বিবেক মজুমদার
‘‘ভীষণ রেগে গেলেও সে দিনটা চুপ করেই বসে ছিলাম। মনে হয়েছিল, রাগের মাথায় সব কথা গুছিয়ে লিখতে পারব না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাই ই-মেল করেছিলাম পরের দিন। কিন্তু তাঁরা যে এক সপ্তাহের মধ্যেই উত্তর দেবেন, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করবেন, আশা করিনি। সাধারণত এ সব বিষয়ে কিছু করতে গেলে অনেক দিন ধরে লড়াই চালাতে হয়।’’
বলছিলেন বিবেক মজুমদার। ২৬ বছর বয়সি এই তরুণ চিকিৎসকের করা ই-মেল পেয়ে এডিনবরা দুর্গ-চত্বরে সিপাহি বিদ্রোহ সংক্রান্ত একটি ফলক পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ পুরাতাত্ত্বিক সংস্থা ‘হিস্টোরিক এনভায়রনমেন্ট স্কটল্যান্ড’। আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিবেক আজ বললেন, ‘‘আট বছর ধরে এডিনবরায় রয়েছি। এর আগে অন্তত একশো বার হেঁটেছি ওই দুর্গ-চত্বরে। কিন্তু আগে কখনও খেয়াল করিনি। গতমাসে হঠাৎই চোখে পড়ে গেল!’’ ১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহ সম্পর্কিত সেই ফলকে ব্রিটিশ সেনাদের ‘নায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করে বর্ণনা করা হয়েছে, কী ভাবে ভারতীয়দের হাত থেকে ‘মুক্ত’ করা হয়েছিল লখনউকে। ‘ইন্ডিয়া ক্রস’-এ নীচে লাগানো বিতর্কিত সেই ফলক সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে বিবেক ই-মেল করার পরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফলকটি পাল্টে দেওয়া হবে। নতুন করে লেখা হবে সিপাহি বিদ্রোহের কথা। সেখানে ভারতীয় সেনাদেরও যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
ল্যাঙ্কাশায়ারে জন্ম বিবেকের। বড় হয়েছেন ইয়র্কশায়ারে। এডিনবরা থেকে ডাক্তারি পাশ করে এখন স্কটল্যান্ডের ‘বর্ডার্স জেনারেল হাসপাতালে’ জুনিয়র চিকিৎসক পদে রয়েছেন। মা-বাবা দু’জনেই চিকিৎসক। মা প্রিয়া মনরাজ ভারতীয় বংশোদ্ভূত, কয়েক প্রজন্ম ধরে ত্রিনিদাদের বাসিন্দা। বাবা সঞ্জীব মজুমদার ডাক্তারি পড়তে কলকাতা থেকে গিয়েছিলেন ত্রিনিদাদে। ডাক্তারি স্কুলেই আলাপ দু’জনের। ১৯৭০-এর দশকে ত্রিনিদাদ থেকে ব্রিটেনে আসেন তাঁরা। যোগ দেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস)-এ।
বাবা-মার কাছে ছোটবেলা থেকেই নানা গল্প শুনে ভারতীয় ইতিহাসে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল বিবেকের। কিন্তু শুধু আগ্রহ থাকলেই তো হয় না। এই ফলক অনেকের চোখেই পড়েছে, অনেকেই হয় তো ক্রুদ্ধ হয়েছেন। এত বড় কাজটা একা কী করে করে ফেললেন বিবেক? তরুণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সে দিন ফিরে এসে প্রথমে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। ওরাই আমাকে ই-মেল পাঠাতে উৎসাহ দেয়। চিঠিটি আমি ফেসবুকেও পোস্ট করেছিলাম। ‘হিস্টোরিক এনভায়রনমেন্ট স্কটল্যান্ড’ উত্তর দেওয়ার পরে তাদের পাঠানো চিঠিও ফেসবুকে পোস্ট করি। আমার এক বন্ধু ‘দ্য স্কটসম্যান’-এর সাংবাদিক। সে-ই ফেসবুকে দেখে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।’’ বিবেকের এই ‘সাফল্যের’ কথা স্কটিশ দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদপত্রেও খবরটি নিয়ে চর্চা হয়। বিবেক বলেন, ‘‘স্কটল্যান্ড জুড়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার নানা নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। সব কিছু তো এক দিনে পাল্টানো যাবে না। তবে এটা একটা সূচনা তো বটেই।’’
কলকাতায় কিছু আত্মীয়স্বজন রয়েছে বিবেকের। আগে না-এলেও ভেবেছিলেন এ বছর কলকাতা যাবেন। অতিমারির জেরে সেই পরিকল্পনা স্থগিত থাকলেও কোনও এক দিন শিকড়ে ফিরতে চান তরুণ বঙ্গতনয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy