বিশ্ব জুড়ে পালিত হলেও নিজের জন্মভূমিতে ম্রিয়মাণ রইল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ও পার বাংলায় ২১ ফেব্রুয়ারি দেশজোড়া উৎসবই ছিল রীতি। বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এ বার ‘বুড়ি ছোঁয়া’র ঢঙে মিটে গেল একুশে স্মরণ। প্রথা ভাঙলেন মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতীয় শহিদ মিনারে গেলেন না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ বা ছাত্র লীগকে ভাষা শহিদ স্মরণে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। নাসিরনগর থেকে চট্টগ্রাম, নানা অংশ থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তি এবং কোথাও কোথাও অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার খবরও এসেছে।
আরও পড়ুন:
ভাষা দিবসে এত দিন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি একসঙ্গে শহিদ মিনারে ফুল দিতে যেতেন। এ বারও প্রথামাফিক মধ্যরাতেই রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শহিদ মিনারে যান পুষ্পস্তবক নিয়ে। কিন্তু ইউনূসকে তাঁর সঙ্গে দেখা যায়নি। ঢাকা সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি যে হেতু আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত, তাই ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে এ বার তাঁকে যেতে বারণ করা হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ সরকারের তরফে প্রকাশ্যে তেমন কোনও বিবৃতি ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যাতে শহিদ মিনারে না যান, তা নিশ্চিত করতে উপদেষ্টাদের তরফ থেকে তাঁর উপরে চাপ বাড়ানো হয়েছিল বলে ঢাকার একাধিক সূত্রের দাবি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সময় মতোই শহিদ মিনারে যান। তিনি শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে ইউনূস সেখানে পৌঁছন। তবে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধাজ্ঞাপন মসৃণ হয়নি। শহিদ মিনারের কাছে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়।
আরও পড়ুন:
প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি যে ভাবে জনতার ঢল নামে রাস্তায় রাস্তায়, এ বারে বাংলাদেশের প্রায় কোথাও সে ছবি চোখে পড়েনি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট আয়োজনে ভাষা দিবস পালন হয়। কিন্তু তার বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় ভাষা দিবস পালনের ছবি একেবারেই ম্রিয়মাণ থেকেছে। নাসিরনগর উপজেলায় শহিদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে ছাত্র লীগের দুই কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। বিএনপির ছাত্র ও যুব সংগঠনের বিরুদ্ধে ওই ছাত্র লীগ কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অবশ্য ছাত্রদল ও যুবদলের অভিযোগের ভিত্তিতে লীগের এক কর্মীকেই গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ।
চট্টগ্রামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সে অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পর্ব চলছিল। একটি কবিতায় বঙ্গবন্ধুর উল্লেখ থাকায় একটি সংগঠন বিক্ষোভ শুরু করে বলে চট্টগ্রাম সূত্রের খবর। পুলিশ খবর পেয়ে মাঝপথেই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তবে পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, বাহিনী পৌঁছনোর আগেই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।