গ্রিসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস। ছবি: রয়টার্স।
‘না’ এর জয়। গ্রিসের গণভোটে প্রায় ৬১ শতাংশ নাগরিকের ভোট গেল ‘না’-এর দিকেই। ফল আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই পদত্যাগ করলেন গ্রিসের অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস। অন্য দিকে, গ্রিসের খবর আসার পরেই সোমবার সকালে মুম্বই শেয়ার বাজারে সেনসেক্স প্রায় ৩০০ পয়েন্ট পড়ে গিয়েছিল। পরে ধাক্কা কাটিয়ে তা ঘুরে দাঁড়ায়। সকাল থেকে নিফটিও নিম্নমুখী হলেও পড়ে তাও ঘুরে দাঁড়ায়।
যদিও গ্রিস ইউরো ছাড়লেও ভারতে তার প্রভাব পড়বে না বলে আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন প্রমুখ। তবে এশিয়ার অধিকাংশ শেয়ার বাজারের সূচক কিন্তু নিম্নমুখী। গ্রিসের ইউরো ব্যবস্থা ছেড়ে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই। সব শেয়ারবাজারেই ইউরো-র মূল্য পড়তে শুরু করেছে। পড়েছে অপরিশোধিত তেলের দামও।
গ্রিসের গণভোটে প্রায় ৬৩ শতাংশ ভোট পড়ছে। এর মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ ভোট গিয়েছে ‘না’-এর দিকে। ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩৮ শতাংশ গ্রিসবাসী। ফল আসার পরে নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে ভারুফাকিস জানান, ঋণদাতাদের সঙ্গে আগামী আলোচনায় সুবিধার জন্যই তিনি সরে যাচ্ছেন। ঋণদাতা দেশগুলি অর্থমন্ত্রীদের একাংশ তাঁর উপস্থিতি চান না বলে এর আগেই ব্লগে লিখেছিলেন ভারুফাকিস। তিনি জানান, এর ফলে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাসের সুবিধা হবে। ফল প্রকাশের পরই আথেন্স-এর রাস্তায় মানুষের ঢল। প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি এক গ্রিসবাসীর ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ বলেছেন। তিনি গ্রিসের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির পুনর্গঠন করা হবেও বলে জানিয়েছেন। ফল জানার পরেই প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে গ্রিসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যান। প্রবল দুশ্চিন্তায় মজল বাকি ইউরোপ। কারণ, এর পরে গ্রিস ঠিক কী করবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
রবিবার গ্রিসবাসীর কাছে প্রধান প্রশ্ন ছিল তাঁরা কি আরও কৃচ্ছসাধন (পেনশন হ্রাস, বেতন হ্রাস) করে ইউরোতেই থেকে যেতে চান, না কি আবার নিজের মুদ্রা ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। দু’দিকেই আশা, আশঙ্কার সমারোহ ছিল। এ দিন ভোট গণনার পরে দেখা গেল গ্রিসের জনতার বড় অংশের ঋণদাতাদের শর্ত মেনে আরও কৃচ্ছসাধন প্রবল আপত্তি। আর এর ফলে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) ও জার্মানির মতো বাকি ঋণদাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ঋণও পাবে না গ্রিস। দেউলিয়া গ্রিসের পক্ষে এর পরে দৈনন্দিন কাজ চালানোও কঠিন হয়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে নিজের মুদ্রা ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া ছাড়া আর পথ খোলা নেই গ্রিসের। যদিও প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস আগে জানিয়েছিলেন, তিনি নতুন শর্তে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। কিন্তু ঋণদাতারা আর এগবেন কি না তা নিয়ে প্রবল সংশয় রয়েছে।
কিন্তু গ্রিসের নিজের মুদ্রার পথেও প্রবল অনিশ্চয়তা রয়েছে। গ্রিসের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির তহবিল ফুরিয়ে গিয়েছে। ‘না’-এর জয়ের পরে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (ইসিবি) আর গ্রিসের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করবে না বলেই আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কী ভাবে দৈনন্দিন কাজ সামলাবে তা নিয়ে প্রবল আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রবল অসুবিধায় পড়বে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলিও।
ব্রাসেলসে আলোচনায় বিশেষ অগ্রগতি না হওয়ায় গণভোটের ঘোষণা করেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস। সঙ্গে সঙ্গে গ্রিসের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিক ছিল ভোটের রায় বেরনোর পরে সেগুলি খুলবে। একই সঙ্গে এ ক’দিন ব্যক্তিপিছু দিনে এটিএম থেকে ৬০ ইউরো করে তোলার ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু এটিএম-এ ২০ ইউরো-র নোট না থাকায় অনেকেই দিনে ৫০ ইউরোর বেশি তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মূলধনের উপরে এই নিয়ন্ত্রণ উঠে গেলেও টালমাটাল অবস্থার তৈরি হতে পারে। এ ক’দিনের মূলধনের উপরে নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেতে নাভিশ্বাস উঠেছে আম-গ্রিসবাসীর। বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধ সংগ্রহে বেশ সমস্যা হতে শুরু করেছে।
এ দিনের ফলে জানার পরেই সক্রিয় হয়েছে বাকি ইউরোপ। সোমবার রাতেই গ্রিসের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা জার্মানি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলান্দের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ফল জানার পরে ইসিবি-এর চেয়ারম্যান মারিও দ্রাঘি-ও ইউরো-র অন্তর্গত ১৯টি দেশের সঙ্গে আজই জরুরি বৈঠকে বসবেন। এই ফলকে গ্রিসের ভবিষ্যতের পক্ষে দুঃখজনকে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীদের সংগঠন ‘ইউরো গ্রুপ’-র প্রধান ডিসেলব্লুম। ঋণদাতারা জানিয়েছিল, ‘না’ জিতলে আলোচনার প্রাথমিক ভিত্তিটিই ধাক্কা খাবে। গ্রিস ইউরো ছেড়ে নিজের ড্রাকমা-য় ফিরলে প্রথমেই মুদ্রার বড়সড় অবমূল্যায়ন হবে। তবে মিদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে গ্রিস রফতানি ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা। একই সঙ্গে তীব্র মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরের কৃচ্ছসাধনের পরে আপাতত এই অনিশ্চয়তার পথেই গ্রিসকে নিয়ে চান আম-জনতা।
‘না’- ৬১.৩ শতাংশ
‘হ্যাঁ’- ৩৮.৭ শতাংশ
ভোট দানের হার- ৬৩ শতাংশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy