‘ঢাকাইয়া গালিবয়’ রানা। ছবি ইউটিউব ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
বছর দশেকের রানা মৃধা। থাকে ঢাকা শহরের কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকার আট নম্বর গলিতে। সম্প্রতি তার গাওয়া র্যাপ-ভিডিয়ো চমকে দিয়েছে দু’বাংলার মানুষকেই। শহর-বন্দরের গলি, ফুটপাতে থাকা তার মতো হাজার হাজার ‘রানা’র জীবনকথা, চাওয়া, না-পাওয়া, বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে ‘গালি বয়’ ভিডিয়োতে। ওই র্যাপ-ভিডিয়োর হাত ধরেই রসুলপুরের ৮ নম্বর গলির স্বর পৌঁছে গিয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে।
‘গালি বয়’ ভাইরাল হতেই রানা এখন পাচ্ছে তারকার মান। শনিবার ঢাকা থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে রানা বলেছে, ‘‘আগে লোকের কাছে টাকা চাইলে কইত, কাজ কইর্যা খাইতে পারস না? ইস্কুলে যাও না?’’ আর এখন? সেই লোকজনই রানাকে ডাকে, ‘‘গালি বয়!’’ রাস্তাঘাটে তার সঙ্গে সেলফি তোলার আবদারও আসছে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুল বিক্রি করার কাজটাও আপাতত আর করতে হচ্ছে না।
ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বুড়িগঙ্গা। তার পাড় ঘেঁষে থাকা কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকায় মূলত দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের বাস। সেখানকার বাবা-মায়েরা সকাল হলেই চলে যান লোকের বাড়ি কাজ করতে বা দিন মজুরি খাটতে। তাঁদের ছেলেমেয়েরা তাই দিনের অধিকাংশ সময়ই ঘুরে বেড়ায় শহরের এ গলি থেকে ও গলি। ধূপকাঠি বা মালা বিক্রি করতেও বেরিয়ে পড়ে কেউ কেউ। ক্লাসরুমের অভিজ্ঞতা ওদের অনেকের জীবনেই আসে না। যাদের আসে, তাদেরও সে সুযোগ বেশি দিন টেকে না।
এ রকম পরিবেশেই বড় হচ্ছে রানা। একা নয়, রানার মতো হাজার হাজার ‘গালিবয়’। রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ফুল বিক্রি করত। ছোট্ট রানার বাবা থেকেও নেই। ভাইবোনদের নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকে সে। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরবি সাহিত্যের ছাত্র মাহমুদ হাসান তবীব। ফুল বিক্রি করতে করতে রানা তাঁর কাছে ছুটে গিয়ে বাইক চড়ার আবদার করে। তবীবও ফেরাননি। রানাকে বসিয়ে নিয়েছিলেন বাইকে। তারপর যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তুই গান গাইতে পারিস?” বাইকে বসেই রানা সে দিন তবীবকে শুনিয়েছিল একটা গানের কয়েকটা লাইন।
রানা মৃধা ও মাহমুদ হাসান তবীব।নিজস্ব চিত্র।
তবীব ছোট থেকেই হিপহপের ভক্ত। বাংলায় র্যাপ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। গান বানানোর কথা ভাবতেন। কিন্তু বিষয় কী হবে? এ দিন ফোনে ঢাকা থেকে তবীব বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে রণবীর সিংহ অভিনীত বলিউড ছবি গালি বয় দেখেছিলাম। ওই সিনেমা দেখেই ঠিক করে ফেলি, ঢাকাইয়া গালিবয়দের জীবনকেই র্যাপের বিষয় বানাব। আর সে রকম একটা সময়েই রানার সঙ্গে পরিচয়।’’
রানাকে পেয়ে গালিবয়দের জীবন আরও কাছ দেখার সুযোগ পেলেন তবীব। তার পর তবীবের লেখা ও পরিচালনায় রানাকে নিয়ে তৈরি হল ‘গালি বয়’। এই ভিডিয়োর দু’টি পর্ব ইতিমধ্যেই ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তৃতীয় পর্বও আসতে চলেছে ইদের পরেই। প্রথম ভিডিয়োতে রানার সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি গালি বয়দের জীবনচিত্র তুলে ধরেছিলেন তবীব। দ্বিতীয় ভিডিয়োতে রানাদের সমস্যা নিয়ে একরাশ প্রশ্ন সমাজের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। শিশুদের শিক্ষা ও পুষ্টির মতো মৌলিক অধিকারের বিষয় নিয়ে সমাজের উদাসীনতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে তবীব-রানার ‘গালি বয়’।
শুধু ভিডিয়ো নয়, রানার জীবনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন তবীব ও তাঁর বন্ধুরা। শিক্ষাবর্ষের মাঝে হওয়ায় এখন রানাকে ভর্তি নিতে চাইছে না কোনও স্কুল। তাই আগামী বছরের জানুয়ারি থেকেই রানা যাতে ফের স্কুলে যেতে পারে, সে চেষ্টা করছেন তবীবরা। এখনও পর্যন্ত গালি বয় থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার রোজগার হয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২৮ হাজার টাকা। যদিও ওই টাকা এখনও হাতে পাননি তবীব। তাঁর কথায়: ‘‘ইউটিউব থেকে যে টাকা পাওয়া যাবে তাঁর অর্ধেক দেওয়া হবে রানাকে। সঙ্গে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রানার স্কুলের ফি মেটানোর সমস্ত ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা।’’
রানার যদিও এ সবে কোনও হেলদোল নেই। প্রাণের আনন্দেই সে দিন কাটাচ্ছে। যেমনটা আগেও কাটাত। তবে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর চার পাশের ব্যবহারটাই তার সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু বাকি ‘রানা’দের কী হবে? গানে সে প্রশ্নটাও সযত্নে করে রেখেছে সে... ‘এই গান গেয়ে আমি আজ ভাইরাল, বাকি রানাদের বলো কী হবে কাল?’’
আরও পড়ুন: মহিলা বিজ্ঞানী! এখনও কাজ করা কঠিন
আরও পড়ুন: শরীরে একাধিক ত্রুটি, তবুও স্বপ্নকে ছুঁয়ে বিশ্বসেরা সুন্দরী হলেন ভারতের বিদিশা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy