বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার চলছিল একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, যিনি আবৃত্তি করছিলেন, সেই শিল্পীকেও হেনস্থা করা হয়েছে। আঙুল উঠেছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-র কর্মী-সমর্থকদের দিকে। সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-র কাছে তাঁরা দাবি করে জানান, কবিতায় বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের কথা ছিল। সে কারণেই প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ১৯৯৯ সালে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছিল। এ বার তার ২৫ বছর। সেই উপলক্ষে সব সদস্য দেশকে বাড়তি উৎসাহে দিনটি পালন করতে বলেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। গত অগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে শুক্রবার সকালে একটি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতি বছরের মতো এ বারও চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মেলন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। তাতে যোগ দিয়েছিল ২০টি সংগঠন। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়, এক শিল্পী কবি রবিউল হুসাইনের ‘এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট’ কবিতাটি পাঠ করছিলেন। এই কবিতার কয়েকটি পংক্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু, মাওলানা ভাসানী, একাত্তর, জয় বাংলা’র মতো কিছু শব্দ ছিল। আয়োজকদের দাবি, এর পরেই জাসাসের কর্মীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। যিনি কবিতাপাঠ করছিলেন, তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে পুলিশের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আয়োজকদের অন্যতম মিশফাক রাসেন বলেন, ‘‘ওই শিল্পী এমন কবিতা পড়বেন, আমরা জানতাম না। এই কবিতার কয়েকটি লাইনের জন্য কয়েক জন এসে প্রতিবাদ জানান। তার পরে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।’’
আরও পড়ুন:
বিক্ষোভকারী সংগঠন জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ ‘প্রথম আলো’-কে বলেন, ‘‘ওঁরা শেখ হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছিল। কবিতায় তাঁরা বলছিলেন একাত্তর ভুলে গেছি। মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গেছি। তাই প্রথমে তাঁদের নিষেধ করেছি। পরে প্রতিবাদ জানিয়েছি। যে ছেলেটি কবিতা পড়ছিলেন, তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’’ মামুনুরের দাবি, ছেলেটিকে হেনস্থা করা হয়েছে কি না, তাঁরা দেখেননি। পুলিশ এসে পরে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আবদুল করিম ‘প্রথম আলো’-কে বলেন, ‘‘আমাদের জানানো হয়, একটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলা হয়েছে। পরে আমাদের ভ্রাম্যমাণ দল সেখানে পৌঁছোয়। তত ক্ষণে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সিআরবিতে অনুমতি দিয়েও বসন্ত উৎসব মাঝপথে বন্ধ করে দেন রেল কর্তৃপক্ষ।