Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

পাক প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে ভারতের কৌশল ছিল উপেক্ষারই

এই কৌশলের প্রধান রূপকার হিসেবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ছাড়াও দুই পোড় খাওয়া কূটনীতিকের নাম উঠে এসেছে।

ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

অগ্নি রায়
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তান যে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তীব্র ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করবে — সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা ছিল ভারতের। আর সে কারণেই এই নিয়ে মুখে মুখ লাগিয়ে ঝগড়ার মধ্যে না গিয়ে বরং উপেক্ষা করেই ইসলামাবাদকে নিউ ইয়র্কের ময়দানে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোণঠাসা ও গুরুত্বহীন করে দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এক সপ্তাহের মার্কিন সফরের শেষে এমনটাই জানাচ্ছেন এখানকার কূটনৈতিক কর্তারা।

এই কৌশলের প্রধান রূপকার হিসেবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ছাড়াও দুই পোড় খাওয়া কূটনীতিকের নাম উঠে এসেছে। একজন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী দূত মহম্মদ আকবরউদ্দিন। যিনি কয়েক সপ্তাহ আগেও কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পাক আক্রমণকে ভোঁতা করে দিয়েছিলেন। অন্য জন, আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন স্রিংলা। প্রধানমন্ত্রী যখন যেখানে গিয়েছেন, তাঁর ছায়াসঙ্গী হিসেবে স্রিংলাকে দেখা গিয়েছে সর্বদা।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রায় কাছাকাছি সময়েই পা দিয়েছেন নিউ ইয়র্কে। কিন্তু গোড়াতেই কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের আসরে নেমেছেন মোদী, মত বিশেষজ্ঞদের। হিউস্টনের বিরাট জনসভা এবং সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি, মোদীর নিউ ইয়র্ক-এর মঞ্চকে উঁচু তারে বেঁধে দিয়েছে। ইমরান যখন ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে ডেরা বেঁধে প্রায় প্রতিদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে তুলোধোনা করেছেন ভারতকে, সে সময় একের পর এক দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক দৌত্য চালিয়ে গিয়েছেন মোদী। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, “ইমরান খান যেটা ভুল করেছেন, তা হল, আগেই কাশ্মীর নিয়ে একই কথা বারবার বলে পরিস্থিতি কিছুটা গুরুত্বহীন করে ফেলেছিলেন। ফলে পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তৃতায় যা বলেছেন, তাতে বিদ্বেষ থাকলেও তার মধ্যে নতুনত্ব কিছু থাকেনি। একই কথা, যা তিনি গত চার দিন ধরে হোটেলে বসে সাংবাদিকদের বলে চলেছেন, তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন মাত্র।”

রাজনৈতিক সূত্র মনে করছে, এর একেবারেই উল্টো পথে হেঁটে ভারতের স্বতন্ত্র ভাবমূর্তিকে তুলে ধরেছেন মোদী। স্থির হয়, বক্তৃতায় পাকিস্তানের নাম পর্যন্ত না করে তাকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হবে। বরং বিশ্বের নজরে আনা হবে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রকল্পের কখা। প্রধানমন্ত্রী এবং জয়শঙ্কর মিলে প্রায় ৭০টি দেশের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে বৈঠক করেছেন, যা ভারতীয় কূটনীতিতে সর্বকালীন রেকর্ড। এ ছাড়া যোগ দিয়েছেন উষ্ণায়ন থেকে শক্তিক্ষেত্র সম্মেলনে, গাঁধীকে নিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বিল গেটসের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও। রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্ততা শুরু করেছেন গাঁধীর ১৫০ বছর পূর্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে। সূত্রের মতে, নেহরুর নাম উল্লেখ না করলেও নেহরু ও গাঁধীর পরম্পরায় নিজেকে বিশ্ববাসীর সামনে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন মোদী। ক্যারিবিয়ান দেশগুলি থেকে ভারত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় দেশ, ইউরোপ থেকে আফ্রিকা— সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বহুপাক্ষিক মৈত্রী ও সম্প্রীতির ভিত শক্ত করেছেন। মোদীর কথায়, “বিশ্বের স্বরূপ বদলেছে। একুশ শতকের সমাজ, প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, যোগাযোগ— সব বদলেছে। পরিবর্তিত বিশ্বে কেউই বিভাজনের রাজনীতি পছন্দ করে না।” নাম না করে বুঝিয়েছেন,

পাকিস্তান যা করছে তা যুগোপযোগী নয়। পরে মোদীর বক্তব্যের রেশ ধরে রাইট টু রিপ্লাই-এ ইমরানের মানসিকতাকে ‘মধ্যযুগীয়’ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি দলের ফার্স্ট অফিসার বিদিশা মৈত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy