জো বাইডেন। ফাইল চিত্র।
তেরো বছর আগের সেই দিনটার কথা কোনও দিন ভুলবেন না মহম্মদ। ২০০৮ সালের সেই দিনে প্রবল তুষারঝড়ের মুখে আফগানিস্তানের দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হেলিকপ্টার নামাতে বাধ্য হয় আমেরিকার সেনা। ওই হেলিকপ্টারে সে দিন ছিলেন তৎকালীন সেনেটর জো বাইডেন, সঙ্গে আমেরিকার সেনেটের আরও কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাইডেনের হেলিকপ্টারটিকে নিরাপদে নামিয়ে আনতে যে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল, তাতে দোভাষী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন মহম্মদ। সে দিন বাইডেনের জন্য প্রবল তুষারঝড়ের মধ্যে প্রাণ হাতে করে ৩০ ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করেছিলেন ওঁরা। সে কথা ভোলেননি আজও।
কিন্তু আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা বহু বন্ধু-আফগানকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও মহম্মদ ও তাঁর পরিবারের সেই সৌভাগ্য হয়নি। যে ঠিকাদার সংস্থার হয়ে মহম্মদ আমেরিকার সেনা বাহিনীতে দোভাষীর কাজ করতেন, তারা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথি হারিয়ে ফেলায় মহম্মদ ও তাঁর পরিবারের আমেরিকা যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সেনাবাহিনী শেষমেশ মহম্মদকে বিমানে ওঠাতে রাজি হলেও তাঁর চার সন্তান ও স্ত্রীর জায়গা হয়নি। ফলে পরিবারের সঙ্গে কাবুলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই তাঁর। উদ্ধারের আশায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্দেশে মহম্মদ আর্জি জানিয়েছেন, ‘‘আমাকে ভুলে যাবেন না। মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমাকে ও আমার পরিবারকে বাঁচান।’’ একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন মহম্মদ।
আপাতত কাবুলে প্রচণ্ড আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই দোভাষী। নিরাপত্তার খাতিয়ে পুরো নাম বলেননি তিনি। তবে মিডিয়ার দৌলতে এ যাত্রায় হয়তো মহম্মদের আর্জি হোয়াইট হাউসের অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। যে কারণে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জন পেস্কি বলেন, ‘‘২০০৮ সালে তুষারঝড়ের মধ্যে যে ভাবে আপনি আমার প্রিয়জনদের সাহায্য করেছিলেন, তা ভুলিনি। আপনার কাজের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমরা আপনাকে উদ্ধার করে আনব। আমরা যে কথা দিয়েছি, তা রাখব।’’
গত কুড়ি বছরে প্রচুর আফগান দোভাষী, গাড়ির চালক হিসেবে, প্রশাসনিক নানা কাজে আমেরিকা, ব্রিটেনের সেনাকে সাহায্য করেছে। বিদেশি শক্তি তখন আশ্বাস দিয়েছিল, সেনা সরানো হলে, এঁদেরও নিরাপদে সরিয়ে আনা হবে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে আমেরিকা পুরোপুরি সেনা সরালেও এমন অনেক আফগান কিন্তু পড়ে রইলেন দেশে। নয়া তালিবানি জমানায় যাঁরা বিন্দুমাত্র নিরাপদ নন।
মূলত ভিসা জটে এঁদের অনেকেই আটকে রয়েছেন আফগানিস্তানে। মহম্মদের মতো আফগানদের বিশেষ শরণার্থী ভিসায় আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, সেই প্রক্রিয়া এতটাই দীর্ঘ যে যোগ্যতা থাকলেও অনেককে শেষ পর্যন্ত ভিসা দেওয়া যায়নি। আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস নিজেও সম্প্রতি বলেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় থেকেই এই বিভাগে প্রচণ্ড কর্মী সঙ্কট চলছে। পর্যাপ্ত অফিসার নেই। তার উপরে রয়েছে ১৪ ধাপের দীর্ঘ ভিসা পাশের প্রক্রিয়া।’’ পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, বাইডেনের আমলে সেই জট অনেকটাই কেটেছে। ভিসা অনুমোদনের ক্ষেত্রে গত কয়েক মাসে অবিশ্বাস্য গতি এসেছে। মার্চে যেখানে সংখ্যাটা ১০০ ছিল, সাম্প্রতিক কালে সেখানে সপ্তাহে ৮১৩টি করে ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে সকলে মহম্মদের মতো ভাগ্যবান নন। আমেরিকা ও ব্রিটিশ বাহিনী— দুইয়ের হয়ে এক সময় দোভাষীর কাজ করেছেন জনৈক আফগান যুবক। আমেরিকার সেনা তাঁকে স্টিভ-ও নামে ডাকত। সম্প্রতি দেশ ছাড়তে তিনিও কাবুল বিমানবন্দরে কয়েক দিন হত্যে দিয়ে পড়ে থেকে ঘরে ফিরে এসেছেন। বিদেশি বিমানে ঠাঁই হয়নি তাঁর। বছর ছত্রিশের ওই যুবক বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ওঁদের সঙ্গে ভিড়ে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি।’’
বিদেশি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ২০০১ সাল থেকে অন্তত ৩০০ আফগান দোভাষী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনকে হত্যা করেছে তালিবান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy