মাস তিনি এই কাজের জন্য থাকছিলেন বড়ির বাইরে। স্থানীয় কাউন্সিলর খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে নিজের ওয়ার্ড তো বটেই, অন্যত্রও করোনাভাইরাসে মৃতদের শেষকৃত্যে এগিয়ে গিয়েছেন। মৃতের আত্মীয়েরা এগিয়ে না এলে খোরশেদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকের দল সৎকারের কাজ করে গিয়েছেন।

এক আগে ২৪ মে খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকারও আক্রান্ত হয়েছেন। তখন খোরশেদ ও তাঁর তিন সন্তানের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। সেই থেকেই আফরোজা বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

খোরশেদ বাংলাদেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সেবা, বিশেষ করে সৎকারের বিষয়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে একটি দল গড়ে তুলে সারা দেশেই বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। করোনা সংক্রমণের খবর জানার পরে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলছে প্রার্থনা। খোরশেদ ঢাকার পাশের সিটি কর্পোরেশন নারায়ণগঞ্জ সিটির সেই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় মৃত ও আক্রান্তে রেকর্ড বাংলাদেশে, সংক্রমিত ২৫৪৫ জন, মৃ্ত ৪০

মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মৃত্যু হয় ২৯ মার্চ। এর পর নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। সংখ্যা বাড়তে শুরু করে মৃতেরও। প্রায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের ঘটনা ঘটছে। আর এসব মৃত্যুর ভয়াবহ দিক হচ্ছে আত্মীয়স্বজন-সহ কেউ মৃতদেহের কাছে ঘেঁষতে চান না। সেই দেহগুলোর সৎকারের ক্ষেত্রে খোরশেদ হয়ে উঠেছেন দৃষ্টান্ত। হিন্দু বা মুসলিম ভেদ নয়, প্রতিটি মরদেহ সৎকার বা দাফনে তিনি ছুটে গিয়েছেন।

গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজের বাড়ির সিঁড়িতেই মারা যান নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী খোকন সাহা। তিনি একটি বাড়ির চতুর্থ তলায় বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। বেশ কয়েকদিন যাবৎ তিনি অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যেই অবস্থা গুরুতর হয় তার। হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য ফোন করে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকেন স্ত্রী তৃষা সাহা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। বাধ্য হয়ে শাশুড়ির সহযোগিতায় তিনি নিজেই স্বামীকে নিয়ে সিঁড়িতে নামতে থাকেন। কিন্তু অসুস্থ শরীর সিঁড়ি ভেঙে নামার ধকল নিতে পারেনি। তিন তলায় নামার পরই তিনি শরীর ছেড়ে দেন।

খোকন সাহার স্ত্রী তৃষা সাহা তখন জানিয়েছিলেন– তিন তলার ভাড়াটিয়ার কাছে আমার মেয়ে জল চাইলে ধমক দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় সেই ভাড়াটিয়া। সিঁড়িতে যখন খোকন সাহা ছটফট করছিলেন তখন সন্তানের এমন অবস্থা দেখে বৃদ্ধা মা দৌড়ে চার তালায় গিয়ে জল নিয়ে আসেন ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য। মুখে সামান্য জল দেওয়া মাত্র সেখানেই প্রাণ যায় খোকন সাহার। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানেই পড়ে ছিলেন। আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে তার আত্মীয়রা ফোন করেন কাউন্সিলর খোরশেদকে। তখন খোরশেদ মাসদাইর কবরস্থানে করোনায় মৃত এক ব্যক্তির শেষকৃত্যে ব্যস্ত ছিলেন। সেই আত্মীয়ের কাছে তিনি অনুরোধ করেন যাতে তারা ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তার অনুরোধেও কেউ এগিয়ে আসেননি। কয়েক ঘণ্টা পর আবার ফোন করা হলে কাউন্সিলর খোরশেদ তার স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে ছুটে যান মৃতের সৎকারে। নিজেদের গাড়ি দিয়ে শ্মশান পর্যন্ত নিয়ে যান দেহ। আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কেউ এগিয়ে না আসায় মুখাগ্নির দায়িত্বও পড়ে খোরশেদের কাঁধে। তিনি সেই দায়িত্বও পালন করেন।

১৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ইউনানি চিকিৎসক কৈলাস বণিক করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তারও মুখাগ্নি করার জন্য কোনো আত্মীয় ছিল না সেই কাজও করেন খোরশেদ।

সেই সময়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেছিলেন, “যখন দেখলাম করোনায় আক্রান্ত হলে স্বজনরা মৃতদেহের কাছে যেতে চান না। মানবিক দিক বিবেচনা করে এটা আমার মাথায় এসেছে। আসলে মানুষের বিপদের দিনেই পাশে থাকা জরুরি। এখনই মানুষের সব থেকে বড় বিপদ চলছে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য আমি এ কাজে এসেছি। আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy