লেস্টারে ফাস্টফুডের দোকানের বাইরে লাইন।—ছবি এএফপি।
একটা মোটামুটি বড় মাপের ইলিশ মাছের দাম ন’পাউন্ড। মানে ৮৫০ টাকা। তিনটে কিনলে দাম কমায়। খাওয়াদাওয়ার কষ্ট নেই। সবই পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত অফিসে প্রজেক্টও নেই কোনও। সব মিলিয়ে ভাল থাকারই কথা ছিল। কিন্তু থাকতে পারছি কই!
গর্ভাবস্থার ৬ মাস চলছে। অফিসের কাজে ইংল্যান্ডে এসেছিলাম সেই ফেব্রুয়ারিতে। মা নেই। শ্বশুরমশাইও মারা গিয়েছেন। স্বামী থাকেন বেঙ্গালুরুতে। এই অবস্থায় বিদেশে একা রাখবেন না বলে বাবা ও শাশুড়ি-মা দু’জনেই সঙ্গে এসেছিলেন। মে মাস পর্যন্ত প্রজেক্টের কাজ ছিল। তার পরে ফেরার কথা। এর মধ্যে মার্চ মাসের শেষ থেকেই বিশ্বজুড়ে অতিমারি, লকডাউন, উড়ান বন্ধ! দেশে ফেরা অসম্ভব। অসহায় ভাবে ফেঁসে গিয়েছি বার্মিংহামের কাছে এই ছোট্ট শহরটায়।
বাবা ও শাশুড়ির ভিসা শেষ হতে চলল। তারপরে কী হবে জানি না। স্বামীরও আসার উপায় নেই। এ দিকে, ৮ মাস হয়ে গেলে, অর্থাৎ জুনের পরে আমিও আর বিমানযাত্রা করতে পারব না। অগস্টের মাঝামাঝিই ডেলিভারি ডেট। সব জানিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে মেল করেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকেও সদুত্তর মেলেনি। জানিয়েছে, কিছুই নিশ্চিত নয়। উড়ান কবে চালু হবে কেউ বলতে পারছে না। একটাই যা ভাল কথা, এসেই এখানকার স্থানীয় হাসপাতালে নাম নথিভুক্ত করেছিলাম। তাই সেখানে আমার চেক-আপ ঠিক মতোই হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘আমরা ছাড়া আকাশে তো আর কেউ নেই!’
এখানকার পরিস্থিতি বেশ খারাপ। আমাদের সংস্থারই ১৫ জন আক্রান্ত। দু’জন মারা গিয়েছেন। প্রতিদিন ব্রিটেনে হাজার চারেক নতুন সংক্রমণ হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন পাঁচশোরও বেশি। এই লেস্টারেই শুনেছি প্রায় ৬০০ জন করোনা-আক্রান্ত রয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই দেখছি মানুষ রাস্তায় বেরোচ্ছে। এখানে লোকজন কম বলে পারস্পরিক দূরত্ব হয়তো কিছুটা বজায় থাকছে। কিন্তু দোকান-বাজারে প্রায় কারও মুখেই মাস্ক দেখছি না। এমনকি বিকেলে বাচ্চা নিয়ে সবাই পার্কেও আসছেন! এ দিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা, বাবার ৬৬ বছর বয়স। শাশুড়ির ডায়াবিটিস। তাই সবাই আমরা ‘ভালনারেবল’, মানে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমন অবস্থায় বিদেশে একা বাচ্চা হবে ভাবতেও পারছি না। এ দিকে শুনছি, বিমান চালু হলেও কলকাতায় নামলে বিমানবন্দর থেকে সবাইকে কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠিয়ে দেবে। কেউ বাড়ি যেতে পারবে না। আমার এই পরিস্থিতিতে কী করব জানি না। এই সব চিন্তা নিয়েই দিন কাটছে। এ মধ্যেই সাধভক্ষণ করালেন শাশুড়ি মা আর বাবা। ইলিশ মাছ খেতে খেতে হবু সন্তানের নাম বাছাই করে রাখলাম আমরা।
(লেখক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী)
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy