ফাইল চিত্র।
কয়েক দিন আগে একটা ছবি ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ঘরে বসে রয়েছেন মেয়েরা। আপাদমস্তক কালো বোরখায় ঢাকা। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে তালিবানের পতাকা। তালিবানের তরফে দাবি করা হয়েছিল, কড়া ইসলামি পোশাক ফতোয়া মেনে নিয়ে স্বেচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন মহিলারা। সভায় যোগ দিয়েছেন। তালিবানের সমর্থনে সে দিন মুখ খুলেছিলেন তাঁরা।
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা দাবি উঠেছে, চাপের মুখে সে দিন মহিলারা বাধ্য হয়ে ওই সভায় যোগ দেন। আফগানিস্তানের সমাজকর্মী ও সাংবাদিক নাতিক মালিকজ়াদা টুইটে দাবি করেছেন, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তাঁকে বলেন, ‘হুমকির মুখে তালিবানকে সমর্থন করেছি’। ওই ছাত্রী তাঁকে বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ঘরে আমাদের এক ঘণ্টার জন্য জড়ো হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার আগে ৯/১১ উপলক্ষে মহিলাদের মধ্যে কালো বোরখা বিলি করেছিল তালিবান শাসকেরা। ঘটনার দিন ওই পোশাকেই সভায় আসতে বলা হয়েছিল আমাদের। পাশাপাশি ওরা হুমকি দিয়েছিল, নির্দেশ না মানলে বা সভায় যোগ না দিলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে। অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়াশোনার সুযোগ মিলবে না।’’
তালিবান ক্ষমতায় আসার পরে বহু আফগান মহিলা প্রাণভয়ে দেশ ছেড়েছেন। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন তাঁদের একাংশ শিক্ষা, কাজের অধিকারের দাবিতে কাবুল, হেরাট-সহ বিভিন্ন প্রদেশে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। নতুন সরকারে মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের দাবিতে সুর চড়িয়েছেন। পাল্টা দমন-পীড়ন চালিয়েছে তালিবানও। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিয়োয় প্রতিবাদী মহিলাদের উপরে তাদের চাবুক চালানোর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে মহিলাদের দিকে তেড়ে আসার ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে।
সে দিন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে কালো বোরখায় ঢাকা মেয়েরা তালিবানের হয়ে মুখ খোলার পাশাপাশি এই প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধেও গলা চড়ান। কেউ কেউ বলেন, ‘‘যাঁরা দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন, তাঁরা আমাদের প্রতিনিধি নন।’’ কেউ আবার পোশাক ফতোয়ার সমর্থনে বলেন, ‘‘হিজাব পরলেই মহিলারা নিরাপদে থাকবেন। আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থন করব আমরা।’’ আশরফ গনি সরকারের সমালোচনা করে এক বক্তা এ-ও বললেন, ‘‘আগের সরকারের আমলে কোথায় স্বাধীনতা ছিল? ওটাকে স্বাধীনতা বলে না। আগের সরকার মহিলাদের খারাপ ভাবে ব্যবহার করেছে। রূপ দেখে মেয়েদের সরকারি কাজে নিয়োগ করত ওরা।’’ তবে এঁদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নন বলে দাবি ওঠে।
তালিবানি পোশাক ফতোয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন মেয়েরা। সর্বাঙ্গ ঢাকা কালো বোরখার পরিবর্তে ঝলমলে রঙিন পোশাকে সেজে সুন্দর ছবি পোস্ট করছেন অনেকে। তার মধ্যেই আজ নাতিকের টুইটে তালিবানের মহিলা-বিরোধী ভাবমূর্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে। দেশে পুরুষ-মহিলা একত্রে পড়াশোনা বন্ধ করার ফতোয়া জারি হয়েছে ইতিমধ্যেই। তালিবান মন্ত্রী সৈয়দ জ়েকরুল্লা হাশিমি তো প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘‘মহিলাদের কাজ জন্ম দেওয়া, দেশ চালানো নয়। মন্ত্রিসভায় মেয়েদের প্রয়োজন নেই।’’ আফগানিস্তানে মেয়েদের অধিকার ঠিক কত দূর— তা নিয়ে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি তালিবান সরকার। শুধু এটুকু জানানো হয়েছে, শরিয়ত মেনে শিক্ষা ও কাজের অধিকার মিলবে তাঁদের। বাস্তবে সেই অধিকার ঠিক কতটা, আগামী দিনে সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy