ফের বিতর্কে ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
হোয়াইট হাউসে তাঁর মেয়াদ আর দু’সপ্তাহ। তার আগেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এ বার ভোটের হিসাব পাল্টে দেওয়ার জন্য সরকারি আধিকারিককে ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে সেই কথোপকথনের একটি অডিয়ো রেকর্ডিং ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। আর তাতেই তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিদায়লগ্নের আগেই ট্রাম্পকে ইমপিচ করার দাবিও উঠতে শুরু করেছে।
আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-ই প্রথম এই গোপন কথোপকথনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। তার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অডিয়ো রেকর্ডিংটি ছড়িয়ে পড়ে। তাতে জর্জিয়া প্রদেশের সচিব ব্র্যাড র্যাফেনস্পার্জারকে তাঁর হয়ে প্রায় ১২ হাজার ভোট জোগাড় করে দিতে বলতে শোনা যায় ট্রাম্পকে। তা না হলে কড়া মূল্য চোকাতে হবে বলে ব্র্যাডকে হুমকিও দেন তিনি। তবে রিপাবলিকান সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্পের আবদার মেনে ভোটগণনায় হস্তক্ষেপ করতে রাজি হননি ব্র্যাড।
চার মিনিট ২০ সেকেন্ডের যে অডিয়ো রেকর্ডিংটি সামনে এসেছে, তাতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জর্জিয়ার মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ক্ষোভে ফেটে পড়ছে গোটা দেশ। আপনিই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন। ভোট পুনর্গণনা হয়েছে বলতেই পারেন আপনি। তাতে কোনও দোষ নেই। আমার শুধুমাত্র ১১ হাজার ৭৮০ ভোটের প্রয়োজন। জর্জিয়া আমরাই জিতেছি। এ বার বলুন ব্র্যাড, আপনি কি করবেন? নির্বাচনে আমরাই জিতেছি। এ ভাবে আমাদের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া উচিত নয়। এর কড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে।’’
Kudos to the patriot who recorded the conversation. pic.twitter.com/Z9SlVsD1Gg
— Jim Roberts (@nycjim) January 3, 2021
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর র্যালিতে পুলিশের ‘না’, এখনও নীরব বিজেপি
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টরাল ভোট তো বটেই, পপুলার ভোটেও ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন বাইডেন। কিন্তু শুরু থেকেই বাইডেনের জয় মানতে অস্বীকার করে আসছেন ট্রাম্প। বরং ভোট গণনায় দুর্নীতি হয়েছে বলে লাগাতার অভিযোগ তুলে আসছেন। এ নিয়ে আইন আদালত করেও খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত নিজের দাবিতে অনড় ট্রাম্প। তার মধ্যেই তাঁর ‘গোপন’ কথোপকথনের অডিয়ো রেকর্ডিং ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বরাবর রিপাবলিকান ঘেঁষা বলে পরিচিত জর্জিয়ায় এ বারে ১১ হাজার ৭৭৯ ভোটে জয়লাভ করেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন। তাঁকে হারাতেই ট্রাম্প ১১ হাজার ৭৮০ ভোটের দাবি করছিলেন বলে অভিযোগ। তবে অডিয়ো রেকর্ডিংয়ে মুখের উপরই ট্রাম্পের আবদার খারিজ করে দিতে শোনা যায় ব্র্যাডকে। তিনি বলেন, ‘‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, সমস্যা হল, আপনার কাছে যে তথ্য রয়েছে, তা একেবারে ভুল।’’
অডিয়ো রেকর্ডিংটি সামনে আসার আগে, ট্রাম্প ও ব্র্যাডের এই গোপন কথোপকথনের খবর মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেলে, ব্র্যাডের সঙ্গে ফোনে কথা বলার বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি জানান, ব্যালট দুর্নীতি নিয়ে তাঁর প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি ব্র্যাড। জবাব দিতে খুব একটা ইচ্ছুকও ছিলেন না তিনি। কিন্তু আদালত এবং নির্বাচন আধিকারিকরা যে ভাবে ভোটারদের সঙ্গে বঞ্চনা করেছেন, তা মেনে নিতে পারেননি তিনি। ট্রাম্পের এই অভিযোগের জবাবে ব্র্যাড বলেন, ‘‘আপনাকে সম্মান জানিয়েই বলছি, আপনার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। সত্যিটা ঠিক বেরিয়ে আসবেই।’’ অডিয়ো রেকর্ডিংটি সামনে আসার পর হোয়াইট হাউস থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে ভোট দুর্নীতির অভিযোগ থেকে এখনও পর্যন্ত একচুলও সরেননি ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড টিকা বিক্রির জন্য তৈরি সেরাম, সাধারণের জন্য দাম হতে পারে ১০০০ টাকা
এ দিকে, মঙ্গলবার জর্জিয়ায় ‘রান অফ’ নির্বাচন রয়েছে। দু’রাউন্ডে সেখানে একজন বিজয়ীকে বেছে নেওয়া হবে। তাতেই আমেরিকার সেনেটের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা ঠিক হয়ে যাবে। তার আগে ট্রাম্প ও ব্র্যাডের এই অডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে উত্তাল আমেরিকার রাজনীতি। ট্রাম্প গণতন্ত্রের অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ করছেন ডেমোক্র্যাটরা। কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকেসিও কর্তেজ আবার বিদায়লগ্নের আগেই ট্রাম্পকে ইমপিচ করার দাবি তুলেছেন। তবে কে বা কারা অডিয়ো রেকর্ডিংটি ফাঁস করে দিয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। যদিও জর্জিয়ার আইন অনুযায়ী, ট্রাম্পের অনুমতি না থাকলেও তাঁর সঙ্গে কথোপকথন রেকর্ড করতে পারেন ব্র্যাড
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy