Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বন্ধু চাই, বলছে নাৎসি-স্মৃতি 

বছর পনেরোর কিশোরীর সেই ছিল প্রথম ডায়েরি লেখা। বৃদ্ধ দিদার সঙ্গে পোল্যান্ডের এক ছোট্ট শহরে থাকত রেনিয়া স্পিগেল। সালটা ১৯৩৯। ওই বছরেরই শেষে জার্মান সেনার দখলে চলে যায় তাদের শহর। তার পর আর মাত্র তিন বছর ডায়েরি লেখার সুযোগ পেয়েছিল রেনিয়া। ১৮ বছরের জন্মদিনের এক সপ্তাহের মাথায় তাকে গুলি করে মারে নাৎসি বাহিনী। ৭৬ বছর বাদে ইংরেজিতে অনুবাদের পরে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই ডায়েরির কিছু অংশ। 

রেনিয়া স্পিগেল

রেনিয়া স্পিগেল

সংবাদ সংস্থা
ওয়ারশ শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

বছর পনেরোর কিশোরীর সেই ছিল প্রথম ডায়েরি লেখা। বৃদ্ধ দিদার সঙ্গে পোল্যান্ডের এক ছোট্ট শহরে থাকত রেনিয়া স্পিগেল। সালটা ১৯৩৯। ওই বছরেরই শেষে জার্মান সেনার দখলে চলে যায় তাদের শহর। তার পর আর মাত্র তিন বছর ডায়েরি লেখার সুযোগ পেয়েছিল রেনিয়া। ১৮ বছরের জন্মদিনের এক সপ্তাহের মাথায় তাকে গুলি করে মারে নাৎসি বাহিনী। ৭৬ বছর বাদে ইংরেজিতে অনুবাদের পরে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই ডায়েরির কিছু অংশ।

৭০০ পাতার সেই ডায়েরির ছত্রে ছত্রে কবিতা, গান। প্রিয় বন্ধু থেকে প্রেমিক কী নেই! ১৯৩৯ সালের জানুয়ারিতে প্রথম দিনলিপি লেখা শুরু করে রেনিয়া। শেষ হয় ১৯৪২ সালের, ৩০ জুলাই। শেষ লেখা অবশ্য তার প্রেমিক জ়িগমুন্ট সোয়াৎজ়ার। কারণ, তত ক্ষণে সেনার গুলিতে থেমেছে রেনিয়ার জীবন। নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে সোয়াৎজ়ার মা-বাবার সঙ্গে লুকিয়েছিল রেনিয়া। সোয়াৎজ়া তখন অন্য শহরে। নাৎসি সেনারা খুঁজে পেয়ে গুলি করে মারে রেনিয়া ও সোয়াৎজ়ার মা-বাবাকে। সোয়াৎজ়া ফিরে এসে রেনিয়ার ডায়েরিটা পায়। তার পর শেষ পাতায় লেখে— ‘তিনটি গুলিতে আমার প্রিয় তিনটি প্রাণ চলে দেল। আজ তোমার ডায়েরি লেখা শেষ হল, প্রিয় রেনিয়া।’’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যান রেনিয়ার মা রোজ়া ও বোন আরিয়ানা। এর পর আমেরিকায় চলে যান তাঁরা। ১৯৫০ সালে তাঁদের খুঁজে পান সোয়াৎজ়া। রেনিয়ার ডায়েরিটি তিনি তুলে দেন মা-বোনের হাতে। অনেক পরে সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পাঠান আরিয়ানার মেয়ে।

শুরুতেই রেনিয়া লিখেছে, ‘‘কেন আমি এই ডায়েরি লিখছি? কারণ, আমি একজন বন্ধু চাই। যার সঙ্গে প্রতি দিনের কষ্ট, প্রতি দিনের আনন্দের কথা ভাগ করে নিতে পারব। আমি যা অনুভব করব, ও-ও তাই অনুভব করবে। আমি যা বলব, ও তাই বিশ্বাস করবে। কখনও আমার গোপন কথা প্রকাশ করবে না।’’

১৯৪১ সালের ২০ জুন কিশোরী লিখেছে, ‘‘আমি ও সোয়াৎজ়া সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটালাম। ধীরে ধীরে তারা ফুটছিল... আকাশে চাঁদ ভাসছিল...অন্ধকারে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম...।’’ এক সপ্তাহ বাদে তাঁদের ছোট্ট শহর সেমেসেল দখল করেছিল নাৎসিরা। রেনিয়া লিখেছিল কী ভাবে নীল তারা চিহ্ন দেওয়া সাদা ব্যান্ড পরতে হয়েছিল হাতে ।

যুদ্ধ লাগার পরে ওই কিশোরী লিখেছে, কী ভাবে তাদের কোণঠাসা করে ইহুদিদের জন্য তৈরি আলাদা এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালের ১৫ জুলাই সে লেখে, ‘‘সারা বিশ্ব থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। অনুমতিপত্র ছাড়া ওই এলাকা থেকে বেরনোর শাস্তি মৃত্যু।’’

আলাদা শহরে থাকা মাকে সে লিখেছে, ‘‘আমার খুব প্রিয়, কাছের মানুষ আমার মা। আমার জন্য প্রার্থনা করো। সেটাই আমার কাছে আশীর্বাদ। আমি তোমায় খুব ভালবাসি।’’ আরও লিখেছে, ‘‘কঠিন সময় এসেছে। আশা করি আমরা আবার একসঙ্গে থাকতে পারব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Diary Murder Renia Spiegel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE