Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা স্মরণ

৮০ বছর পরে পোলান্ডের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী জার্মানি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর এই দিন মনে রেখে আজ সকালে পোলান্ডের উইলান শহরে এসে ক্ষমা চাইলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টাইনমায়ার।

মনে রেখে: ৮০ বছর আগে এই দিনে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। রবিবার পোলান্ডের গদানিস্ক শহরের এক স্মারকে শ্রদ্ধা দেশবাসীর। ছবি: রয়টার্স।

মনে রেখে: ৮০ বছর আগে এই দিনে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। রবিবার পোলান্ডের গদানিস্ক শহরের এক স্মারকে শ্রদ্ধা দেশবাসীর। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ওয়ারশ শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

ক্ষমাপ্রার্থনা, তবে দীর্ঘ ৮০ বছর পেরিয়ে। পোলান্ডের কাছে ‘নতমস্তক’ জার্মানি, আজকের দিনটিতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর এই দিন মনে রেখে আজ সকালে পোলান্ডের উইলান শহরে এসে ক্ষমা চাইলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টাইনমায়ার। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর উইলানেই উড়ে এসেছিল জার্মান বায়ুসেনার প্রথম বোমাটি। হাজার হাজার মানুষ মারা যান তাতে। এই শহরটির সামরিক দিক থেকে কোনও তাৎপর্যও ছিল না। শুধুমাত্র সাধারণের মধ্যে ত্রাস তৈরি করার উদ্দেশ্যে বেছে নেওয়া হয়েছিল আপাত-গুরুত্বহীন উইলানকে। আজ ‘ধ্বংসের সেই ভয়ঙ্কর স্পৃহার’ নিন্দা করলেন স্টাইনমায়ার। জার্মান ও পোলিশ, দুই ভাষাতেই তিনি বললেন, ‘‘জার্মানির অত্যাচারের শিকার যাঁরা, আক্রান্ত সেই সব পোলিশ নাগরিকের কাছে নতমস্তকে ক্ষমাপ্রার্থী আমি।’’ তার পরে তাঁর সংযোজন, ‘‘পোলান্ডে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে জার্মানরা। কেউ যদি মনে করে সে অধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছে, বা যদি ভাবে, ইউরোপে জাতীয়তাবাদী-সমাজতন্ত্রীদের সন্ত্রাসের রাজত্ব একটা সামান্য ঘটনা, তা হলে তাদের ভুল ভাঙাতে পারে জার্মানির ইতিহাস। আমরা কখনও ভুলব না। আমরা মনে করতে চাইব ও অবশ্যই মনে রাখব।’’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মর্মান্তিক অভিঘাত সহ্য করতে হয়েছে পোলান্ডকে। গোটা বিশ্বে এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ। তার মধ্যে অন্তত ৬০ লক্ষ ছিলেন পোলিশ নাগরিক। আর হলোকস্টে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৬০ লক্ষ ইহুদি। যার অর্ধেক ছিলেন পোলিশ নাগরিক। ৮০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও জার্মানি সেই ধ্বংস আর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করেনি বলে পোলান্ডের অভিযোগ। সে ক্ষতিপূরণের হিসেবনিকেশ এখনও করছে এ দেশের পার্লামেন্টের একটি কমিটি। জার্মান প্রেসিডেন্টের ক্ষমাপ্রার্থনা সত্ত্বেও সে দেশ মনে করে, বিষয়টি নিয়ে ‘সমঝোতা’ হয়ে গিয়েছে। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইস্কির দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’ সম্প্রতি এই ক্ষতিপূরণের দাবি তোলায় তাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে জার্মানি।

তবু এই দোষারোপের আবহেও হাজির হয়েছেন স্টাইনমায়ার। শুধু তিনি নন, উইলানে এসেছিলেন আরও অনেক দেশের নেতানেত্রী। সেখানে উপস্থিত পোলান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা তাঁর দেশের উপরে নাৎসি-জার্মানির অত্যাচারকে বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সকলে। প্রেসিডেন্ট দুদা বলেন, ‘‘উইলান দেখিয়েছে যুদ্ধটা ঠিক কী রকম, একটা পুরোপুরি যুদ্ধ, কোনও নিয়মনীতিহীন, ধ্বংসাত্মক একটা যুদ্ধ।’’ এ দিনই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ওয়ারশ-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর নিয়ে আরও একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বাকিরা গিয়েছিলেন উইলান মিউজ়িয়ামে। দেখা করেছেন স্থানীয় সেই মানুষদের সঙ্গে, যাঁদের জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধে।

উইলানে হামলার পরে নাৎসি নেতা অ্যাডল্ফ হিটলারকে সেই মুহূর্তে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ব্রিটেন। জার্মানি সে হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দেওয়ায় ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন এবং ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানির বিরুদ্ধে। যে সংঘাত গড়ায় ছ’বছরের ভয়াবহতায়।

অন্তত ৪০ জন বিশ্বনেতা সে ইতিহাস স্মরণে এগিয়ে এলেও চোখে পড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো ব্যক্তির অনুপস্থিতি। এই অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে হারিকেন ডোরিয়ানের কারণ দেখিয়ে তিনি পাঠিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে। পুতিনের কাছে অবশ্য কোনও আমন্ত্রণ যায়নি। যুদ্ধ-পরবর্তী সোভিয়েত আধিপত্যের ইতিহাস এবং ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়াকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত— সব মিলিয়ে রুশ-পোলিশ সম্পর্ক কোনও দিনই মসৃণ হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Poland Germany World War II
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy