Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
USA

সম্পর্কে বাঁধনের খোঁজ বাইডেনের অভিষেকে

কূটনীতিকদের একাংশের মতে, সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে দু’টি বিষয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আমেরিকার ৪৬তম রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন।

আমেরিকার ৪৬তম রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩০
Share: Save:

আমেরিকার ৪৬তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জো বাইডেন শপথ নেওয়ার পরেই ওই দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কক্ষপথ আমূল বদলে যাওয়ার আশা করছে না কূটনৈতিক শিবির। বরং সাউথ ব্লকের ধারণা, হোয়াইট হাউসে পা রাখা নতুন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর প্রশাসন পাকিস্তান, চিন, রাশিয়া, ইরানের মতো দেশগুলির বিষয়ে কী অবস্থান নিচ্ছে, ভারতের জাতীয় স্বার্থ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেকখানি নির্ভর করবে তার উপরেও। আগামী কয়েক মাসে এই ছবি ক্রমশ স্পষ্ট হবে বলে আশাবাদী তারা।

কূটনীতিকদের একাংশের মতে, সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে দু’টি বিষয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অথচ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই দুই বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান ছিল বিপরীত মেরুর। তাঁর সময়ে দু’দেশের বাণিজ্যনীতি ঘিরে সংঘাত তীব্রতর হয়েছে। বাণিজ্য-চুক্তি নিয়ে শেষ দু’বছরে মতানৈক্য বেড়েছে। অনেক সময়ে সেই সূত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করতেও পিছপা হননি ট্রাম্প। অথচ সেই ‘দুস্তর ব্যবধান’ সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর হয়েছে আগের তুলনায় বেশি। অনেকেই মনে করেন, কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদে ট্রাম্প-প্রশাসন সে ভাবে মুখ খুললে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক আঙিনায় অনেক বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ত মোদী সরকার।

এখন বাইডেন-জমানাতেও আলোচনার পুরোভাগে থাকবে এই দুই বিষয়ই। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, এক দিকে, বাণিজ্য-চুক্তির বাধাগুলিকে সামনে এনে দ্রুত আমেরিকার সঙ্গে কথা শুরু করা হবে। অন্য দিকে, নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কৌশলগত স্তরে যে সাফল্য ট্রাম্পের আমলে ঘরে এসেছে, তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সক্রিয় হবে দিল্লি।

আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রণেন সেন বলেন, “ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে কাজ করার সময়ে বাইডেনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। একটা সময়ে কথা হত প্রায় প্রত্যেক দিন। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, উনি কোনও ক্ষেত্রে সংঘাত তৈরিতে বিশ্বাসী নন। বরং প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম মেনে, কেতাবি ধাঁচে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ। কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলার পক্ষপাতী। আমার ধারণা, ট্রাম্পের সময়ে অভিবাসন নীতিতে যে কাটছাঁট করা হয়েছে, সামান্য কিছুটা হলেও তাতে পরিবর্তন আসবে।’’

রাশিয়া, ইরান ও চিনের উপরে ট্রাম্পের চাপানো নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাইডেন কী করেন, সে দিকেও সাগ্রহে তাকিয়ে দিল্লি। রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র এবং ইরান থেকে তেল আমদানির সঙ্গে ভারতের ভবিষ্যৎ নীতি জড়িত। তবে আফগানিস্তান, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি মাথায় রেখে বাইডেন-প্রশাসন ভারতকে একই রকম গুরুত্ব দেবে বলে ধারণা অনেক কূটনীতিকের।

ট্রাম্পের সময়ে ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের বিনিয়োগ এবং পরিচালনার বিষয়টিকে যে ভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, বাইডেনের বেলাতেও তার অন্যথা হবে না বলে দিল্লির আশা। আফগানিস্তান পুনর্গঠনে যে ভারতের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সে কথা স্বীকার করে আমেরিকা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, বাইডেনের আমেরিকা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নিজেদের নাক গলানো এবং সেই সূত্রে ব্যয়ভার কমানোর পথে যত হাঁটবে, তত বাড়বে ভারতের মতো দেশের উপরে তাদের কৌশলগত নির্ভরতা। দক্ষিণ তথা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় কৌশলগত ক্ষেত্রে দায় ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রটি যত প্রসারিত হবে, তত মজবুত হবে দু’দেশের সামরিক সমঝোতাও। শুধু তা-ই নয়, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়াও সে ক্ষেত্রে ট্রাম্প জমানার তুলনায় আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে মত সাউথ ব্লকের কর্তাদের।

আজ থেকে বিদেশ মন্ত্রকের চোখ ‘অব কি বার, বাইডেন সরকার’-এ।

অন্য বিষয়গুলি:

USA Joe Biden Kamala Harris
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy