আগে-পরে: পেন্টাগনের প্রকাশ করা সেই ছবি। দেখানো হয়েছে ইদলিব প্রদেশের বারিশা।
দলের শীর্ষ নেতা আল বাগদাদির মৃত্যুর চার দিন পরে অবশেষে মুখ খুলে সেই খবরের সত্যতা স্বীকার করল জঙ্গি সংগঠন আইএস। একই সঙ্গে সংগঠনের নতুন নেতার নামও ঘোষণা করেছে তারা। আইএসের নতুন মুখপাত্র আবু হামজা আল কুরেশি আজ এক অডিয়ো বার্তায় আল বাগদাদির মৃত্যুর খবর স্বীকার করে জানিয়েছে, সংগঠনের ভার এখন জঙ্গি নেতা আবু ইব্রাহিম আল হাসিমি আল কুরেশির হাতে। আল বাগদাদির পরে আইএসের শীর্ষ নেতার দায়িত্বে কে আসতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল গত ক’দিন ধরেই।
গত শনিবার রাতে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বারিশায় মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় মৃত্যু হয় আইএসের প্রতিষ্ঠাতা তথা শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির। পরের দিন রবিবার সেই অভিযান এবং আল বাগদাদির মৃত্যুর খবর জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ দিন আকাশ থেকে তোলা সে দিনের অভিযানের সাদা-কালো কয়েকটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করেছে পেন্টাগন। ইদলিব প্রদেশের বারিশার উঁচু পাঁচিলে ঘেরা আল বাগদাদির ডেরায় সেই অভিযানের ভিডিয়ো নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠতেও সময় লাগেনি।
আল-বাগদাদির বিকল্প কে হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল গত ক’দিন ধরেই। মার্কিন সরকারের সন্ত্রাস-বিরোধী শাখার বিশেষজ্ঞ রাস ট্রাভার্স জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে খুব বেশি দেরি করবে না জঙ্গি সংগঠনটি। আজ পেন্টাগনের ভিডিয়ো প্রকাশ করে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের মেরিন কোর জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, ‘‘আইএস এখনও যথেষ্ট বিপজ্জনক। আইএস বরাবরই একটা মতাদর্শ। এক জন নেতাকে মেরে ফেলার পরেই সে মতাদর্শ উধাও হয়ে যাবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং ওরা বড়সড় প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরি হবে। আমরা সেটা ভেবেই প্রস্তুত থাকছি।’’
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশ করা ভিডিয়ো ফুটেজের একটিতে দেখা গিয়েছে, আল বাগদাদির ডেরার দিকে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে মার্কিন বাহিনী। আর একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ওই এলাকাতেই অজ্ঞাতপরিচয় কিছু লোক মাটিতে দাঁড়িয়ে গুলি ছুড়ছে আকাশে চক্কর কাটতে থাকা মার্কিন হেলিকপ্টারগুলো তাক করে। এর কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায়, উপর থেকে ওই বাগদাদির ডেরা এবং লাগোয়া এলাকা লক্ষ্য করে ফেলা হচ্ছে একের পর এক বোমা। এক সময় আগুনও ধরে যায় ডেরাটিতে। এর পরের ভিডিয়োয় ওই এলাকায় অভিযানের আগের এবং পরের অবস্থার ছবি দেখা গিয়েছে। অভিযানের ধাক্কায় গোটা চত্বরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ম্যাকেঞ্জির কথায়, ‘‘এলাকাটা এখন বড় বড় গর্তওয়ালা পার্কিং লটের মতো দেখাচ্ছে।’’
অভিযান সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য এ দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি। আল-বাগদাদির দুই সন্তান অভিযানে মারা গিয়েছে বলে তাঁর দাবি। যদিও প্রাথমিক ভাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, আল-বাগদাদি যখন নিজের আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টেপেন, তখন তিনটি শিশু মারা গিয়েছিল। ম্যাকেঞ্জি আরও বলেছেন, শিশু দু’টির বয়স ১২-র নীচে এবং আল-বাগদাদির সঙ্গে ছিলেন চার মহিলা ও এক জন পুরুষ। এঁরা সকলেই প্রাণ হারিয়েছেন।
ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আইএস নেতা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে সুড়ঙ্গে সেঁধিয়ে যান। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘‘নিজের ছোট দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে গর্তে ঢুকে যান আল-বাগদাদি। তার পরেই উড়িয়ে দেন নিজেকে। তাঁর লোকজন তখনও মাটিতে দাঁড়িয়ে।’’ ম্যাকেঞ্জির বক্তব্য, ‘‘শেষ বেলায় উনি নিজের সুড়ঙ্গ থেকে গুলিও চালিয়ে থাকতে পারেন।’’ আল-বাগদাদির সঙ্গে থাকা মহিলারাও আত্মঘাতী জ্যাকেট পরেছিলেন এবং তাঁরা মার্কিন বিশেষ বাহিনীকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি ম্যাকেঞ্জির। ওই সময়ে কাছাকাছি থাকা আরও অনেক অজ্ঞাতপরিচয় জঙ্গি প্রাণ হারিয়েছে। এরাই মার্কিন বাহিনীর হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এদের উপরে হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা বোমার আঘাতের ছবিও দেখিয়েছে পেন্টাগন। বাগদাদির ডেরার দিকে বিশেষ বাহিনীর এগিয়ে যাওয়া বা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে উপর থেকে বোমা হামলার ছবি দেখালেও বাগদাদির পলায়ন, বা আত্মঘাতী জ্যাকেট বিস্ফোরণের সময়কার কোনও ছবি দেখা যায়নি এ দিন। পুরো ভিডিয়ো প্রকাশ না করায় অনেকেই বলছেন, সেগুলো কোথায়? পেন্টাগনের হাতে সেই সময়কার ছবি-ভিডিয়ো না থাকলে অভিযানে মার্কিন বাহিনীর কৃতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy