Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Morocco Earthquake

‘হ্যালো! শুনতে পাচ্ছ?...’ ভূমিকম্পে ‘মৃত’ গ্রাম! ফোনের ওপারে প্রেমিকার মৃত্যুর মুহূর্তের সাক্ষী প্রেমিক

আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমের ছোট পাহাড়ি দেশ মরক্কো। শুক্রবার রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সে দেশের মাটি। সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যাও বহু।

Deadly Morocco earthquake vanishes village

মরক্কোর সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৪৭
Share: Save:

‘হ্যালো, হ্যালো শুনতে পাচ্ছ? হ্যালো!’

শুক্রবার রাতে ফোনের মধ্যে অনেক ডাকাডাকি করেও ফোনে প্রেয়সীর গলা আর শুনতে পাননি মরক্কোর তিখত গ্রামের বাসিন্দা ওমর আইত এমবারেক। শুক্রবার গভীর রাতে যখন মরক্কোর মাটি কেঁপে ওঠে, তখন প্রেমিকার সঙ্গেই ফোনে কথা বলছিলেন বছর পঁচিশের ওই যুবক । হঠাৎ মাটির কম্পন! চিৎকার, রান্নাঘরের বাসন মেঝেতে পড়ে যাওয়ার ঝনঝন শব্দ। কী হচ্ছে দেখতে গিয়ে হুড়োহুড়ির মধ্যে ফোন পড়ে যায়। ফোন তুলে ওমর প্রেমিকার খোঁজ নিতে যখন গেলেন, তত ক্ষণে সব শেষ। ফোনে বার বার কথা বলতে চেয়েও সাড়া পাননি তিনি।

আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমের ছোট পাহাড়ি দেশ মরক্কো। শুক্রবার রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সে দেশের মাটি। স্থানীয় সময় অনুযায়ী রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬.৮। এর পর ছোট ছোট কয়েকটি আফটার শকেও কেঁপেছে মরক্কো। মারাকাশ শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল ভূমিকম্পের উৎসস্থল।

মরক্কোর সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহতের সংখ্যাও দু’হাজারের বেশি বলে জানা যাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। সেই ভূমিকম্পেই আরও অনেকের মতোই স্বজনদের হারিয়েছেন ওমর। বাড়ি চাপা পড়়ে মৃত্যু হয়েছে প্রেমিকা মিনা আইত বিহিরও।

গত ছয় দশকের মধ্যে মরক্কোর মাটিতে হানা দেওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, আটলাস পর্বতমালা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের তিখত গ্রাম রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ওমর এবং মিনার সেই গ্রাম এখন কার্যত শ্মশান। যে দিকেই চোখ যায়, শুধু ধ্বংসস্তূপ আর স্বজনহারাদের কান্না, চিৎকার, হাহাকার। অথচ শুক্রবারের আগে পর্যন্ত সেই গ্রামেই মানুষ জন ঘুরে বেড়াত। রাস্তায় রাস্তায় খেলে বেড়াত শিশুরা। শুক্রবারের রাতের ভূমিকম্পের পর সেই গ্রাম গ্রামের আর একটি বাড়িও আস্ত নেই। ধ্বংসস্তূপে কেউ খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্ত্রী-পুত্র-স্বামীকে, তো কেউ মা-বাবাকে। কেউ প্রেমিকাকে। যেমন ওমর।

ওমর সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে মিনার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সেই নিয়েই দুই পরিবারের ব্যস্ততা তুঙ্গে ছিল। আর তার মধ্যেই এই ঘটনা।

টকটকে লাল চোখে ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে প্রেমিকা মিনার দেহ খুঁজে বার করেছেন তিনি। মিনার দেহ যখন খুঁজে পাওয়া যায়, তখনও তাঁর হাতে ফোন ধরা ছিল। সেই দেহ এখন গ্রামেরই এক অস্থায়ী কবরস্থানে রাখা রয়েছে। পাশাপাশি কম্বল মুড়ি দিয়ে রাখা হয়েছে আরও প্রায় ৭০টি মৃতদেহ।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিখত গ্রামের অন্তত ১০০টি পরিবারের বাস ছিল। কিন্তু সেই গ্রাম এখন ভাঙা ইট, কাঠ, পাথর, ভাঙা বাসন, ছেঁড়া কাপড়, ছেঁড়া জুতোর স্তূপ।

তিখতের বাসিন্দা, বছর ৩০-এর যুবক মহসিন আকসুম সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম শেষ হয়ে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষের সঙ্গে আমাদের সাজানো গোছানো গ্রামটিরও মৃত্যু হয়েছে।’’

বাড়িঘর এবং বাবাকে হারিয়ে বিধ্বস্ত ২৩ বছর বয়সি ছাত্র আবদেল রহমান এডজাল। একটি পাথরে বসে তিনি বলেন, ‘‘তিখতে সে ভাবে ভূমিকম্প কোনও দিন হয়েছে বলেও কারও মনে নেই। গ্রামের মানুষ বাড়ি তৈরির সময়ও এত কিছু চিন্তা করেনি। অথচ শুক্রবার রাতে বাড়িগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙে গিয়েছে।’’

তিনি জানিয়েছেন, রাতে যে সময় কম্পন অনুভূত হয়, অনেকেই তখন ঘুমোচ্ছিলেন। ভূমিকম্পের প্রতিঘাতে সব বাড়ি প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। গত ৬০ বছরে মরক্কো এত বীভৎস প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Morocco Earthquake earthquake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE