Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘করোনা’ খুঁজতেই গুগ্‌ল জবাব দিল ‘উত্তর ইটালি’!

প্রথম দু’দিন বিকেল ছ’টা পর্যন্ত কাফেগুলো খোলা থাকছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কাফেতে যাঁরা বসছেন, প্রত্যেকের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব থাকতে হবে।

নির্জন কলোসিয়াম। ছবি: এপি

নির্জন কলোসিয়াম। ছবি: এপি

ঋদ্ধি ঘোষ, লেখক বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো
বোলোনিয়া (ইটালি) শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

এখন প্রায় রাত ন’টা। উত্তর ইটালির বোলোনিয়া শহরে নিজের ঘরে বসে লিখছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনও ধরনের জমায়েত বন্ধ। সিনেমা, জিম, রেস্তরাঁ, পাব, শপিং মল, খেলাধুলো, বিয়ের অনুষ্ঠান— বন্ধ সব কিছুই।

প্রথম দু’দিন বিকেল ছ’টা পর্যন্ত কাফেগুলো খোলা থাকছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কাফেতে যাঁরা বসছেন, প্রত্যেকের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। রেস্তরাঁর কর্মীদের মুখে মাস্ক ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু আজ সকালেই নতুন নির্দেশিকা জারি করে সব কাফে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ওষুধের দোকান ও সুপারমার্কেট ছাড়া সব দোকানই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে।

বিপুল বাধা-নিষেধ যাতায়াতের উপরেও। ইটালি দেশটি ২০টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। নির্দেশ জারি হয়েছে, কেউ অনুমতি ছাড়া তাঁর নিজস্ব প্রশাসনিক অঞ্চল থেকে বেরোতে পারবেন না। অর্থাৎ দেশের মধ্যে যেন ছোট ছোট দেশ। অনুমতি ছাড়া ‘সীমান্ত’ পেরোনো যাবে না। অফিসের জরুরি কাজ, অসুস্থতা বা নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়া— এই সব ক্ষেত্রেই শুধু অন্য প্রশাসনিক অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি মিলতে পারে। বাড়ি থেকেও যতটা সম্ভব কম বেরোতে বলা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ থাকলে সেটা করাই বাঞ্ছনীয়। ওষুধ বা খাওয়ার জিনিস কেনার জন্য শুধু বেরোনো যেতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সুপারমার্কেট বা ওষুধের দোকানে জিনিসপত্র ঠিকমতো পাওয়া যাবে তো? কারও কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর নেই।

কিন্তু হঠাৎ কী করে এ রকম হল? কী ঘটল গত আড়াই সপ্তাহে? ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা হবে। চিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হালহকিকত জানতে ইন্টারনেটে খবর ঘাঁটছি। নিছক কৌতূহল নয়। মার্চ মাসের শেষে গবেষণার কাজে চিন যাওয়ার কথা। তাই সে দেশের পরিস্থিতিটা ঠিক কী রকম, তা জানাটা খুব দরকার। কিন্তু এ কী! গুগ্‌লে ‘করোনাভাইরাস’ লিখে সার্চ করতেই প্রথমেই যে খবরগুলো ফুটে উঠল, সেগুলো তো চিনের নয়— ইটালির! প্রথম খবরটার শিরোনাম— ‘উত্তর ইটালিতে একাধিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ’। একটু নড়ে-চড়ে বসলাম। পড়ে দেখি, মিলান থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের শহর, উত্তর ইটালির কোদোনিয়োয় জনা পঞ্চাশেকের করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আরও বেশ কয়েক জনের লালারসের পরীক্ষার ফল তখনও আসেনি। একটি ৩৮ বছর বয়সি লোক সর্দি-কাশি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে যাতায়াত করছিলেন। তিন-চার দিন এ রকম চলার পরে ডাক্তারদের সন্দেহ হয়। পরীক্ষা করে লোকটির দেহে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ মেলে। কিন্তু তত ক্ষণে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষই অরক্ষিত অবস্থায় লোকটিকে পরীক্ষা করেছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। ফলে তাঁদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা পুরোদস্তুর।

খবরটা চিন্তায় ফেলে দিল। জানুয়ারি মাসেই ইটালিতে তিন জনের করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। কিন্তু ইটালিই প্রথম দেশ যারা চিনের সঙ্গে সব উড়ান বন্ধ করে দেয়। তা হলে ফেব্রুয়ারির শেষে এতগুলো নতুন সংক্রমণ এল কোথা থেকে? প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা তো ইউরোপ। এখানে সীমান্ত পার হওয়ার কড়াকড়ি নেই। তাই হয়তো অন্য কোনও দেশ থেকে এখানে সংক্রমণ চলে এসেছে। আমরা ঠিক সামলে নিতে পারব। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই দেখি সংক্রমণের সংখ্যাটা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। পরের দিন সকালে আরও কয়েকটি নতুন সংক্রমণের খবর এল। ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সংক্রমণ ১২০ পেরিয়ে গেল। সবই লমবার্ডির কোদোনিয়ো ও তার চারপাশের ছোটখাটো ১০-১২টি শহর থেকে। এই কোদোনিয়ো আমার শহর থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে। দুরন্ত ট্রেন যোগাযোগের জন্য এ দেশে এটা কোনও দূরত্বই নয়। ফলে বোলোনিয়াতে কাজ করা অনেকেই হয়তো কোদোনিয়ো বা তার আশপাশের ছোট শহরগুলো থেকে আসেন। আমাদের এই শহরেও কি তা হলে করোনা এল বলে?

অন্য বিষয়গুলি:

Italy Coronavirus Google
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE