অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন (বাঁ দিকে) এবং এস জয়শঙ্কর। ছবি: এএফপি।
আমেরিকা সফরে গিয়ে সে দেশের বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভানের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময়) ওয়াশিংটনে ওই জোড়া বৈঠকে খলিস্তানি নেতা খুন নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রসঙ্গ এসেছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর। যদিও সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত জুন মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা ছিল বলে কানাডার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। কানাডার তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বিষয়ে আরও বিশদে তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও কথা হয়েছে।
ট্রুডোর ওই বিবৃতির পরে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ‘‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’’ এই পরিস্থিতিতে ট্রুডো-বিতর্ক নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা করছিলেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ঘটনাচক্রে, ট্রুডোর অভিযোগের পরেই কানাডার এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি জানান, ওই ব্যক্তি ‘র’-এর কানাডার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাতেন। ওই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পরের মঙ্গলবার মোদী সরকার কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে দিল্লি ছাড়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, নিজ্জর খুনের ঘটনায় দায় অস্বীকার করে ভারত।
নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলন চলাকালীন কানাডার কাঁটা আংশিক ভাবে হলেও বিদ্ধ করেছে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলেননি জয়শঙ্কর এবং ব্লিঙ্কেন। দু’দেশের বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকেরাও আলোচ্যসূচি নিয়ে বৈঠকের আগে মুখে কুলুপ আঁটেন। বৈঠকের পরে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে জয়শঙ্কর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, “এই গ্রীষ্মে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখানে ছিলেন। জি২০ সম্মেলনে আমেরিকা যে ভাবে সমর্থন করেছে সে জন্য ধন্যবাদ।”
অন্য দিকে, জয়শঙ্কর-ব্লিঙ্কেন বৈঠকের আগে আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, “একটি বিষয় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছি, (হরদীপ সিংহ) নিজ্জরের হত্যায় কানাডার তদন্তে সহায়তা করতে আমেরিকা ভারতকে উৎসাহিত করেছে।” এ ক্ষেত্রে ‘বিশেষ কৌশলগত মিত্র’ বলে ভারতকে কানাডা-প্রশ্নে ছাড় দিতে আমেরিকা নারাজ বলেই মনে করা হচ্ছিল। যদিও চলতি সপ্তাহেই নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “কেউ যদি কোনও প্রাসঙ্গিক নথি বা তথ্য দেয়, তা হলে সব সময়েই তা তদন্ত করে দেখতে রাজি।’’ পাশাপাশি নিজ্জর হত্যা নিয়ে ট্রুডোর অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন’ বলেন তিনি। জয়শঙ্কর-ব্লিঙ্কেন বৈঠক শেষে কানাডা প্রসঙ্গ উহ্য রেখে ম্যাথু বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা এবং দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সালিভানের সঙ্গে বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে কানাডায় পরিকল্পিত অপরাধের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ, উগ্রপন্থার কারণেই এই অপরাধ এবং হিংসা। কানাডা থেকে কী কী অসামাজিক কার্যকলাপ চলে তা জানিয়ে জঙ্গি নেতাদের চিহ্নিত করে প্রত্যর্পণ করতেও আবেদন জানানো হয়েছে।’’ জয়শঙ্কর অবশ্য এই বৈঠকের পরে তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কানাডা প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি। শুধু লিখেছেন, ‘‘ওয়াশিংটন সফর শুরু হল আমেরিকার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভানের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রবল সম্ভাবনার দিকটি খতিয়ে দেখে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, ট্রুডোর অভিযোগ নিয়ে ভারতকে প্রথম আমেরিকার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন সালিভান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy