ট্রাম্প ন্যাশনাল গল্ফ ক্লাবে স্ত্রী মেলানিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।
আর কয়েক ঘণ্টা। তার পরেই যাবতীয় প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামিকাল, সোমবার আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ওভাল অফিসের দায়িত্ব হাতে নেবেন এই ধনকুবের শিল্পপতি। আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোনও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, যাঁকে ৩৪ দফা ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল নিউ ইয়র্কের এক নিম্ন আদালত।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম দফা ছিল আগাগোড়া বিতর্কে মোড়া। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর নেতৃত্বে আগামী চার বছর আমেরিকা ঠিক কোন পথে চলবে, তা জানতে উৎসুক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমজনতাও। আমেরিকান সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ইতিমধ্যেই ভারত সফরে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে নিজের পরামর্শদাতাদের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনাও সেরে রেখেছেন তিনি। আজ থেকে ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছে শপথগ্রহণ সংক্রান্ত নানা অনুষ্ঠান। তার আগে গত কাল রাজধানীতে ট্রাম্প-বিরোধী মিছিলে হেঁটেছেন কয়েক হাজার মানুষ, যা নতুন প্রশাসনের পক্ষে অস্বস্তির তো বটেই।
দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর পরই ট্রাম্পের সামনে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় চ্যালেঞ্জও। গত বছর জুড়ে চলা নির্বাচনী প্রচারে দেশবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ওভাল অফিসের দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পরে সেগুলির কতটা তিনি বাস্তবায়িত করতে পারেন, সে দিকেই এখন নজর আমেরিকার আমজনতার। বিশ্বেরও।
কড়া অভিবাসী নীতি থেকে শুরু করে গর্ভপাত-বিরোধী কঠোর আইনের পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় ফিরলে রেকর্ড সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে তিনি তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাবেন বলে নির্বাচনী প্রচারে দেশের মানুষকে আশ্বাস দিয়েছেন। আমেরিকায় ধর্ষণ, খুন, শিশুদের উপরে হওয়া যৌন নির্যাতন-সহ বাড়তে থাকা অপরাধের জন্য এত দিন বাইডেন সরকারের উদার অভিবাসী নীতিকেই দায়ী করে এসেছে রিপাবলিকান শিবির। ক্ষমতায় ফিরে অভিবাসী নীতি নিয়ে ট্রাম্প নতুন কী করেন, সে দিকে নজর থাকবে সকলের। একই ভাবে ট্রাম্পের গর্ভপাত-বিরোধী নীতি নিয়েও আশঙ্কিত দেশের মহিলা নাগরিকদের একটা বড় অংশ। এর মধ্যেই বেশ কিছু রিপাবলিকান প্রদেশ কঠোর গর্ভপাত-বিরোধী আইন চালু করেছে। কেন্দ্রীয় ভাবে গোটা দেশের জন্য এ নিয়ে ট্রাম্প নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নেন কি না, সে দিকে তাকিয়ে অনেকেই।
আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়েও। মেক্সিকো, কানাডা, চিনের মতো দেশগুলি থেকে আমদানি করা জিনিসের উপরে বিপুল বাণিজ্য কর চাপানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে তাঁর বাণিজ্য নীতি কোন খাতে বইবে, নজর থাকবে তার উপরেও। এর সঙ্গেই বিশ্ব কূটনীতিতে ট্রাম্পের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট হয়ে এক দিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর কথা বললেও বাস্তবে কি তা আদৌ সম্ভব? সেই প্রশ্ন উঠছে। ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া সদ্য শুরু হলেও ভবিষ্যতে বন্ধু দেশ ইজ়রায়েলের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন কী ভাবে সাহায্যের হাত বাড়ায়, সে দিকে কড়া দৃষ্টি রাখছে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি।
নির্বাচনে জেতার আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর দেশে পুরুষ-নারীর বাইরে অন্য কোনও লিঙ্গকে পরিচিতি দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কী হতে চলেছে, তা-ও দেখার। প্রথম দফাতেই বিশ্ব উষ্ণায়নকে তিনি ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করেছিলেন। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া বেশ কিছু নীতিকে উপেক্ষা করে ট্রাম্প নিজের মতো নতুন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। যাতে আখেরে ক্ষতি হতে পারে বিশ্ব পরিবেশের।
ভারত নিয়ে ট্রাম্পের নতুন নীতি কী হতে চলেছে, তার দিকে তাকিয়ে সাউথ ব্লক। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। নির্বাচনে জেতার পরেই উপদেষ্টাদের সঙ্গে ভারত সফর নিয়ে আলোচনা সেরে রেখেছেন ট্রাম্প। গত ডিসেম্বরের শেষে আমেরিকায় এসেছিলেন জয়শঙ্কর। তখনও এ নিয়ে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা সারেন তিনি। আমেরিকার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, এপ্রিলে ভারতে যেতে পারেন ট্রাম্প। সেটা না হলে এ বছরের শেষে ভারত সফর করতে পারেন তিনি। আবার ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আমেরিকা সফরে আসতে পারেন। ভারতের পড়শি দেশ চিনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মেঘের মধ্যেই সম্পর্ক শোধরানোর বার্তাও দিয়েছেন ট্রাম্প। চিনকে বাণিজ্য কর নিয়ে হুমকি যেমন দিয়েছেন, তেমনই নিজেই কিন্তু চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। সমাজমাধ্যমে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছিলেন সেই খবর। এই প্রথম আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে বেজিংও।
তবে শপথ অনুষ্ঠানের আগে অস্বস্তির কাঁটাও রয়েছে। গত কালই স্ত্রী মেলানিয়া আর ছোট ছেলে ব্যারনকে নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছেছেন ট্রাম্প। আর কালই শহরের প্রাণকেন্দ্রে ট্রাম্প-বিরোধী মিছিলে হেঁটেছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। বিভিন্ন অধিকাররক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা এই কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। প্রথমে তিনটি পার্কে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। তার পরে প্ল্যাকার্ড হাতে হেঁটে যান লিঙ্কন মেমোরিয়ালের দিকে। বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশই মহিলা। ষাটের বৃদ্ধা থেকে সদ্য কুড়ি পেরোনো তরুণীও হেঁটেছেন মিছিলে। ফ্লরিডা থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলে হাঁটছিলেন বছর ষাটের সুজ়ান ডাটওয়েলস। জানালেন, ট্রাম্প জেতায় তিনি একাধারে ক্ষুব্ধ এবং ভীত। বললেন, ‘‘একসঙ্গে এত মানুষ কী করে নিজেদের স্বার্থের বিরোধিতা করে এমন এক জনকে ভোট দিতে পারেন, আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না।’’ প্রথম বার মিছিলে পা মেলানো কলোরাডোর সারা কং বললেন, ‘‘আমি এই মিছিলে হেঁটে অভিভূত। এঁদের উদ্দীপনা দেখেই আমি আরও মিছিলে হাঁটার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।’’ বছর ত্রিশের সারা আরও জানালেন, তিনি নতুন প্রশাসনকে নিয়ে ভীত। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদীও। গত কাল নিউ ইয়র্কেও একই ধরনের প্রতিবাদ-মিছিলে অংশ নিয়েছেন কয়েকশো মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy