ছেলে মমিনুলের ছবি হাতে বাবা ফরিদুল হক। ছবি সৌজন্য ঢাকা ট্রিবিউন।
চারপাশে কানফাটানো আওয়াজ। বিকট শব্দে ক্ষণে ক্ষণে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। সেই সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমে ঘিরে ধরেছিল চারপাশ। ডিপোর ভিতরে তখন আর্তনাদের শব্দে ভারী হয়ে উঠেছিল বাতাস। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ পাশ-ও পাশে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন অনেকে। কেউ নিথর হয়ে পড়ে। চার দিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। হঠাৎই আরও জোরালো একটি বিস্ফোরণ হল। সেই বিস্ফোরণে পা উড়ে গেল সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া মমিনুলের। পকেট থেকে কোনও রকমে ফোনটা বার করে বাবাকে বলেছিলেন, “বাবা কিছু ক্ষণ পর পর এখানে ব্লাস্ট হচ্ছে। আমার পা উড়ে গিয়েছে।” তার পরই ফোনটা কেটে গিয়েছিল।
ফোনের অপর প্রান্তে তখন ছেলের গলা শোনার অপেক্ষায় তখনও ফোন কানে ধরে রেখেছিলেন ফরিদুল হক। কিন্তু না, ফোনের ও পার থেকে ছেলের কণ্ঠস্বর আর শুনতে পেলেন না তিনি। তখনই মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা দলা পাকিয়ে উঠেছিল ফরিদুলের। তিনি জানতে পেরেছিলেন, সীতাকুণ্ডের ডিপোয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার পর পরই ছেলের বাঁচানোর আর্তি ভেসে আসা যেন বজ্রাঘাতের মতো ছিল।
ঢাকা ট্রিবিউন-কে ফরিদুল বলেন, “ফোনেই ছেলের আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। ও চিৎকার করে বলছিল, ‘বাবা এখানে কিছু ক্ষণ পর পর ব্লাস্ট হচ্ছে।’ তার পর আরও এক বার ফোন করে ছেলে। তখন জানায় ওর পা উড়ে গেছে বিস্ফোরণে।” এর পরই আত্মীয়দের বিষয়টি জানিয়ে তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন ফরিদুল। হাসপাতালে যান মমিনুলের কাকা খোরশেদ আলম। ঢাকা ট্রিবিউন-কে তিনি বলেন, “হাসপাতালে গিয়ে ভাতিজার মরদেহ দেখতে পেলাম।” বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের যে ডিপোয় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে এক জন মমিনুল।
অর্থনীতিতে স্নাতক করে সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের কন্টেনার ডিপোতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন মমিনুল। তাঁরা দুই ভাই এক বোন। ভাইবোনদের মধ্যে মমিনুল মেজো। পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরিবারে সচ্ছল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। মমিনুলের মাসতুতো ভাই তায়েব জানিয়েছেন, চাকরি করতে করতেই স্নাতকোত্তর করবেন বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন মমিনুল। কিন্তু তা অধরাই থেকে গেল। ঢাকা ট্রিবিউন-কে তায়েব বলেন, “মমিনুল শনিবার রাত ৮টায় ডিপোতে যায়। রাত ন’টার সময় ফোন করে বলে, ভাই আমাকে বাঁচা। তার পরই হাসপাতালে এসে দেখি ভাই আর বেঁচে নেই।”
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৩২ জনের। আহত হয়েছেন দেড়শোরও বেশি। আহতদের মধ্যে ডিপোর কর্মী ছাড়াও রয়েছেন পুলিশ এবং দমকলের কর্মীরাও। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy