সেনাপ্রধান নরবণের মন্তব্যে টানাপড়েন।
লাদাখ সীমান্তে চিনের সঙ্গে ভারতের সঙ্ঘাত পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তার মধ্যেই দীর্ঘদিনের বন্ধু নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও কালো মেঘ ঘনিয়ে এল। ভারতীয় সেনাপ্রধান এমএম নরবণের একটি মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ গিরিপথের সঙ্গে মানস সরোবরের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলতে সড়কপথের উদ্বোধন করেছে ভারত। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে নেপাল। চিনের মদতেই নেপাল এমন আচরণ করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন নরবণে। তাঁর সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই এ বার ভারতকে বিঁধলেন সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তথা উপ প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখরেল। এমন মন্তব্য করে ভারতীয় সেনাপ্রধান নেপালের গোর্খা সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত হেনেছেন বলে দাবি করলেন তিনি।
ঈশ্বর পোখরেলের কথায়, ‘‘নেপালের ইতিহাস, সামাজিক বৈশিষ্ট্য এবং স্বাধীনতা, সবকিছুকে উপেক্ষা করে এমন মন্তব্য করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অপমানজনক। এমন মন্তব্য করে নেপালের গোর্খা সম্প্রদায়ের জওয়ানদের আবেগেও আঘাত হেনেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান, ভারতের নিরাপত্তার জন্য যাঁরা প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দেন।’’ এই মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমপক্ষে ৪০টি গোর্খা ব্যাটালিয়ন রয়েছে। তার মধ্যে নেপাল থেকে আসা জওয়ানের সংখ্যাই প্রায় ৩০ হাজার। নরবণের মন্তব্যের গোর্খা বাহিনীতে শামিল থাকা তাঁদের পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াবে বলেও দাবি করেন পোখরেল।
শুধু তাই নয়, সেনাপ্রধান হিসেবে নরবণের পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ঈশ্বর পোখরেল। এক জন সেনাপ্রধানের এই ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করার এক্তিয়ার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পোখরেল বলেন, ‘‘সেনাপ্রধান হিসেবে এই ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য কি আদৌ পেশাদারিত্বের পরিচয়? আমাদের এখানে এমন হয় না। নেপালি সেনা কখনও এই ধরনের বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে না।’’ ভারতকে বন্ধু দেশ বলে উল্লেখ করলেও, যে সমস্ত এলাকা নেপালের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনা চালিয়ে, তা পুনরুদ্ধার করতে হবে বলেও জানান পোখরেল।
আরও পড়ুন: গালওয়ানে সেনা তৎপরতা চিনের, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধ পরিস্থিতি
উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ গিরিপথের সঙ্গে মানস সরোবরের যোগাযোগ গড়ে তুলতে গত ৮মে একটি নতুন সড়ক পথের উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় কাঠমান্ডু। এমনকি নয়া একটি মানচিত্র প্রকাশ করে লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরাকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দেখায়। বলা হয়, ১৮১৬-র ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ওই তিন এলাকা-সহ মহাকালী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত বাকি এলাকাও তাদের। নেপালের এই দাবি ইতিমধ্যেই খারিজ করেছে ভারত। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নেপাল একতরফা ভাবে ইতিহাসের তথ্যপ্রমাণের পরিপন্থী এই মানচিত্র বানিয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার বিরোধী।
আরও পড়ুন: করোনা-রোগীদের উপর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ বন্ধ করল হু
তবে এর পরেও হাল ছাড়তে নারাজ নেপাল সরকার। বরং দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি জানিয়ে দেন, লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরা, এই তিনটি এলাকাই নেপালের ভূখণ্ডের অংশ। যে কোনও মূল্যে সেখানে নেপালের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন তিনি। চিনের সঙ্গেও নতুন করে সখ্য বাড়ানোয় উদ্যোগী হয়েছে তাঁর সরকার। ২০১৯-এর অক্টোবরে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সফর চলাকালীন দু’দেশের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেই অনুযায়ী সোমবার থেকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। তিব্বতের শিগাজি হয়ে নেপালে পণ্য ঢুকতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy