পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক জীবন থেকে ব্যক্তিগত জীবন, বারেবারেই বিতর্ক বিঁধেছে তাঁকে। মনে করা হচ্ছিল এই বিতর্ক বেশ বিপাকে ফেলবে তাঁকে। কিন্তু বাস্তবে হল ঠিক উল্টো। বিতর্ক কার্যত স্পর্শ করতেই পারল না। উপরন্তু জনতার ভোটে পাকিস্তানের কুর্সি স্পর্শ করার দৌড়ে অন্যদের হটিয়ে এগিয়ে গেলেন তিনিই।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খান। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল বলছে, ১১০ আসনে জয়ী হয়েছে তাঁর দল। তবে সরকার গড়তে ম্যাজিক ফিগার ১৩৭ ছুঁতে অন্য দলের সঙ্গে জোটের প্রয়োজন রয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, নয়া পাকিস্তান জনতাকে উপহার দেওয়ার স্লোগান এবং প্রতিশ্রুতি তাঁকে এই বিপুল জয় এনে দিয়েছে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাইছেন যিনি, সেই ইমরান খানের জীবনের ছত্রে ছত্রে কিন্তু বিতর্কে জর্জরিত। বিতর্কে ঘিয়ের কাজ করেছে সাধারণ নির্বাচনের আগে তাঁরই প্রাক্তন স্ত্রী রেহাম খানের আত্মজীবনী। ব্যক্তিজীবন, যৌনতা, স্ত্রীর উপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, নিয়মিত মাদক সেবন, চোরাচালান, জোর করে গর্ভপাত করানোর মতো মর্মান্তিক কাজ, এমনকি পাকিস্তানকে কট্টরপন্থীদের হাতে তুলে দেওয়া— এমন সব বিস্ফোরক অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষের উপরে এর কোনও প্রভাব পড়েনি।
প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় বিয়ে করেন। তার আগে টেলিভিশনের সঞ্চালক রেহাম খানকে দ্বিতীয়বারের জন্য বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সেই বিয়ে টিকেছিল সাকুল্যে মাস দশেক। বিচ্ছেদের পরই ইমরানের সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে শুরু করেন রেহাম। তাঁর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন।
আরও পড়ুন: হাফিজ সঈদকে ছুড়ে ফেলল পাক জনতা, ঝুলিতে দলের আসন শূন্য
পাক সাধারণ নির্বাচনের আগে আগেই রেহামের আত্মজীবনীর কিছু অংশ ফাঁস হয়ে যায়। তার থেকে জানা যায়, হেন কোনও কাজ নেই যা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইমরান করতে পারেন না। দলের বিভিন্ন নেত্রীর সঙ্গে ইমরানের শারীরিক সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যৌন সুবিধার পরিবর্তে ইমরান দলের নেত্রীদের অনেক সুবিধা দেন। তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর অভিযোগ, উজমা কার্দার নামে এক নেত্রী নিজের যৌনাঙ্গের ছবি পাঠাতেন ‘বিকৃতকাম’ ইমরানকে। তাঁর উপস্থিতিতেই ইমরানের ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করা হত উজমাকে। এঁদের অনেককেই ইমরান জোর করে গর্ভপাতও করান। ইমরানের নজর থেকে পুরুষরাও বাদ যেতেন না। প্রভাব খাটিয়ে এক পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে শারীরিক সংম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। গ্রেস জোনস নামে এক বিখ্যাত গায়কের সঙ্গেও ইমরানের সম্পর্কের কথা সামনে আসে।
আরও পড়ুন: ম্যাজিক ফিগার থেকে সামান্য দূরে পিটিআই, দৌড়ে এগিয়ে ইমরানই
এতো গেল তাঁর বিকৃত যৌনতার কথা। এর বাইরেও ভয়ানক সমস্ত বিতর্ক রয়েছে তাঁকে ঘিরে। তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফের বিরুদ্ধেও কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে তাঁর সঙ্গে কট্টরপন্থীদের যোগ নিয়েও। ইমরান জিতলে দেশকে কট্টরপন্থীদের হাতে তুলে দেবেন, এমন গুরুতর অভিযোগ তোলেন তাঁরই প্রাক্তন স্ত্রী রেহাম। খাইবার-পাখতুনখোওয়া প্রদেশে যেখানে তাঁর দলের শাসন রয়েছে, সেখানে সুশাসনের বদলে অবাধে কাঠ মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চোরাচালান চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হতে চাইছেন তিনি, এরকমও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও মাদক সেবন, কালাজাদুতে তাঁর বিশ্বাস নিয়েও সরব হয়েছিলেন রেহাম।
নির্বাচনের আগে আগে এত সব অভিযোগে তুমুল সমালোচনা শুরু হয় পাকিস্তানে। ইমরান কিন্তু অভিযোগ খণ্ডাতে একটা শব্দেরও প্রয়োগ করেননি। রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করেছিলেন, এতে বেশ বিপাকে পড়তে হবে ইমরানকে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর উল্টোটাই হল। কেন?
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এ বারের নির্বাচনের প্রায় প্রথম থেকে ইমরানের পিছনে রয়েছে পাক সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন সমর্থন। অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পিপিপি এবং পিএমএল-এন’র প্রচারে বাধা সৃষ্টি করেছে সেনাবাহিনী। পাকিস্তানে ক্ষমতার পিছনে সেনাবাহিনীর প্রভাব নতুন কিছু নয়। সেনাবাহিনীকে পাশে না পেলে শাসকদের পক্ষে সে দেশ দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। ইমরান প্রথম থেকেই কৃপা লাভে বঞ্চিত হননি। পাশাপাশি পিপিপির প্রভাব এ বার অনেকটাই কম। পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর কন্যা মরিয়ম দেশে ফিরতেই গ্রেফতার হয়েছেন। ফলে তাঁদের স্বপক্ষে ভোটের হাওয়া টানার কাজটা মোটেই সহজ হয়নি। আর এ সব কিছুই ইমরানের পালে হাওয়া দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy