মুখোমুখি: নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন, আমেরিকা থেকে ভারতে আসা অ্যাপল-এর মতো দামি স্মার্টফোন, স্মার্ট-ঘড়ির উপরে শুল্ক কমানো বা তুলে নেওয়া হোক। নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, তাতে চিন-হংকংয়ের ফায়দা হবে। তার বদলে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প সফল করতে অ্যাপল-ই ভারতে কারখানা খুলুক।
ট্রাম্প চান, নরেন্দ্র মোদী আমেরিকার কৃষি এবং ডেয়ারি পণ্যের জন্য ভারতের বাজার আরও বেশি করে খুলে দিন। কিন্তু চাষি-পশুপালকদের কথা ভেবে বিজেপি নেতৃত্ব আপাতত তাতে নারাজ। ট্রাম্প চাইছেন, মোদী সরকার হৃদ্রোগের চিকিৎসার স্টেন্টের দামে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে, তা তুলে নেওয়া হোক। তাতে মার্কিন সংস্থার ফায়দা হলেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়বে বলে মোদী সরকার এখনও তা করতে নারাজ। উল্টে মোদী সরকার চাইছে, ভারত থেকে রফতানি করা ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম থেকে বাড়তি শুল্ক তুলে নিন ট্রাম্প। এ দেশে কৃষি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের জন্য আরও বেশি করে মার্কিন বাজার খুলে দেওয়া হোক। এ ছাড়া, ই-কমার্স নীতি এবং এ দেশে বিদেশি সংস্থাগুলির ব্যবসার তথ্য এ দেশেই রাখতে হবে বলে (ক্রেডিট কার্ড সূত্রে তথ্য বিদেশের সার্ভারে যাওয়া আটকাতে) রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শর্তের ক্ষেত্রেও দু’দেশের সমঝোতা প্রায় অসম্ভব বলেই সরকারি সূত্রের খবর। আর এত সব বিষয়ে দর কষাকষির মধ্যেই দোদুল্যমান ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, বাণিজ্য সচিব অনুপ ওয়াধওয়ান এখনও আমেরিকায়। গয়াল মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটথিজারের সঙ্গে কথা বলছেন। সরকারি সূত্রের খবর, চুক্তি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত করা না গেলে মোদী-ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শনের পর ‘মুখ রক্ষা’ করতে আমেরিকা ভারত থেকে রফতানি করা পণ্যে শুল্কে আংশিক ছাড় দিতে পারে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে। ভারতও যে ২৮টি পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসিয়েছিল, তা শিথিল করতে পারে।
যদিও বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ট্রাম্পের দাবি মেনে স্মার্টফোনের মতো তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর পণ্যের উপর থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক তুলে নিলে বছরে ৩২০ কোটি ডলার রাজস্ব ক্ষতি হবে। আমেরিকা তার বিনিময়ে বাণিজ্যের যে বাধা শিথিল করার প্রস্তাব দিচ্ছে, তাতে লাভ হতে পারে ২০ কোটি ডলার। ফলে লাভের থেকে লোকসান বেশি। ওই শুল্ক তুলে নিলেও আমেরিকার থেকে চিন-হংকংয়ের বেশি লাভ হবে। কারণ, ভারত যে ২০৫০
কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে, তার মাত্র ২ শতাংশ আমেরিকা থেকে আসে। মোটরবাইকের উপর ৫০ শতাংশ, গাড়ির উপরে ৬০ শতাংশ ও অ্যালকোহল-জাতীয় পানীয়ের উপরে ১৫০ শতাংশ হারে ভারতের শুল্কও অযৌক্তিক বলেই মনে করছেন ট্রাম্প।
এ দিকে, আগামী বছর আমেরিকার ভোট। হিউস্টনের ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে মোদী অনাবাসী ভারতীয়দের সামনে ‘অব কি বার, ট্রাম্প কি সরকার’ স্লোগান তুলেছেন। মার্কিন সংস্থা ও পণ্যের জন্য ভারতের বিশাল বাজার আরও খুলতে পারলে ট্রাম্প তা নিয়ে নিজের দেশে প্রচার করতে পারবেন। কিন্তু
শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, চাষি থেকে পশুপালকের মতো নিজস্ব ভোট-ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে মোদী এ সব ক্ষেত্রে আপসে এখনও রাজি নন। এক কূটনীতিক বলেন, ‘‘ট্রাম্প যতই মোদীকে এলভিস প্রেসলি, জাতির জনক বলুন, মোদী যতই ‘অব কি বার, ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান তুলুন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষিটাই আসলে বাস্তব।’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যায় যার প্রতিফলন ঘটেছে ট্রাম্পের বক্তব্যেও। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরেও ট্রাম্প যে ভাবে মধ্যস্থতার কথা বলে চলেছেন, তা বাণিজ্য চুক্তিতে নয়াদিল্লিকে চাপে রাখার কৌশল বলেও মনে করছে মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy