করোনাভাইরাসে আক্রমণে বেড়েই চলেছে মৃত্যুমিছিল। এএফপি-র তোলা ছবি।
করোনা-গ্রাসে গোটা বিশ্ব। নানান বিধিনিষেধ, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন— সতর্কতার যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের থাবায় এখনও ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভারতীয় সময় শনিবার মধ্যরাতে বিশ্বে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২ লক্ষ পার করল।
গত বছরের শেষের দিকে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে গোটা বিশ্ব দেখতে শুরু করেছে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ-গতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১৮৫টি দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। আমেরিকা থেকে ভারত, রাশিয়া থেকে ব্রাজিল, ইরান থেকে ইটালি— বিশ্বের সব প্রান্তেই ছড়িয়েছে সংক্রমণ। এবং প্রতি মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ এবং শিকার বেড়ে চলেছে দ্রুত গতিতে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১,০১৮। তার ৩৮ দিন পর, ১৯ মার্চ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এর পর ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের সীমা পার করতে এই ভাইরাসের সময় লেগেছিল মাত্র ১৪ দিন। ২ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৫১ হাজার ১১৮। এর পরের ৮ দিনেই তা চলে যায় ১ লক্ষের ঘরে। ১ লক্ষ থেকে মাত্র ৭ দিনে দেড় লক্ষের কোটায় ঢুকে পড়ে ম়ৃত্যু। তার পর ৮ দিন সময় লাগল ২ লক্ষ পেরোতে। অর্থাৎ বিশ্বের করোনায় মৃত্যু ১ হাজার থেকে ১০ হাজার হতে সময় নিয়েছিল ৩৮ দিন। তার পরের ৩৭ দিনে এই ভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গেল ২ লক্ষ। আপাতত প্রতিষেধকহীন এই ভাইরাস এ ভাবেই গতি বাড়িয়ে শিকার করে চলেছে প্রতিনিয়ত।
কোভিড-১৯-এর শিকার সবচেয়ে বেশি আমেরিকায়। জন্স হপকিন্স ইউনিভারসিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষের দিকে এগচ্ছে। মৃতের সংখ্যা ছুঁতে চলেছে ৫৪ হাজার। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক শহরেই মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজারের কাছাকাছি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের দাওয়াই নিয়ে সতর্কবার্তা মার্কিন নিয়ন্ত্রকের
বেহাল অবস্থা ইউরোপের দেশগুলোরও। স্পেন থেকে ইটালি, ফ্রান্স থেকে জার্মানি, ব্রিটেন থেকে বেলজিয়াম— সর্বত্রই থাবা বসিয়েছে করোনা। স্পেনে ২ লক্ষ ২৩ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার মানুষের। ইটালিতে আক্রান্ত প্রায় ২ লাখ, মৃত ২৬ হাজারের উপর। ফ্রান্সে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৭ সংক্রমিতের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজারের বেশি মানুষের। ব্রিটেনে সংক্রমণ দেড় লক্ষের কাছাকাছি। মৃত্যু প্রায় ২১ হাজার।
আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৯৯০ জন সংক্রমিত, মহারাষ্ট্রেই আক্রান্ত বাড়ল ৮১১
ভারতের অবস্থা ইউরোপ-আমেরিকার মতো না হলেও, এখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী। ২৬ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, সকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬ হাজার। মৃত্যু ৮০০-র বেশি। এখনও পর্যন্ত এ দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার পশ্চিমের দেশগুলোর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়েনি ঠিকই। কিন্তু তেমন কিছু ঘটে গেলে, এ দেশের তুলনামূলক দুর্বল চিকিত্সা পরিকাঠামোয় তা বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াবে এতে কোনও সন্দেহ নেই।
যে চিন থেকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এই সংক্রমণ, সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৪ হাজার জনের মধ্যে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৬ জনের। যদিও, আক্রান্ত ও মৃতের পরিসংখ্যান কমিয়ে দেখানোর অভিযোগ উঠেছে চিন সরকারের বিরুদ্ধে।
এশীয় অঞ্চলে চিন ছাড়া করোনার আঁচড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষত ছড়িয়েছে তুরস্ক বা ইরানের মতো দেশে। তুরস্কের আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৮ হাজারের কাছাকাছি। ইরানে প্রায় ৯০ হাজার মানুষের দেহে এই ভাইরাস দেখা দিয়েছে। মৃতের নিরিখে তুরস্কে করোনার বলি হয়েছেন ২,৭০০ জন। অন্য দিকে ইরানে মৃত্যু হয়েছে ৫,৬৫০ জনের।
বিশ্ব জুড়ে এমন ভয়ঙ্কর সময় সাম্প্রতিক অতীতে আসেনি। গত শতকে দ্বিতীয় দশকের শেষে স্প্যানিশ ফ্লু, ষাটের দশকের শেষে এশিয়ান ফ্লুতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল পৃথিবীর দেশে দেশে। তার পর বর্তমান শতকে সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখেছে পৃথিবী। কিন্তু করোনার মতো অবস্থায় এই তিনটের কোনওটাই বিশ্বকে ফেলেনি।
করোনা যে শুধুমাত্র মানুষের দেহেই থাবা বসিয়েছে, তা নয়। এর থাবায় রক্তাক্ত হতে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিও। করোনা-সংক্রমণের মোকাবিলায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে লকডাউন। যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
আরও পড়ুন: কোন দোকান খুলবে? মাঝরাতের ছাড় ঘিরে প্রশ্ন বিস্তর
আইএমএফ-এর মতে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মধ্যে আমেরিকায় জিডিপি বৃদ্ধির হার চলে হতে পারে ঋণাত্মক হারে। ওই সংস্থার মতে, তা হবে -৫.৯ শতাংশ। বিশ্ব জুড়ে ৩ শতাংশ হারে অর্থনীতির বৃদ্ধি নিম্নমুখী হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
আরও পড়ুন: করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রত্যেক নাগরিকই সৈনিক: প্রধানমন্ত্রী
বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, গত ৪০ বছরে সবচেয়ে বেশি দৈন্যদশার দিকে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল। স্বস্তিতে নেই ভারতও। এ দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার করোনার অনেক আগে থেকেই নামতে শুরু করেছিল। এর মধ্যেই করোনা এবং লকডাউনের ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। বিভিন্ন আর্থিক সমীক্ষার হিসেব, চলতি বছরে দেশে বৃদ্ধির হার ঘোরাফেরা করবে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশের মধ্যে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy