Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘অঞ্জলির ফুল ছোড়ার কায়দা শিখিয়ে দিলাম’

কলকাতা ছেড়ে সিডনি পাড়ি দেওয়ার আগে পুজোর দিনগুলো এ ভাবেই গল্পে-আড্ডায় কেটে যেত। প্রবাসে সেই দিনগুলোকে খুঁজে পাওয়া ভার।

শেষবেলার ভিড়। নিজস্ব চিত্র

শেষবেলার ভিড়। নিজস্ব চিত্র

হিন্দোল ঘটক
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

‘পুজোর সময় কলকাতায় থাকাই যায় না। প্রতি বছর যেন ভিড় বাড়ছে। এত লোক যে কোথা থেকে আসে!’ বক্তব্যটা অম্লানদার হলেও আমরা সকলেই সহমত হলাম। দক্ষিণ কলকাতার এক ফ্ল্যাটবাড়ির ব্যালকনিতে আমাদের অষ্টমী বিকেলের আড্ডা চলছে তখন। নীচে রাস্তার দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে লোকে লোকারণ্য। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে আমরাও সেই ভিড়ে পা মিলিয়ে দিলাম। দুর্গাপুজো বলে কথা!

কলকাতা ছেড়ে সিডনি পাড়ি দেওয়ার আগে পুজোর দিনগুলো এ ভাবেই গল্পে-আড্ডায় কেটে যেত। প্রবাসে সেই দিনগুলোকে খুঁজে পাওয়া ভার। পুজো আসছে, সেই সব চিহ্নও এখানে খুঁজে পাই না। মাস দুয়েক আগে থেকে প্যান্ডেল বাঁধা দেখা যায় না। বাড়িতে পাড়ার ছেলেরা চাঁদা চাইতে আসে না। আর পুজোর দিনে ঢাকের শব্দে ঘুমও ভাঙে না।

পুজো হয় এ দেশে। তবে আমেরিকা, ইংল্যান্ডের মতো সে পুজো হয় সপ্তাহান্তে, স্কুলবাড়ি বা কমিউনিটি হলে। এখানে পঞ্জিকার ব্যাপার নেই, ‘গ্রেগোরিয়ান’ ক্যালেন্ডার দেখে কলকাতার পুজোর সমসাময়িক এক শনিবার সকালকে সপ্তমী ধরা হয়। রবিবার দুপুরের মধ্যে সেরে ফেলা হয় সিঁদুর খেলা। তবে কি এখানে পুজোর কোনও আমেজ নেই? তা একেবারেই নয়। বাঙালি হচ্ছে আমুদে জাতি। এই বিশ্বায়নের ঝড়েও, সর্বত্র সাংস্কৃতিক খুঁটিটুকু তারা পুঁতে ফেলতে সক্ষম।

তাই শনিবার সকালে এখানকার পুজোপ্রাঙ্গণে পৌঁছলে ম্যাডক্স স্কোয়ারে পৌঁছনোর মতোই আনন্দ হয়। ফুচকা খাওয়ার উত্তেজনা বা প্রতিমার সঙ্গে নিজস্বী তোলার হি়ড়িক, কোনওটারই অভাব নেই। বেলা গড়ালে দেখা যায়, বেশ কিছু সাহেব-মেমসাহেব তাঁদের বাঙালি বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে খিচুড়ি ভোগের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কচিকাঁচাদেরও সারা বছরের বাংলা পরীক্ষার দিন হল এই পুজোর সময়টাই। অবশ্য তাদের পরীক্ষা নয়, তাদের মা-বাবার পরীক্ষা! মা-বাবাকে পাশ করাতে স্টেজে উঠে গেয়ে দিতে হয় একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত। অতটা যদি না-ও হয়ে ওঠে, একটা হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ তো আবশ্যিক!

গত বছরের একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমার কয়েক জন সহকর্মী, যাঁরা সকলেই ইউরোপীয়, তাঁদের নিয়ে গিয়েছিলাম দুর্গাপুজোর ‘কালচার টুর’ করাতে। শনিবার সকালে আমার পরনে পাঞ্জাবি দেখে তাঁরা সকলেই যারপরনাই উত্তেজিত। সেই উত্তেজনার পারদ আরও চড়িয়ে তাঁদের অঞ্জলির একটা ‘ক্র্যাশ কোর্স’ করিয়ে দিলাম! ফুল ছোড়ার সেই সূক্ষ্ম প্রশিক্ষণের কথা মনে করিয়ে আজও মাইকেল-মারিনারা আমায় নিয়ে ঠাট্টা করেন।

এখানে পুজো দু’দিনে শেষ হয়ে গেলেও কলকাতা থেকে করা ফেসবুক পোস্টগুলো আমাদের মন ভুলিয়ে রাখে আরও কিছু দিন। তার প্রতিফলন হয় পরের সপ্তাহান্তে কারও বাড়িতে বিজয়া সম্মেলনীর রূপে।

দিন দু’য়েক আগের কথা। হোয়াটসঅ্যাপে বেঙ্গালুরুবাসী আমার স্কুলের বন্ধু সাগ্নিকের বার্তা এল— ‘‘এ বার পুজোয় কলকাতা ফিরছিস? আমি যাচ্ছি পঞ্চমীর দিন।’’ পঞ্চমী শব্দটা দেখেই মনে পড়ে গেল, প্রেসিডেন্সির সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজ স্ট্রিটে ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলে’র ধরাবাঁধা পঞ্চমীর আড্ডাটা। যে আড্ডা শুরু হত কলাপাতায় সাজানো ভাত আর চিংড়ির মালাইকারি দিয়ে আর শেষ হত অধ্যাপকদের ক্লাস নেওয়ার ভঙ্গি নকল করে। মনে মনে হাসতে হাসতে সাগ্নিককে লিখলাম ‘‘না রে, এ বছর হবে না। দেখি, যদি আসছে বছর...।’’

অন্য বিষয়গুলি:

2019 Durga Puja Special Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy