ফাইল চিত্র।
চওড়া হাসিটা আরোপিত, কিন্তু খুব চেনা। বেশ পরিচিত বিষণ্ণ চোখ দু’টিও। হলিউডের চিত্রপরিচালক টড ফিলিপ্সের নতুন ছবি জোকারের নামভূমিকায় ওয়াকিন ফিনিক্সের এই ‘মুখোশ’ই এখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদী মানুষের ‘মুখ’।
চিলি থেকে লেবানন, হংকং থেকে ইরাক, গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন বিক্ষোভে উত্তাল নানা দেশ। কোথাও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, কোথাও বা আবার স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন দেশের নাগরিক। এবং বিভিন্ন জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে মুখোশ পরে বা মুখে রং মেখে জোকারের মতো সেজেছেন বিক্ষোভকারীরা। কোথাও কোথাও তাঁদের হাতের প্ল্যাকার্ডে দেখা গিয়েছে জোকারের মুখ, কোথাও বা দেওয়াল-লিখনে। বেরুটে বিক্ষোভ সমাবেশের ময়দানে রং-তুলি নিয়ে বসে পড়েছিলেন অনেকে। যে কেউ চাইলেই জোকারের মুখ এঁকে দিচ্ছিলেন তাঁরা। লন্ডনে ব্রেক্সিট-বিরোধী মিছিলে আবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ছবিতে জোকারের মুখ ফটোশপ করে বসিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
টড ফিলিপ্সের ছবির চরিত্র নিয়ে কেন এত উচ্ছ্বসিত বিক্ষোভকারীরা?
উত্তরটা প্রাথমিক ভাবে লুকিয়ে আছে এই ছবির জোকারের চরিত্রে। চিত্র সমালোচকেরা বলছেন, ডিসি কমিক্সের তৈরি করা ব্যাটম্যান সিরিজ়ের খলনায়ক জোকারের থেকে অনেকটাই আলাদা টড ফিলিপ্সের আর্থার চরিত্রটি। এই ছবিতে জোকার বিপ্লবের প্রতীক। তাচ্ছিল্যের প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের স্বর হয়ে ওঠে সে। শহর জ্বলছে, কিন্তু শহরের মেয়র অবিচল ভাবে সিনেমা হলে বসে রয়েছেন— প্রশাসনের এই চরম গা-ছাড়া ভাবের প্রতিবাদেই আর্থারের ‘জোকার’ হয়ে ওঠা।
সিনেমার পর্দার এই ‘অসন্তোষ’-এর সঙ্গে নিজেদের না-পাওয়াকে মিলিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের বিক্ষোভকারীরা। ইতিহাসববিদ উইলিয়াম ব্লঁ-র কথায়, ‘‘অনমনীয় রাজনৈতিক কাঠামো এবং এক দল নেতা যাঁরা কারও
কথায় কান দেন না— এই দুইয়ের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে জোকারের মুখ। জোকারের কথাও তো কেউ কান দিত না। তার প্রতিবাদ ছিল এই সামাজিক অবহেলার বিরুদ্ধেই। তেমনই বিভিন্ন দেশের বিক্ষোভকারীরাও মনে করছেন, তাঁদের অসংখ্য অভাব-অভিযোগ-আপত্তি সম্পর্কে শোনার কেউ নেই। তাই বিক্ষোভের ময়দানে জোকারের সাজে নিজেদের সাজিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা।’’
সিনেমার জনপ্রিয় চরিত্রের মুখোশ পরে প্রতিবাদ দেখানো অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয়। ষোড়শ শতকের ব্রিটিশ নৈরাজ্যবাদী তথা বিপ্লবী গাই ফকসের আদলে তৈরি মুখোশ জনপ্রিয় করেছিল ২০০৫ সালের ‘ভি ফর ভেনডেটা’ ছবিটি। ছবিতে ব্যবহৃত ‘ভি’ মুখোশ পরে ইউরোপের নানা জায়গায় বহু বার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রতিবাদের সেই ঘরানাতেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে সদ্য মুক্তি পাওয়া জোকার। ছবিতে তার সংলাপ— ‘আই জাস্ট ডোন্ট ওয়ান্ট টু ফিল সো ব্যাড এনিমোর’ তো এক বঞ্চিত সাধারণ মানুষেরই আর্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy